Thursday, May 28, 2015

সোনার ঘর

এক ছিল এক রাজা। রাজার বাড়ির দু'পাশে দুটি ঘর। একটি হল তাঁবু। আরেকটি ছিল সোনার ঘর। মন্ত্রী ছিল খুব লোভী। চাইত মহারাজকে বেশি ভালটা দিতে। সে চাইত যে, তাঁবুটাকে সরিয়ে সোনাটাকেই শুধু পাশে রাখবে। কিন্তু না। কিভাবে হল জান? একদিন রাজা কাপড় নিয়ে রানীদেরকে বাচ্চাকে পড়ানোর জন্য দিতে যাচ্ছিল। এমন সময় মন্ত্রী এসে বলল, "রাজা মশাই! কাপড়? আপনিই আজকে আবার প্রতিদিনের মত বাচ্চার জন্য আপনিই কাপড় নিয়ে যাচ্ছেন? রানীদের কাছে দেবেন কি করে? রানী তো বাগানের মধ্যে গাছের ফল খাওয়ার জন্য নিয়ে আসতে গেছে। আর বাচ্চা তো বাগানের মধ্যে প্রজাপতি দেখে খেলতে গেছে। কাপড় না পরে কততো বরফ পড়ছিল। সোয়েটার গা দিতে হয়। কিন্তু সে তার গেঞ্জি পরেই গিয়েছিল।" মন্ত্রীর কথা শুনে তো রাজা ভয়ে ঘাবড়িয়ে গেলেন। বললেন, "মন্ত্রী, এ কি বলছ তুমি! তুই বলছিস টা কি? আমার মেয়ে গেঞ্জি পরে বাহিরে গেছে? সকালেই তো বরফ পড়েছিল। বরফ গলে গিয়েছিল। তাতে সেটা অনেক ঠাণ্ডা পানি ছিল। তার উপর দিয়ে খালি পায়ে গেলে তো সর্বনাশ! শত্রুরা বাচ্চার চিতকার শুনেই তো ভাববে যে, ও একা। ভেবেই তো ওরা ওকে নিয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি ওকে উদ্ধার করে নিয়ে এসো। দেখ, বাগানের কোথায় গেছে। আরেকটা সোয়েটার নিয়ে যেও। পেলে ওকে পরিয়ে দিও।" বাচ্চাটা ভারি বুদ্ধিমান ছিল। তাই সে স্যান্ডেল পরেই গিয়েছিল। রাজপ্রাসাদে সবাই রাজার কথা শুনে আর মন্ত্রীর কথা শুনে জলদি করে সকলে মিলে গেল। আর ওদিকে রাজা তো একা হয়ে পড়ছিলেন। আর পিছন দিক দিয়ে আসছিল শত্রুরা। রাজামশাই নিজে মরতে ভয় পেত না। কিন্তু তার বাচ্চাকে নিয়েই তার মহাচিন্তা। এমন সময় শত্রুদের কথা আগে যুদ্ধ হয়েছিল যে, সেই কথা তার মনে হল। তখন যে সে আমার দু' রাণী ছিল, এক রাণীকে হত্যা করেছিল। তা থেকেই আমার এক রাণী। এখন তার মনে বড় ভয় হল। আর শত্রুরা আসছে পায়ের শব্দ শুনেই রাজামশাই ভয়ে চিন্তায় পড়ল। এখনই যদি বাচ্চা এখানে এসে পড়ে কাজের লোকদের সাথে, তবে তো তারা আমাকে পরে নিয়ে আগে আমার বাচ্চাটাকেই হত্যা করে ফেলবে। এখন কি করি! এই ভেবে তো রাজা বড় চিন্তায় পড়ে আছে। এবার শত্রুদেরকে ভয় দেখানোর জন্য রাজা খেলনা সাপ জানালার বাইরে এরকম একটু বের করে সাপের মত ছি ছি করে আওয়াজ করল, আর শত্রুরা তো সাপের ভয়ে পালিয়ে গেল। তারপরই এল তার ছোট্ট বাচ্চা। বাচ্চাটাকে পেয়ে তো খুশী হলেন এবং কোলে নিলেন। কিন্তু বাচ্চাটা খুশী ছিল না। বাচ্চাটা বলছিল, "মা, মা, মা!" তার মা তো ছিল বাগানের মধ্যে গাছের ফল ছিঁড়তে। ফল ছিড়ে ফিরে আসছে না দেখে সে কান্না শুরু করে দিল। রাজ্যের সবাই বলে, "তোমার মা এসে পড়বেই। তোমার মা তো এসে পড়বে। তুমি তো রাজকন্যা। রাজকন্যারা অমনভাবে কাঁদলে কি হয়? আধা বয়সের বাচ্চারা না কাদে, তোমার তো আধা বছর পার হয়েছে, দেড় বছর তো হয়েছে। এক হলে না এক কথা, তাও আবার দেড় বছর হয়ে গেছে। তুমি এমন কাঁদলে হবে?" আর ওগুলো বলতে বলতেই মা ফলের ঝুড়িতে ফল নিয়ে এসে পড়ল। রাজার কোল