Tuesday, May 22, 2018

গরীবদের স্কুল

এক ছিল এক ধনী লোক। সে সবাইকে সমানভাবে দেখত। নিজে যা খেত, নিজের পরিবার থেকে শুরু করে ভিক্ষুককেও তাই খাওয়াতো। একদিন সে দেখল, একটি গরীব ছেলে তার মাকে বলছে, "মা! আমিও স্কুলে যেতে চাই।"
আর মা কষ্ট পাচ্ছে। পরদিন সে দেখল, একটি গরীব মেয়ে ধনী বাচ্চাদের স্কুলে যেতে দেখে কান্না করছে। লোকটি ভাবল, 'ওই  বাচ্চারাও তো বাচ্চা। ওদের জন্যও তো কিছু করা উচিত। তাদেরও শিক্ষার অধিকার আছে। আমার চোখে ২জন ধরা পরলেও এমন বাচ্চা আছে অনেক। কেউ ওদের কথা না ভাবলেও আমি ভাবব। তাই প্রথমে ওই ২জন বাচ্চাকে ডাকতে হবে।' এই ভেবে সে ওই ২জন বাচ্চাদের কাছে গিয়ে বলল, "তোরা কি লেখাপড়া করতে চাস? স্কুলে যেতে চাস? তবে ওই মাঠে আমার ছোট ঘর যাতে কেউ থাকে না সেখানে তোদের বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে আয়।" গরীব বাচ্চারা এক কথায় রাজি হয়ে গেল। ওই মাঠে লোকটির যে ছোট ঘর ছিল সেটি স্কুল হিসেবে ধরা হল। সব গরীব ছেলেমেয়েরা এসে হাজির হলো ঐ ঘরে। তারপর লোকটি বলল, "আমি এখন জরুরী কিছু কথা বলল। আর এগুলো শোনার পর তোমরা এখানে পড়াশুনা করতে পারবে। তবে আমার বলা নিয়মগুলো মেনে চলবে। ভেবো না যে, খুব কঠিন। তবে শুরু করছি। প্রথম তিন মাস আমি তোমাদের ফ্রি পড়াবো। এরপর মাসের বেতন হবে ৩০ টাকা। আর বেতন দেয়ার উপায়ও বলে দিচ্ছি। তিন মাস তোমাদের এমনভাবে পড়াব, যাতে নিজেরা তো বুঝবেই, অন্যদেরকেও ভালভাবে বুঝাতে পারবে। এরপর তোমরা তোমাদের মা-বাবাকে শেখাবে, আর তাদের বলবে অন্য কোন জায়গায় টিচিং করে টাকা আয় করে আনতে।" একজন বাচ্চা হাত তুলে বলল, "টিচিং মানে কি? এরকম কথা বলছেন কেন? পাঠশালায় তো একদিনও পড়িনি। ইংরেজি শব্দ জানব কিভাবে?" লোকটি বলল, "ঠিক আছে, ঠিক আছে। টিচিং করা মানে শেখানো। তোমাদের মা-বাবা টিচিং করে যে টাকা পাবে, সেই টাকা থেকেই প্রতি মাসে ৩০ টাকা আমাকে দেবে। আর তোমরা তো লেখাপড়া করে টায়ার্ড হয়ে যাবে। সরি, টায়ার্ড নয়, ক্লান্ত। সেজন্য খাবারও দেয়া হবে। তোমাদের নিশ্চয়ই খাবারের অভাব। তবে একটু কষ্ট করে তোমাদের মা-বাবাদেরকে তাদের নিজেদের খাবার যোগাড় করতে হবে। তবে তোমাদের খাবার যোগাড় করতে হবে না। আমি তোমাদের খাবার দেব। খাবারেরও আবার মান আছে। এখানে এখন মানুষ হয়েছে ৩০ জন। ৫ টা ডিম আনা হবে একদিনে। তিনটা আম আনা হবে। আর ৩০টা স্ট্রবেরী