Saturday, April 9, 2016

লোভী কন্যা

এক দেশে বাস করত এক লোভী কন্যা। তার ছিল একটি ধনী বন্ধু। সে তার বন্ধুকে বলল, "বন্ধু! তুমি আমাকে অনেক টাকা দেবে। আমি তোমার বন্ধু না? আমাকে তো টাকা দেয়া দরকার। বন্ধু কি বন্ধুর উপকার করে না?" তখন বন্ধু বলল, "তবে তোমার কি উপকারে টাকা লাগবে।" তখন সেই লোভী কন্যাটি বলল, "ঐ তো টুকটাক সব কাজের জন্যই তো টাকা লাগে। অনেক সব কাজের জন্যই তো টাকা লাগে। দেশে-বিদেশে যেখানেই যাই।" সেই দেশের এক কোণায় বাস করত এক খুবই খারাপ হিজড়া। সবার কাছে যেত আর বলত, তোমার সব টাকাই আমাকে দিয়ে দাও। একটুখানি দিলে তো হতোই না। লোভী কন্যাটির কাছে কিন্তু খুব কম টাকা ছিল। কিন্তু তখন বন্ধু বলল যে, "ঠিক আছে, ক'দিন পরে তোমাকে দেব টাকা। দেব অনেক অনেক টাকা।" তখন লোভী কন্যাটি বলল, "না, বন্ধু। কালই আমাকে সব টাকা দেবে তুমি।" তখন বন্ধুটি বলল, "ঠিক আছে যা বল তুমি, তাই হবে।" তার বন্ধু তাকে তার পরেরদিন খুব সকালবেলা ভোরে উঠেই টাকা নিয়ে রওয়ানা দিল লোভী কন্যাটির বাড়ির দিকে। সকাল বেলা সকাল ১০ টায় সে গিয়ে পৌঁছুলো। গিয়ে দেখল, লোভী কন্যাটি এখনো ঘুমাচ্ছে। সে বলল, "এই বন্ধু! তুমি এখনো ঘুমাচ্ছো কেন? ওঠ, ওঠ, দেখ তোমার জন্য কি এনেছি।" তখন লোভী কন্যাটি উঠে বলল, "দাও দাও দাও দাও দাও, দাও না টাকা।" দেখেছ তার কেমন আচরণ? এভাবে মানুষ মানুষের কাছে তাড়াতাড়ি করে কাড়াকাড়ি করে চেয়ে নেয়? এমনিতেই তো তাকে দিত। লোভী কন্যাটি আবারো বলল, "দাও না কেন? জলদি দাও।" বন্ধু দেখল, "ইস! আমার বন্ধুর এমন আচরণ তো আমি দেখিনি। আমার বন্ধু এমন হয়ে গেল কেন? মানুষ একটা বাসায় আসলে বসতে দেয়, খেতে দেয়। এর তো তাও না। এ যে দেখছি আসার সাথে সাথেই চায়। কেমন আমার বন্ধু?" তখন বন্ধু বলল, "নাও, নাও, নাও। তোমার টাকা।" তখন লোভী কন্যাটি বলল, "হ্যাঁ, হ্যাঁ, বন্ধু, দাও।" লোভী কন্যাটি টাকা নিল। তারপরে বলল যে, "নাও, এবার তুমি চলে যাও। আর কি কাজে থাকবে? যাও, তোমার বাড়ি।" তখন বন্ধু ভাবল যে, "ইস! এত খারাপ আমার বন্ধু?" তারপর কি হলো জান? লোভী কন্যাটি বলল যে, "যাও এ সিড়ির কাছে। তুমি তো বাসায় অনেক এসেছ। তুমি তো চিনবেই, যাও। আমি বসে বসে টাকাগুলো গুনি। বাবা! কত টাকা! চলে যাও তুমি, বসে বসে কী দেখছ? পরে আবার আরেকদিন আসবে।" তখন বন্ধু ভাবল, "ছি ছি ছি ছি! এ আবার কেমন? মানুষ মেহমান আসলে একটু আগিয়ে দেয়, বলে, আবার এসো, বিদায়! কিন্তু এর তো দেখছি কিছুই নেই। এমন করছে কেন?"- বলে বন্ধু মনের দু:খে বাড়ি ফিরে গেল। আর ভাবল, আর কোনদিনও ওর বাড়িতে আমি যাবই না। দেখা হলে আমিও বলব যে, "টাকা দাও আমায়।" আমি তো সবসময়ই ওকে দাওয়াত দিই, ও আসে, ওকে আদর করে ঘরে নিয়ে যাই, বসতে দেই, নাস্তা সাজিয়ে দেই সামনে, বাতাস করি, তাড়াতাড়ি চলে যেতে দেই না। বসে বসে একসাথে কথা বলি। তারপর ফিরে যাওয়ার সময় "বিদায় বন্ধু, আবার আসবে আমার বাড়িতে" এসব বলি। কিন্তু আমার সাথে বন্ধু এমন করল কেন? এবারে ঐ হিজড়ার কথা। সেই হিজড়াটি এল ঐ লোভী কন্যাটির কাছে। বলল যে, "এই! আমায় টাকা দাও। আমি কিন্তু অমন সাধারণ নই। আমি কিন্তু একটুখানি ইচ্ছা করে দিলেই হয় না। তোমার কাছে যা টাকা আছে আমায় সব টাকা দাও। নইলে কিন্তু এমন গালাগালি করব।" তখন লোভী কন্যাটি কী আর করার! সব দিয়ে দিল ঐ লোভী হিজড়াটিকে। তখন সে ভাবতে লাগল, "ইস! আমি যদি আরেকটু পরে এই টাকাগুলো নিতাম, তাহলে আমার টাকাগুলো থেকে যেত। এখন তো আমায় আর কেউ টাকা দেবে না। আর আমি এত বোকা কেন? সবসময় ঘরের বাইরে বসে বাতাস খাই? তাও আবার যা টাকা আছে সব সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়াই কেন? আর বাসায় রেখে আসলে তো লাভ নেই। (হিজড়াটা) বলবে, এত কম কোন মানুষের টাকা হয় না, আরো দাও।" আর ঐদিকে বন্ধু বলল, "তাও আবার আমার কাছে টাকা চায়, ছি! আর ঘরে ঢোকার সাথে সাথে একটু আদর করে বসাবে, তাই না? শুধু টাকা দাও টাকা দাও শুরু করেছে। আর একটু ধৈর্য্যও ধরে না। যা আছে আমার ঘরে সব দিয়ে দিয়েছি। আমার এখন আবার ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে হবে। আমার তো সময়ই থাকে না। ওর তবু অনেক সময় থাকে। কত কাজ আমার! একটি মহিলা মানুষ আমার পরিবারে। তাও আবার বুড়ি। আর অন্য সব ছেলে মানুষ। তারাও বুড়ো। আর আমার পরিবারে তো পাঁচজন আছে। একজন তো ঐ বুড়ি, মানে আমার মা, আরেকজন আমার বাবা, আর তার ভাই থাকে, আর বাকি থাকে কিছু বাচ্চা, মানে আমার ভাতিজা-ভাতিজী। তাদের সবার জন্য রান্না করতে হয়ও আমার। ছেলে মানুষ কি রান্না করে? আবার ঘরের বউমারা যেমন কাজ করে, আমাকে সেই সব কাজগুলো করতে হয়। বাচ্চারা সারাদিন খেলে, একটু সাহায্য করবে তা না। আর আমার ঐ বন্ধুর অবস্থা দেখে আমার একটুও ভাল লাগে না। খুবই অশান্তি লাগে। উহ! আর ভাল্লাগে না। ওর সাথে দেখাই করব না। দেখা করতে গেলেই কিছু না কিছু দায়িত্ব দিয়ে দেয়।" আর ঐদিকে লোভী কন্যাটি এখন থেকে গরীব হয়ে পড়ল।

