Monday, March 6, 2017

কাঠুরে ও ভুত

এক গ্রামে বাস করত এক কাঠুরে। সে একদিন গাছ কাটছিল। হঠাৎ সে দেখল একটি সুন্দর ডাল। সেই ডালটি খুবই গরম। হাত ছোয়ানো যাচ্ছে না। সে কুঠারটি দিয়ে অনেক কষ্টে ডালের কোণায় কোপ দিল। ডালটি ভেঙ্গে পড়ল। ডালটি দুই টুকরো হয়ে গেল। তারপর কাঠুরে গাছ থেকে নেমে এল। সে ঐ ডালটি ছুঁতে গেল। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে একটি আলো বের হয়ে এল। হঠাৎ সেই আলোটি একটি ভুতে পরিণত হলো। কাঠুরে ভয়ে হাত কাঁপতে কাঁপতে বলল, "আমাকে মারবেন না, ক্ষমা করে দিন। আমি এক্ষুনি চলে যাচ্ছি।" ভুত বলল, "না না, আমি তোমায় মারব কেন? তোমায় পুরস্কৃত করার জন্য আমি বেরিয়ে এলাম, আর তুমি বলছ আমি মারব। আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ।" মানুষটি বলল, "কেন, আমি তোমায় কি করেছি? আমি বরং তোমার বাস করার মত সুন্দর ডালটি ভেঙ্গে ফেলেছি। একটি দোষ করেছি। আর তুমি বলছ পুরস্কৃত করবে? নাকি রাগের মাথায় ব্যাঙ্গ করছ?" "না, না। ব্যাঙ্গ করতে যাব কেন? তুমি যে আমায় মুক্ত করেছ। ভুতের রাজাকে আমি প্রত্যেকদিন মাছ এনে দিতাম। সে প্রত্যেকদিন ঐ মাছগুলোকে দাসী বানাতো আর তার রূপচর্চার জন্য তাদের দিয়ে কাজ করাতো। আর কাজে ভুল হলে তাদের খেয়ে ফেলত। আর বা- বা- কী মজা, এমন করত। রাজাটি ছিল রূপের কাতর।" ভুতেরা যা খায় তা আমাদের কাছে ঘৃণা লাগে। ভুতেরা কি খায় জান? আরেকটু পড়ে দেখ। ভুত বলল, "কেউ যদি বড় কোন ভুল করে, তাহলে তার রক্ত দিয়ে ভুতেরা স্নান করে। তারপর সেই রক্ত দিয়ে ফুলের পাপড়ি ভিজিয়ে তা গায়ে ছিটায়, আরো কত কিছুই না করে।" ভুতেদের সব কিছুই আমাদের ঘৃণা লাগে। তারপর খায় কি জান? খায় তো কী সব কাঁচা মাংস গিলে গিলে খায়, চাবাতেও হয় না। ভূতেরা তো দুই হাত নাড়ায়, যাদু-মন্ত্র পড়ে, আর দাসীরা সঙ্গে সঙ্গে রোস্ট হয়ে যায়। এখন এই ঘৃণাযুক্ত কথা বাদ দাও। এবার আসল গল্পটির কথা শোন। কাঠুরেটি বলল, "আচ্ছা ঠিক আছে। কি দেবে বল?" "যা চাও তাই দেব।" "আমি শুধু সুখে থাকতে চাই। আমি কুটিরে কাঠের ব্যবসা করতে চাই না। বড় কোন ব্যবসা করে সুখী হতে চাই।" তখন ভুতটি বলল, "এ কি আবার অসম্ভব নাকি? এ তো খুবই সহজ কাজ। কাল তোমার বউকে নিয়ে এসো। আমি এবার গাছের কোটরের ভিতর লুকিয়ে থাকি। আমায় দেখতে পেলে লোকেরা কাঁচা কঞ্চি দিয়ে আমাকে পিটাবে।" তারপর কাঠুরে বাড়ি ফিরল। রাতে সে বউকে সব বলল। বউ বলল, "কী সব আজেবাজে কথা বলছ! ভুত, আগুনের মত গরম ডাল, ভুতের রাজারা মাছদেরকে দাসী বানিয়ে