Monday, April 20, 2015

এসো হে বৈশাখ

এক বাড়িতে একটি ছোট্ট মেয়ে বাস করত। সেই মেয়ের স্কুলে যেতে মোটেই পছন্দ না। সে মেয়েটির নাম হলো তারা। একদিন তারার মা তাকে জিজ্ঞেস করল, "আচ্ছা,তুই পড়ালেখায় মন দিস না কেন?" ''না মা, কি আর বলব? আমার যে এই কাজ করতে পছন্দ না।" "না, তোকে পড়তে হবেই। পড়তে হবেই হবে। এখন চল। পড়তে যাবি।" বাচ্চা বলল, "না, আমি পড়ব না। পারলে একটি অক্ষর পড়েই আমি যাচ্ছি। তবু আমি শব্দ বাক্য পড়ব না। শব্দ ও বাক্য বেশি কঠিন। পারলে একটি অক্ষরই আমি পড়ে দেব। এসো, অক্ষর দিয়ে দাও আমাকে।" "এসো, এগুলো পড়ে যাও। নাহলে এ থেকে জেড পর্যন্ত তোমার শেখা হয়নি। তুমি শুধু পড়ায় ফাকি মেরে চলে যাও। সেজন্য এখন তোমাকে পড়তে হবে।" তখন সেই মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল, "না, হবে না। আমাকে দুটি অক্ষর পড়তে পারব। তারপর আমি আবার যাব খেলতে।"- এ বলে মেয়েটি কাঁদতে থাকল। কাঁদতে কাঁদতে এমন সময় সেই মেয়ের একটি বুদ্ধি এল। ভাবল, মা তো সারাদিন বোকা হয়ে থাকছে। আমি ফাকি মারছি পড়ায়, এটা বুঝতে পারে না মা। তাহলে এ বুদ্ধিটাই আমি কাজে লাগাই। "মা, শোন। আমার বন্ধু অপেক্ষা করছে। আমি তাকে বলে আসি যে, আমি এখন পড়তে যাই।"-বলে সে ফাকি মেরে আবার খেলায় চলে গেল। বলল, "বন্ধু, চামেলী! শোন। আজ আমি কিচ্ছু পড়িনি। এখন তবে খেলি। পরে আমি পড়ে নেব সব। এসো, আমরা খেলি। এখন তাহলে খেলতে চলি চল।"- বলে সে বন্ধুর সাথে খেলতে গেল। আর মা তো হয়রান হয়ে গেল ঘরের ভিতর খুঁজতে খুজতে। সে ভেবেছে, বলে এসে পড়েছে নিশ্চয়ই। সে নিশ্চয়ই ঘরের ভিতরে লুকিয়ে আছে। আসলে তো সেই মেয়ে গেল মাঠের মধ্যে। মা বোকার মত ঘরের ভিতরে খুজতে থাকে আর চিতকার করতে থাকে।" সেই চিতকার তারার কানে যায়। সেই তারা বলে ওঠে, "কি মা! আমি তো আগেই এ বি সি ডির বই নিয়ে বারান্দায় পড়তে বসেছি।" সেই মেয়ের কথা বাইরে থেকে মায়ের কানে গেল। মা ভাবল, "ইস, কি লক্ষী! সুন্দর পড়িস তো। আমি তো বারান্দায় খুঁজিনি। সন্ধ্যার পর পড়া থেকে উঠে আসবি।" সেই তারা আবার ভাবল, "যদি মা দেখতে চলে আসে। অতএব আমি আমাদের বিল্ডিংয়ের বারান্দার জানালার কাছে গিয়ে ফিসফিস করার মতো করে কিছু একটা এ বি সি এ শব্দগুলো বলে ফেলি। তাহলে মা ভাববে, বারান্দার কাছে বসে ও পড়ছে, আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। সেই ভেবে মেয়েটি বি সি মুখে আনল। তার আগে তাদের বিল্ডিংয়ের বারান্দার কাছে ছিল এবিসির শব্দ। মা বুঝতে পারল, সে পড়ছে। তার আগে মা বারান্দার কাছেই ছিল। সে ভাবতে লাগল, ইস! আমার মেয়েটা কতই যে লক্ষ্মী। বলে সে বলল, "আজ তোকে আমি একটা মজার জিনিস খাওয়াব। খাবারটার নাম লাচ্ছি। তুই কোনদিন খাসনি। খেতে খুব মজা আছে। পায়েসের মত। তোকে আমি তা খেতে দেব। তুই পড়ে আসবি। পুরোটা পড়তে হবে না। অর্ধেক পড়েই চলে আসবি।"