পরের বার: 
কিছুক্ষণ আগে খারাপ কর্ম করলে খারাপ ফল হতো। আর এখন ভালো কর্ম করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। ভালো মানুষ তো বন্ধুটি। এবার বন্ধুর কথা বেশি থাকবে। পাঁচ বছর ধরে সেই বন্ধুটি তার পরিবারের জন্য অনেক রান্না করেছে। অনেক যত্ন করেছে। বাচ্চারা তো খেতে চায় না। বাচ্চাদের মন ভুলিয়ে রেখে খাইয়েছে। আর বাচ্চারা চেয়ার-টেবিলে শান্তশিস্টভাবে খায় না। তাদেরকে বলেছে, "যদি টেবিলে বস, তাহলে তোমাদেরকে আরো অনেক কিছু দেব।" আর তখন তার সেই কম টাকা দিয়েই বাচ্চাদের জন্য জিনিস কিনেছে। বাচ্চারাও মজা করত যে, মামার হাতে খাবার খাওয়া মজা। সে তো অনেক কষ্ট করেছে। একদিন সে বাজারে গেল। বাড়ি তালা দিয়ে। তার ভাগ্নিরা সব স্কুলে। আর বুড়ো-বুড়িরা আবার কি যেন কাজে গেছে। এখন সবাই বাড়ি ফিরে দেখল, তাদের বাড়িটি নেই। সবাই বলল, "আমাদের বাড়িটি কোথায় গেল?" সবাই মিলে অন্য দিকে খুঁজতে গেল। সবাই এসে দেখল যে, ওমা! একি? তাদের বাড়িটি নেই, তাদের ঐ আগের পুরানো বাড়িটা নেই আর। সেই বাড়িটি রেখে অন্য একটি দোতলা সুন্দর বাড়ি, প্রত্যেকটা রুমের সাথে বারান্দা, কী সুন্দর ছাদ, খোলামেলা জায়গা। তার মানে হচ্ছে, ভাল কাজ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়, খারাপ কাজ করলে খারাপ ফল পাওয়া যায়। শিক্ষাটি পড়ে দেখ।

শিক্ষা: যেমন কর্ম তেমনি ফল।

No comments:

Post a Comment