Saturday, December 9, 2017

গরীব লোক

এক ছিল এক গরীব লোক। তার প্রথম থেকে এক পয়সাও ছিল না, টাকা তো দূরের কথা। সে এখন কী করবে? কিন্তু সে বুদ্ধিতে খুব পাকা ছিল। সে শহরে এল। সে দেখল, একটা দোকানে অনেক কাঠাল। সে জায়গায় খুব কম দামেই বিক্রি হতো। কিন্তু ঐ কাঠাল কিনতে যতটুকু টাকা লাগবে, সেটুকুই তো তার ছিল না। সে দেখল, কিছু দোকানে খুব নোংরা জমেছে। সে একটা দোকানের দোকানদারকে বলল, "ভাই! তোমার দোকানটা খুব নোংরা হয়ে গেছে। আমি যদি পরিস্কার করে দেই, তাহলে কি কিছু টাকা পাওয়া যাবে?" দোকানদার বলল, "ঠিক আছে। দেখি, কেমন পরিস্কার করতে পার। যত গ্রাম ময়লা বের হবে, ততটা ৫ টাকার নোট দেব। রাজি তো? আর যদি একটাও ময়লা না বের হয়, তাহলে এখনই আমাকে ১০ টাকা দেবে।" তখন গরীব লোকটি ভাবল, কী রে! আমি কি এত বোকা নাকি? ময়লা না দেখে কি আর এসব প্রশ্ন জিজ্ঞেস করি? সে বলে দিল, "আমি রাজি। আমি এক্ষণি পরিস্কার করে দিচ্ছি।" পরিস্কার করার পর এক কেজি ময়লা বের হলো। দোকানদার তো হা হয়ে গেল। সে ভাবল, সকাল বেলা ৫ হাজার টাকা দিয়ে দিতে হবে এই গরীব লোকটাকে? হায়রে কপাল! কেন যে এমন করে বলতে গেলাম! আগে দেখে নেয়া উচিত ছিল, কতটা ময়লা জমেছে। ধুত, এখন টাকাগুলো ঢালতে হচ্ছে। সে ৫ হাজার টাকা মুখ গোমরা করে গরীব লোকটাকে দিয়ে দিল। গরীব লোকটা ১০০ টাকা দিয়ে একটা বড় কাঠাল কিনল। ধনী লোক হলে এক বেলায় শেষ করে দিত। কিন্তু সে ঐ একটা কাঠাল এক সপ্তাহ ধরে খেয়ে ফেলল। আর বিচিগুলো জমিয়ে রাখতে লাগল। তারপর সে ঐ টাকা থেকে কিছু টাকা সঙ্গে নিয়ে এল। সে একটা খালি মাঠ দেখতে পেল। সে একজনকে জিজ্ঞেস করল, "এই মাঠটা কার, ভাই?" লোকটা বলল, "কি যে বল না, এই মাঠটা তো আমারই। বিক্রি হবে। ১,০০০ টাকা পড়বে। নেবে নাকি?'' সেই লোকটি আসলে তর্ক করে বলেছিল।  ভেবেছিল, অত টাকা দেয়া তো দূরের কথা, নাম শুনেই পালিয়ে যাবে। কিন্তু গরীব লোকটি এক কথায় 'হ্যাঁ' বলে দিল। সে এক হাজার টাকা সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দিল, আর সঙ্গে সঙ্গে যার মাঠ সেই নামওয়ালা সাইনবোর্ডটি তুলে ফেলল। আর নিজের নাম লেখা একটি সাইনবোর্ড গড়ে তুলে ওখানে লাগিয়ে দিল। একটু পর সে ঐ বীচিগুলো নিয়ে এল। সে একজনের কাছ থেকে একটা কুঠার কিনে ফেলল। পাশেই একটি কল ছিল। সেটা যে কেউ ব্যবহার করতে পারে। সে একটি পানির পটও কিনেছিল। এরপর সে কুঠার দিয়ে মাটি খুঁড়ে তাতে কাঁঠালের বীজগুলো পুতে দিল। আর ঐ পানির পটে পানি ভরে রোজ ওখানে পানি দিতে লাগল। একটা কাঠালের অনেক বীচি। সে তিনটি গাছ পুতেছিল। গাছগুলো বড় হতে না হতেই দেখা গেল, কাঠাল ফলতে শুরু করেছে। এ কয়দিন সে তার রয়ে যাওয়া টাকাগুলো দিয়েই খাওয়া-দাওয়া ও সবকিছু সেরেছে। তার টাকাও প্রায় শেষ। কিন্তু গাছে কাঠাল এখনো একটুও পাকেনি। এই কাঠাল কেউ কিনবেও না। তাই সে আবার আরেকটা দোকানে গিয়ে ময়লা পরিস্কার করে কিছু টাকা নিয়ে এল। তা দিয়ে আরো দুই সপ্তাহ চালালো। আস্তে আস্তে দেখা গেল, কাঠাল পেকে যাচ্ছে। সে একটা ঝুড়ি নিয়ে তাতে অনেক কাঠাল পেড়ে ভরে ফেলল। তারপর সেই ঝুড়িটা মাথায় নিয়ে বাজারে গেল। সে বাজারে এমন একটা জায়গায় গেল, যেখানে মানুষ অনেক বেশি হাঁটাচলা করে। একদিনের মধ্যে প্রায় ১৫টা কাঠাল বিক্রি হল। সে একেকটার দাম ১০০ টাকা করে রাখল। ছোটগুলো ৭০ টাকা। সে আয় করল একদিনেই ১৪০০ টাকা। এমন করেই তার দিন চলতে লাগল এবং সে একটি বাড়িও কিনে ফেলল আর ভাল পোশাক-আশাকসহ বিয়েও করে ফেলল। এবং এভাবেই তাদের সুখে-শান্তিতে দিন কাটতে লাগল।

No comments:

Post a Comment