রাখে, আবার কোন্‌ ভূত নাকি তোমাকে পুরস্কৃত করবে, ভুতেরা কিসব খায়! কী সব আজেবাজে কথা বল না তুমি! কাল আমি প্রমাণ করেই দেব, তুমি যা দেখেছ সব মিথ্যা। কাল আমি সকালে তোমার সঙ্গে যেতে রাজি।" কাঠুরে বলল, "ভয় পাবে নাতো?" বউ বলল, "কিছু থাকলে না ভয় পাব। তুমি যে কী বল না, তুমি একটু বেশিই বল। প্রমাণ না করলে আমার নামটি বদলে দিও।" তখন কাঠুরে বলল, "ঠিক আছে, নামটি পাল্টে দেব। তোমার নামটি করে দেব ভুতুরাইল্লা" তখন বউ বলল, "আজেবাজে কথা না বলে ঘুমিয়ে পড়।" সকাল হলো। সকাল হয়ে বউকে নিয়ে রওয়ানা হয়ে গেল কাঠুরে বনের দিকে। ভাঙ্গা ডালটির কাছে গিয়ে ডাকতে লাগল, "ভুত বন্ধু, ভুত বন্ধু! একবারটি দেখা দাও তো।" ভুত এমনভাবে কথা বলল, যে সেটা শুধু কাঠুরের বউ ও কাঠুরেই শুনতে পাবে। সে বলল, "আগে আশেপাশের সব মানুষ তাড়িয়ে নাও, তারপর আমি বের হব।" সেখানে ৫ জন মানুষ ছিল। দু'জন গল্প করছিল, দু'জন গাছে পানি দিচ্ছিল, আর একজন বই পড়ছিল। তারা (কাঠুরে ও তার বউ) কৌশল ভাবতে লাগল। যে পড়ছে তাকে গিয়ে বলল, "ভাই! তুমি যে কলম আননি দেখছি।" "কলম না আনলেও চলবে, পড়ছি তো, লিখছি তো না। এ বইতে কোন অনুশীলনী নেই।" কাঠুরে মনে মনে ভুতকে বলল বইতে একটি অনুশীলনী বানিয়ে দিতে। বই পড়ার লোকটি বলছিল, "টিচার বলেছে, সারা বইতে যদি অনুশীলনী থেকে থাকে, তাহলে তা পূরণ করবে। আর যা যা আছে, তা পড়ে শেষ করবে। তারপর বই জমা দিতে হবে। ক্লাস eleven-এ পড়ি তো।" তখন ভুত বন্ধু সাহায্য করল। সে একটি অনুশীলনী বানিয়ে দিল। তার বাড়িতে একটি কলম ছিল, সেটি নষ্ট করে দিল। কালই বই জমা নেবে। এবার কাঠুরে বলল, "এই দেখ বের করে দিচ্ছি অনুশীলনী। এই যে, তুমি এগুলো পূরণ না করলে তোমার টিচার যে তোমাকে কি করবে, আমি জানিই না। যাও, বাসায় গিয়ে কলম নিয়ে এসো, না থাকলে কিনে নিয়ে এসো।"- এই বলে তাকে কাজে লাগিয়ে দিল। গল্প করছিল যে দু'জন, তাদের কাছে গেল। তারা আলোচনা করছিল, একটি পার্টি করবে। তারা বলছিল যে, পার্টিটা এই পুকুরের ধারে করবে। পুকুরটা ছিল সেই গাছের পাশেই। তারা বলছিল যে, বাড়িতে তো বেলুন আছে, নিয়ে আসি। তারপর ভুতকে ইশারায় কাঠুরে বলল, "বেলুনগুলি ফুটিয়ে দাও।" ভুত গাছের কোটরের মধ্য থেকে সব বুঝল। সে বেলুনগুলি ফুটানোর জন্য হালকা-পাতলা এমন অদৃশ্য সুই দিল, যাতে মানুষের কোন ক্ষতি হয় না। তারপর বেলুন ক'টা ফুটে গেল। বেলুনগুলো ছিল অসংখ্য। তখন কাঠুরেটি বলল, "ও ভাই! তোমার বাড়ি দূরের ঐ হলুদটি নয়, তিনতলা নয়, ডানপাশের বাড়িটি তো। ওখানে দেখছি, কিছু বেলুন