-এটি বলল মা। বাচ্চাতো হাসতে লাগল। অনেক আস্তে বলতে লাগল, যাতে মায়ের কানে না যায়। "মা, তুমি কি বোকা? আমি কি আর পড়ছি, যে বলছ, পুরোটুকু পড়তে হবে না? হা-হা-হা! কী মজা! কি যে তুমি বোকা!"-চুপি চুপি বলতে লাগল মনে মনে। একবার মনে মনে বলছিল, আরেকবার জোরে বলছিল, কিন্তু যেন মায়ের কানে না যায় সেজন্য। বন্ধুরা বুঝে ফেলল, তোমাকে মা পড়তে দিয়েছিল, তাই না? এ শুনে তো তারা বলতে থাকে, "কি বন্ধু! এসো খেলি। মা যা বলুক বলবে। আমরাও কান পেতে শুনব। যেগুলো শোনার দরকার নেই, শুনলেও মনে রাখব না। আর মনে রেখো বন্ধুরা। বেশি মজার খেলা খেলতে হবে কিন্তু। যে আমার মাথায় এত খাসা বুদ্ধি এসেছে।" এখন রূপা বলল, "দেখ তো চামেলী! আমার তারা বন্ধুটা কি বলছে? আস, আমরা মিলে তারার জন্য স্পেশাল একটা খেলা বানাই। চল।"- এমন করে তারা ভেবে টেবে একটি গামলা তার মায়ের কাছ থেকে চুরি করে নিয়ে এল। আর চুপ চুপ করে কল থেকে পানি ভরে আনল। আর কিছু কাগজ। কাগজ দিয়ে সেই পাঁচ-ছয়জনই নৌকা বানালো। সেই গামলায় ভাসিয়ে দিল। বলতে লাগল, "কি বন্ধু! আর তুমিও একটা কাগজের নৌকা বানিয়ে ভাসাও তো দেখি। তারপর দেখি, কারটা ডোবে।" সে তো তারা খুশীতে বলল, "কি গো! এ তো আমার ঐ লুকোচুরি খেলার থেকেও অনেক মূল্যবান খেলা। এই খেলা যে আমার কত ভাল লাগল। দাও দাও দাও, আরেকটি কাগজ দাও।" বলে কাগজ দিয়ে নৌকা বানিয়ে ভাসালো। প্রথমে ডুবল সোনালীরটা, তারপরে ডুবল রুপোরটা, তারপরে চামেলীরটা ডুবল। তারপর ডুবল রুপালীরটা। তারপরে কারোটা ডুবল না। তারারটা ডুবেনি, সবারটা ডুবে গিয়েছে। অতএব, তারা জিতে গেল। তারা বলল, "বিকেল হয়ে আসছে। আর একটি বেলাই আছে। তাড়াতাড়ি খেলা শেষ করি চল।" বলে আবার কাগজ দিয়ে নৌকা বানালো, কিন্তু তারারটা ডোবেনি। তাই তার সেই আগেরটা দিয়েই আবার নতুন খেলা খেলল। প্রথমে ডুবল রূপালীরটা, তারপর ডুবল রুপারটা, তারপর ডুবল চামেলীরটা। তারপর ডুবল সোনালীরটা। এবারও জিতল সেই তারা। তারা আবার সেই আগের নৌকাটা দিয়েই আবার খেলা খেলল। দেখি তো আমি দ্বিতীয়  চান্সেও পেরে গিয়েছি। হুররে হুররে, কি মজা! আর অন্যরা তো মুখটা কেমন নোংরা বানিয়ে বসে থাকল। কি মেয়ে! কি জিতে যাচ্ছিস কেন? আমি তোকে চকলেট দেব না কিন্তু। বলল, "না গো। আমার কাছে আমি একটা পেপার বিক্রি করে দিয়েছিলাম চুপ চুপ করে। বিক্রি করেছিলাম নাতো, অন্য কোন লোককে দিয়ে দশ টাকা নিয়েছিলাম। সেই দশ টাকা দিয়ে আমি নিজেই চুপ চুপ করে নিয়ে আসব চকলেট। তবু আমি এই খেলায় জিতব।" বলে তারা তো হাসতে থাকল। আর অন্যরা সবাই মুখ নোংরা করে বসে থাকল। এবার দেখি আগের নৌকাটাই তারা থাকে কিনা। এইবারও সেই তারাই জিতল। তখন চামেলী বলে উঠল, "এই, তোদের মুখ নোংরা করে বসে থাকার কি দরকার আছে? আমরা এখন তারার উপরই জয় করি। পরে