থেকে বাচ্চা নেমে এসে মায়ের কোলে এসে পড়ল। আর মাও খুশী হয়ে বলল, "এত ভালবাসা লাগবে না। শেষে এত ভালবাসা দিতে দিতে দেখবি নিজেই বিপদে পড়ে গিয়েছিস। এই দেখ, কত রকমের ফল এনেছি। এনেছি আম, আর এনেছি আপেল, আর কমলা। তোর তো একদম পছন্দের ফল এগুলো। খাবি না? তাড়াতাড়ি চল বেসিনে হাত ধুতে।" বাচ্চাকে নিয়ে হাত ধুইয়ে নিয়ে এল, ছোলা ছিলিয়ে দিল মা। বাচ্চাটি খেতে লাগল। এই ঘটনা নিয়ে নিয়েই মন্ত্রীর ভাবনা গেল সোনার ঘর। সেই সোনার ঘরে থাকার লোভ আর মেটাতে পারছিল না। সেই ঘরটা ছিল গরীবদের জন্য, তবুও সে ভোর বেলা কোথায় গেল জান? সেই সোনার ঘরে। কিছুক্ষণ থাকার পর তার সাধ মিটছিল না। সাধ মেটাতে গিয়ে মন্ত্রী একটা খবর দেওয়ার কথা ছিল, সরাই খানায় খাবার দেওয়া এবং সেখানে লোক আসবে- এই লোক আসার কথাটি রাজাকে দেয়া আর খাবার দিতে হবে এই কথাটা দেয়া; কিন্তু তার সাধ মেটাতে গিয়ে সেগুলো আর বলা হলো না, লোক এসে বসে থাকল। কিন্তু কোন কোন খাবার পাচ্ছিল না খাওয়ার জন্য। প্রহরীরা খবর দিতে এল, তবু মন্ত্রী এল না। একদিন এক গরীব লোক এল, তাকে ঐ সোনার ঘরে থাকতে দিল। কিন্তু সে গিয়ে দেখে মন্ত্রী মশাই বসে আছে। "মন্ত্রী মশাই! আপনি এখানে কি করছেন?" "আমি মানে, আমি মানে, আমি.. এখানে একটু রাজা মশাই বলেছিল যে, পরিষ্কার করে রাখতে, এখানে লোক আসছে, তাই এখানে বসে একটু পরিস্কার করছিলাম।" "ঠিক আছে, আর দরকার নেই, আমাকে থাকতে দিয়েছি। এখন আমি ঢুকি?" "উঠাবে না কেন, ঢোক"- এই বলে সে আবার রাজপ্রাসাদে গেল। রাজা মন্ত্রীকে দেখে বলল, "মন্ত্রী! তুমি এতক্ষণ কোথায় ছিলে?" মন্ত্রী বলে, "এই মানে, আমি একটু ছোট বাচ্চার কাপড় পরিস্কার করে এলাম।" তখন রাজা বলে, "এখন দেখি তো, কেমন পরিস্কার করেছ?" তখন বলে, "আমি নিজেই ভুলে গিয়েছি, কোথায় রেখেছি। একটু খুঁজে আনি। খুঁজে আনতে একটু সময় লাগবে।"- এই বলে সে কাপড় ধুতে গেল। ধরা না খাওয়ার জন্য এমন করল। রাজা মশাই ভাল ছিলেন। মন্ত্রী যদি বলত যে, সোনার ঘরে একটু থাকি, তাহলে রাজা মশাই থাকতে দিত। কিন্তু সেই লোভ গোপনে গোপনে করছিল। মন্ত্রী এবার কাপড় খোঁজার নাম দিয়ে বাসায় গেল এবং ধুয়ে টুয়ে নিয়ে এল। সোনার ঘরে আবার গেল। তারপর গরীব লোকটি গোসলের জন্য পুকুরের পাড়ে গেল। আর অমনি সোনার ঘরে ঢুকে পড়ল। তখন আবার লোকটি এসে বলে, "আবার কি করছ মন্ত্রী?" বলে, "রাজা আমায় প্রতিদিনের কাজ/দায়িত্ব দিয়েছে এই ঘর পরিস্কার করার। আপনি চলে গেলে আর ঘর পরিস্কার করব না।" বলে, "ঠিক আছে, এখন যাও।"- বলে সে সোনার ঘরে ঢুকল। আর ওদিকে তাঁবুর কথা তো বলাই হচ্ছে না। ওদিকে তাঁবুতে এক ধনী জ্ঞানী মানুষ রাজাকে দাওয়াত দিতে এসেছিল। বলে, "কবে দাওয়াত দিবে?" বলে, "আর বইলেন না, এই তো। ৫ দিন পরে। এই বিয়ের কার্ডটা দেখুন। বুঝতে পারবেন সব। নাখালপাড়ার কুলফি গার্ডেন সেন্টারেই বিয়েটা হচ্ছে। আর সেই বিয়েতেই আপনার দাওয়াত।" এখন বলে, "ঠিক আছে, তবে তুমি তাঁবুতে থাক।" আর মন্ত্রী এমন করে করেই সোনার ঘরে থাকছে। কিন্তু সাধ মিটছিল না। কারণ, খুব কম সময়।

No comments:

Post a Comment