ফুটে আছে। ঐগুলি তুমি ফেলে দিয়ে অন্যগুলি কিনে যা কাজে লাগে সে কাজটি কর। খেয়াল করিয়ে দিলাম বলে ধন্যবাদ বলার প্রয়োজন নেই; যাও ভাই, যাও।" তাদেরকেও কাজে লাগিয়ে দিল। এবার যে দু'জন গাছে পানি দিচ্ছিল, তাদের কাছে গেল। বউটি বলল, "ভাই! আপনার পানির পটে কি পুরো ভর্তি আছে?" তারপর ভুতকে কাঠুরে ইশারায় বলল কলের পানি, পুকুরের পানি ও টবের পানি শুষে নিতে। ভুত তাই করল অদৃশ্যভাবে। তখন কাঠুরে লোক দুটোকে বলল, "ভাই, তোমরা যে গাছে পানি দিচ্ছ, পানি শেষ হয়ে গেলে কি করবে?" লোক দুটোর একজন বলল, "কেন গো, ভাই? আমাদের বাড়িতে তো কল আছে।" তখন ঐ বউ বলল, "ভাই, আপনাদের তো কল আছে। এই সময়টুক যে আজকে পানি বন্ধ করে দিয়েছে, জানেন? আপনারা যে এই সময় ঘুমিয়ে ছিলেন গতকাল, তাই যখন মাইকে বলেছিল শুনতে পাননি। আর এমন গরম পড়েছে, পুকুরের পানিও শুকিয়ে গেছে। পানি কোত্থেকে পাবে, গাছগুলো যদি মরে যায়? ভাই, একটি কাজ করুন। যে রাস্তায় আধ ঘন্টা লাগে যেতে দূরে একটি নদী আছে, অত পানি শুকিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। ওখানে গিয়ে বরঞ্চ পানি নিয়ে আসুন।" এ দু'জনকেও কাজে লাগিয়ে দিল। এবার আর কিচ্ছু নয়। বউকে দেখা করাবে বলে কাঠুরে ভুতকে ডাকতে শুরু করল। তারপর ভুত এসে হাজির হযে বলল, "বউ মা! তুমি আমার বউমা! জান তো, তোমার জামাই আমার কত্ত বড় একটা উপকার করেছে? তুমি বোধহয় সব শুনেছ, এটুকু বলে দিচ্ছি, আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না, কারণ তোমার জামাই আমাকে মুক্ত করে দিয়েছে এই বন্দীদশা থেকে। এবার বরঞ্চ একটি কাজ করা যাক। তোমাদের কুটির আমার খুব পছন্দ হয়েছে। নতুন জায়গায় থাকতে খুব ভালোই লাগে। আমি তোমাদের কুটিরে থাকি বরঞ্চ। আমি তোমাদের একটি বড় বিল্ডিং বানিয়ে দিচ্ছি, তোমরা সেখানে বাস কর। কাঠের ব্যবসা ছেড়ে দাও দেখি। তাড়াতাড়ি কথা বলা শেষ কর। লোকেরা কিন্তু এসে পড়বে, যাদেরকে তোমরা সরিয়ে দিয়েছ। এবার শোন দেখি। প্রত্যেক রাতে যখন গভীর হবে, তখন তোমরা গাছের কোটরের সামনে দাড়িয়ে এসে বলবে, 'ভুত ভাই, ভুত ভাই। এসো তুমি ভাই ভাই। বন্ধু ডাকছে তোমায় রে। ডাকে এবার সাড়া দে।'- এই মন্ত্রটি পড়বে। ঠিক আছে? এই মন্ত্রটি পড়লে আমার দেখা পাবে।" তাদের বুদ্ধির জোরে তারা সফল হয়েছে। তারপর তারা সুখে থাকল।
এরপর শোন। সেই ভুতের রাজার গল্প। সেই ভুতের রাজা দাসী বানাতো মাছ থেকে। ভুত শুধু একটা জিনিসই করতে পারে না। পারে না ওষুধ বানাতে, শুধু বৈদ্য ভুত ছাড়া। 

No comments:

Post a Comment