তারা আমাদের বেশি করে ভালবাসবে। এসো।" বলে তারাও নাচতে লাগল, লাফাতে লাগল। এই করতে করতে সন্ধ্যা গড়িয়ে এল। তখন সে বারান্দার জানালা দিয়ে ঢুকে পড়ল। দরজা দিয়ে ঢুকে দরজার সামনে তো ভো ভো করে মানুষ ছুটাছুটি করে। সেইজন্য জানালা দিয়ে ঢুকে পড়ল তারা। এরপর চুপচুপ করে এবিসিডির বইটা নিয়ে এবিসিডির পৃষ্ঠা বের করে না পড়ে বসে উঠল। যেই না মা আসল অমনি বলে উঠল এবিসি। তারপরই মা টের পেল, সে পড়ছে। মা বলল, মা, আয়। তোর জন্য লাচ্ছি বানিয়েছি, নে খাবি। তারা বলল, "এসো মা, কেমন লাচ্ছি বানিয়েছ দেখি।" তখন সেটি খেয়ে তারা পহেলা বৈশাখে ছুটল। মাও তাদের যেতে দিল। বন্ধুদের নিয়ে সে রওনা দিল। একসময় সে একটি পতাকা কিনে বলল, এটা কার? এটা কে নেবে? সবাই বলা শুরু করল, আমি, আমি, আমি। তখন চামেলী বলল, "আমার কাছে কাগজ আছে, সাদা কাগজ। আমার কাছে পেন্সিলও আছে। আমি সবার নামই লিখব, তারপর কয়েকটা টুকরা করব, এক টুকরায় এক নাম, আরেক টুকরায় আরেক নাম। আমার দুই হাতের উপর সেটা উল্টিয়ে থাকবে। তারপর তারা তুমি সেটা উঠিয়ে নিবে। যেকোন একটা। যার নাম উঠবে, সেই পতাকা নেবে। এবার তাহলে পেন্সিল কাগজ বের করি, তাইতো?" "হ্যাঁ, তুমি বের কর।" বলল সবাই। এখন নাম লিখল। তারা হাত তুলল। বলল, "আমি লটারী করব।" সেই চামেলী বলল, "ঠিক আছে, তুমি সবথেকে ছোট। তাই তুমি লটারীটা কর।" "আচ্ছা, আমি করছি লটারী। দাও দেখি।" তারা তার নিজের নামই উঠিয়ে ফেলল। তারা নিজেরটা নিজের কাছেই রাখল। বলল, "এ, কি মজা, কি মজা! মা আমাকে অনেক টাকা দিয়েছে জিনিস কেনার জন্য। সেই টাকাটা আমার কাজেই লেগে গেল, কি মজা, কি মজা। তাই তাই তাই।" বন্ধুরা আবার মুখ নোংরা করে বসল। এক বেটা খেলনা বিক্রি করছিল। এমন খেলনা, একটা কাগজ বা কার্ডের মতো। সেখানে অনেকগুলো ছবি আঁকবে। যেটাতে আঙ্গুল দেবে, তারই অনেকগুলো বিপরীত ছবি এসে পড়বে। এমন সেই খেলনাগুলো। চামেলী বলল, "এবার আমি আমার কাগজ হতে সেই পুরান কাগজেই আবার লটারীটা করি।" বলে সেই আবার রাখল কাগজ। এবার রূপালী লটারী করবে বলে এল। এবার নাম উঠল রূপার। রূপা বলে, "ইয়ে। তারার টাকাটা আবার কাজে লেগে গেল আমার জন্য।" বলে সে ঐ খেলনাটি নিল। তারপর তারা আর রূপা ছাড়া সবাই আবার মুখ নোংরা করে বসল। এবার দেখে, এক ছোট্ট মেয়ে ফুল বিক্রি করছে। এমন ফুল, যে কখনো দেখেনি কেউ। তার নাম ব্যাকোলি ফুল। সোনালী বলল, "চামেলী! তুমি আবার লটারী কর।" এবার সোনালী এল। এবার সে চামেলীর নাম তুলল। যে লটারী করে। চামেলী বলল, "ইয়ে, ঐ ফুল আমি নিতে পেরেছি। কি মজা! আবারও ঐ টাকা কেমন কাজে লেগে গেল। কি মজা, কি মজা!" চামেলী ব্যাকোলি ফুলটি নিল। নিয়ে নিজের কাছে রেখে দিল। এখন বলল, দেখি এবার। কার নেওয়া বাদ আছে কিছু। এবার তারাই লটারী করতে এল। এবার রূপালীর নাম উঠল। রূপালী উঠে দাঁড়ালো। বলল, এবার