আনা হবে। একেক দিন একেক জনের ভাগে একেক খাবার পড়বে। কেউ ঝগড়াঝাটি করবে না, আর এমনও করবে না আমি ভাল খাবার পেয়েছি, তুই পাসনি! আর কারো যদি পাঠশালায় এসে ক্লান্তি ক্লান্তি বা অস্বস্তির ভাব লাগে, তাহলে তাকে ভাল খাবার দেয়া হবে। আর তোমাদের মধ্যে যাদের যাদের খারাপ স্বভাব আছে, তাদের স্বভাব এমনিতেই ভাল হয়ে যাবে। কারণ, প্রথম এক মাস আমি সবার থেকে বেশি স্পেশাল করে তোমাদের পড়াব। সবাই নিয়মগুলো বুঝেছ? কাল থেকে তোমাদের আমি পড়াব। আর পানির ফিল্টারও থাকবে। আর একটি গ্লাস থাকবে। প্রত্যেকে একটু একটু করে ধুয়ে পানি খেয়ে তারপর বাড়ি যাবে। কেউ ডিম পেলে অর্ধেক ডিম পাবে। আমগুলোকে অনেক ভাগ করা হবে, যাতে ১০ জন পায়। আর স্ট্রবেরী পেলে তিনটা তিনটা করে পাবে। সবাই নিয়মগুলো বুঝেছ তো? দুষ্টুমি করলে কিন্তু আর পড়তে দেব না। দেখবে, আস্তে আস্তে এখানে পড়তে পড়তে তোমরা অনেক বড় হয়ে যাবে এবং তোমাদের জীবনও ধনীদের জীবনের মত হয়ে উঠতে পারে। আমি সবাইকে কিন্তু একইভাবে দেখব। কাউকে বেশি পছন্দ, কাউকে কম পছন্দ- এরকম করবো না। কিংবা কারো দিকে একটু বেশি নজর দেব না। কোন ভিক্ষুক এসে যদি একটু খাবার চায়, তাহলে নিজেদের টিফিন থেকে ছয় ভাগের এক ভাগ তাকে দিয়ে দিতে হবে কিন্তু। নইলে কিন্তু হবে না। আর যদি কোন ধনী ব্যক্তি এসে বলে, আজকে আমার ফ্রিজের খাবার শেষ হয়ে গেছে, কিনতে যেতে পারব না, তাহলে তাকেও কিছু দিতে হবে, তবে তাকে বলে দিতে হবে, বেশি অলসতা কখনো করবেন না। অলসতা করলে কোন না কোন দিন খারাপ ফলই হবে। এবার সবাই বাড়ি যাও, আর খুশীর খবরটা মা-বাবাকে জানিয়ে দাও যে, তোমরাও স্কুলে পড়তে পারবে। আর যদি তোমাদের পোশাকের দরকার হয়, তাহলে মাসে ৩০ টাকার সাথে ৫ টাকা যোগ করে ৩৫ টাকা দিতে হবে। একটা ড্রেস দিয়ে দেব। আর তোমার মা-বাবাকে পড়াতে ভুলো না। এরপর নতুন স্কুলটিতে ছাত্র-ছাত্রী বাড়তে থাকল। এরপর গরীব বাচ্চারাও একদিন খুব জ্ঞানী হয়ে উঠল। এভাবেই লোকটি অনেক বছর স্কুল চালিয়ে যাচ্ছিল। এরপর দেখা গেল, তার দেখাদেখি অন্য কিছু মানুষেরাও এরকম স্কুল খুলছে। এরপর সে স্কুলগুলো দেখেও তার কাজ বন্ধ করল না। সেও তার কাজ চালিয়ে গেল, আর অন্য স্কুলগুলোও তাদের কাজ চালিয়ে গেল। আর এখন থেকে গরীব বাচ্চাদেরও পড়াশুনার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলো।

No comments:

Post a Comment