আমার নাম তো উঠল। কিন্তু কোন দোকানদারদের তো দেখছি না। সোনালী বলে, আরে বোকা! চোখের সামনে বেটা বই নিয়ে যাচ্ছে, চোখে দেখছিস না? তোরা শোন, বই খুকু কিনে নে। আমারো কাজে লাগবে। বলে নিল। এর পরের বার চামেলী লটারী করতে এল। তারা হাতের উপর কাগজ দিল। এবার উঠল সোনালীর নাম। তারপর মায়ের জন্য একটি কম্বল কিনে নিল। তারপর বাসায় ফিরল। তারপর পহেলা বৈশাখের ফূর্তি আনন্দ করল। বলতে থাকল, "এসো হে বৈশাখ।" এবার মা খুশী হল। এবার আর ফাকি মারতে পারল না পড়ায়। এবার আবার পড়তে শুরু করল। তারা এবার কি করল জান? তারা বলল, "মা! শোন তো। দেখ দেখি, জান, এদিকে না ঘটে যাচ্ছে। জান মা? আমি তোমাকে নিয়ে শিশুপার্কে তুমিও ঘোড়ায় চড়বে, আমিও ঘোড়ায় চড়ব।" মা তো হাসতে হাসতে বলল, "কি যে দুষ্টু তুই। আমি কি আর উঠতে পারি অত ছোট ঘোড়ায়?" তারা তো বলল, "মা, তাহলে স্প্রিংয়েও তো তুমি আমার সাথে চড়তে পারবে নিশ্চয়ই।" মা হাসতে হাসতে বলল, "ওরে দুষ্টুরে তুই। এবার বলিস না যে, আমাকে নিয়ে স্লিপারে উঠব। এটা আবার বলিস না তুই। এটা বললে কিন্তু মাথাটাই হা্সতে হাসতে একেবারে কি হয়ে যাবে জান?" তখন তারা তো হাসতে হাসতে বলল, "কি যে বল মা? কিছুতেই উঠতে পারবে না। তবে কি তুমি কিছুতেই উঠতে পারবে না?" মা আবার হেসে বলল, "কি যে বলছ তুমি আবার। শোন, আমি সবকিছুতেই যে উঠতে পারব না তা নয়। মাত্র দুটি জিনিসে উঠতে পারব। একটি হল দোলনায়, আর একটি হল এক ধরনের নৌকা এনেছে দোলে সেটায়। আর পারব ট্রেনে। হা হা হা, তারা।" তারা তো আবার বলল, "মা, যেতেই হবে। ঘোড়ায় চড়তেই হবে। আমি যে বললাম তার মধ্যে একটাতে তোমাকে রাজি হতেই হবে।" মা তো বলল, "না রে। আচ্ছা, চল। কোনটায় উঠাবি?" তারা বলল, "শোন মা। ঐ ঘোড়া যায় না, ঘোড়া। ঐ ঘোড়াতে আমি উঠব না। ঘোড়ারে মাঝে মধ্যে সিট থাকে না, সেই সিটের মধ্যে বসব। তাহলেই তুমি উঠতে পারবে। সেই সিটে বসলেই হবে।" মায়ের তো মাথা খারাপ হয়ে গেল। মা বলল, "ইস! শিশুপার্কে যেতেই হচ্ছে। কি আর করব। আর নাহলে তো আবার আমার কাছে চকলেট চাইবে। আর কি করার! যাই তারার সাথে।" এ ভেবে মা বলল, "তারা, ভাল হবে না কিন্তু। এসো তাহলে। তাহলে কিন্তু ফুল যে ঘোরে না, মাথা ঘুরায়, ওখানে কিন্তু একা একা উঠতে হবে।" তারা বলে, "না, না। ওখানে আমি উঠব না।" তখন তার ক'দিন পরই তারার মায়ের একটি ছোট বাচ্চা হল। বড় হয়ে বলল, "মা, মা!" তখন তারা বলল, "এই যে। সুপোলা, তুই আর মাকে বিরক্ত করিস না। আমি তো আর যেতে পারলাম না ঘোড়ায় চড়তে। তুই তো আর আগের কথা জানিস না।" তখন সুপোলা বলল, "না রে বোন, আমায় তুই বিরক্ত করিস না। আমি মাকে যা বলার এক্ষনি বলব।" "আচ্ছা মা, শোন তো। এই আমিও যেতে চাই বোনের সাথে। এখন তুমি নিয়ে যাও শিশুপার্কে। তখন নিয়ে গেল।" এবার তারাকে বলল, "এবার তুই উঠতে পারবি?" বলে, "না, পারব না। আমি ওটাতে উঠতে পারব না। তবে দোলনা নৌকাতে উঠতে পারব।" তখন মা বলল, "একা একা পারবি তো। আমি শুধু উঠিয়ে দিয়ে নেমে যাব। একা দোল খেতে পারবি।" "হ্যাঁ, মা। পারব, নিশ্চয়ই পারব।" তারপর যেই উঠাতে গেল, অমনি ভয় পেয়ে গেল। বলল, "মা, সত্যিই উঠতে হবে নাকি?" "হ্যা, সত্যিই উঠতে হবে। দেখিতো কেমন পারিস। এই সুপোলা, তুই ওঠ তোর বোনের সাথে।" তখন তো সুপোলা বোনের সাথে উঠে পড়ল। মা হ্যান্ডেল ধরিয়ে দিয়ে সিট দেখিয়ে দিয়ে চলে গেল, নিচে দাড়ালো। তখনই তো দুজনে বলতে লাগল, "মা, দেখবে আমি ভিতু নাকি ভিতু না। দেখ তাহলে।" তখন শুরু হল সেই নৌকা দোলা। ছোট বোন তো শুধু ভয় পায়। তাই দেখে তারা বলল, "ওরে বোন, তুই এত ভয় পাচ্ছিস কেন? তুই এত ভীতু জানতাম না তো। চড়ে থাক।" তখন ওরা দোলনা নৌকা থেকে নামল, আর মা ভাবল, হায় আল্লাহ! কি করি। এরা ঠিকই পারল। এখন তো আমার আর ঐ ঘোড়ায় না চড়লে কত জ্বালা যে দেবে, চিন্তা করতে পারছি না। যাই, কি আর করার। উঠি গিয়ে। মা বলল, "আয় তবে, উঠি। কে আমার সাথে উঠবে?" তারা আর সুপোলাকে বলল, "মা, কে কে উঠবি আমার সাথে?" দুজনই বলল, "আমরা দুজন।" তখনই মা বলল, "এই যে, দুজনই দেখ জেদ ধরছে। আয় তবে। ঐ সিটটাতে উঠতে হবে। এখন গিয়ে লাইন ধর।" তখন ওরা বলল, "মা গো, লাইন করতে হবে নাকি?" বলল, "ইস! কি, লাইন করতে হবে না মনে হচ্ছে? লাইন কর।" তখন ওরা লাইন করে উঠল। মা তো সিট করেই বসে পড়ল। এখন ছাড়ার পর দুইজনই খুব মজা করল। আর মা তো বলতে থাকল, কি যে করব? মাথাটা তো নষ্ট হয়ে গেল। ঐ ফুলে উঠতে দেয়াই উচিত ছিল ওদের। ঐ ফুলে উঠতে না পেরে ওরা চলে আসত, তবেই ভাল হতো। এই বলতে বলতে মা তো কাঁদতে লাগল। তখনই সব বাচ্চারা সামনে পিছনে হাসতে লাগল, বড় মানুষ চলছে, তারপরও কাঁদছে কেন- তা দেখে হাসছে। তা দেখে মায়ের আরো লজ্জা বেড়ে গেল। মা কান্না থামাতে পারছিল না। তখনই সবাই আরো হাসল। কেমন মা যে, এই মা তো কান্না থামাতেও পারছে না। বলে আরো লজ্জা দিল। মায়ের তো আরো লজ্জা বেড়ে গেল। মা তো কষ্ট মষ্ট করে আরো কান্না থামাল। তাতে আরো লজ্জা দিল। মায়ের তো মন ভরা লজ্জা। মা আর কান্না থামাল না। এটুকুই রাখল বুদ্ধি করে। আরো থামালে নিশ্চয়ই আরো লজ্জা পাব। তখন আরো লজ্জা দিল। যাই করে মা, সবাই আরো লজ্জা দিতে থাকে। থামার পর সবাই লজ্জা দিতে থাকে, ঐ দেখ, ঐ মাটা কাঁদে। তারপর আবার থামাতে গিয়ে থামাতেও পারছে না। থামার পর সবাই লাফাতে এবং বলতে লাগল। মা একটু দেখে বাচ্চাদের মত মুখ নোংরা করল। তার মেয়ে দুটোও হাসল। তখন মা তো এসে বাসায় এসে দুজনকেই ধাওয়া করল। "তোদের জন্য আমি আজ রুটিটুকুও বেলতে পারলাম না।"-বলে ধাওয়া করল। এখন ছোট ঐ দুটি বাচ্চারা আরো হাসল। তখন মায়ের হাসা দেখেই লজ্জা এসে গেল। তাতেই মায়ের বারবার আরো লজ্জা লাগছে।

No comments:

Post a Comment