Thursday, April 25, 2019

**** ভালো টিচার ও পচা টিচার ****

এক ছিল এক স্কুল। সে স্কুলে অনেক টিচার ছিল। তাদের মধ্যে একজন ছিল পচা টিচার, আরেকজন ছিল ভাল টিচার। পচা টিচারটি প্রিন্সিপালকে বলে, "আমাকে আপনি যত ক্লাস দেবেন, দেন। কিন্তু বেতন অনেক দেবেন। পুরো স্কুলের ক্লাসও যদি দিতে হয়, তাও আমি নেব। তবে বেতন কিন্তু কম দিলে চলবে না।" আর ভাল টিচারটি প্রিন্সিপালকে বলল, "আপনি আমাকে বেতন আপনার পছন্দমত দেন, কিন্তু ৩টা ক্লাসের বেশি ক্লাস আমাকে দেবেন না। আপনি যদি আমাকে অনেক বেতন দেন, আমি যদি অনেক ক্লাস নেই, তাহলে আপনার লাভ হবে না, বরং আমারই লাভ হবে। আমিই বেশি টাকা পাব। কারণ, বেশি ক্লাস নিতে গেলে বিভিন্ন ক্লাসের তো বিভিন্ন পড়া। এতকিছু মাথার মধ্যে গুলিয়ে যাবে। তাই ৩টা ক্লাস নিলে আমিও ভাল পড়াতে পারব, আপনিও কম বেতন দিয়ে পারবেন। লাভটা তো আপনারই।" এই দুইজন ছিল নতুন টিচার।
পরের দিন দুই টিচারই ক্লাস নিতে গেল। ভাল টিচারকে দেয়া হলো তিনটি ক্লাস। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বাংলা ভার্সনের বিজ্ঞানের ক্লাস, আর শিশুশ্রেণির ইংরেজি ভার্সনের অংক ক্লাস। তাকে বেতন দেয়া হলো ৬,০০০/- টাকা। কিন্তু ভালো টিচার কিছু মনে করল না। আর পচা টিচারকে দেয়া হলো ২০টি ক্লাস। তাকে দেয়া হলো ৪০,০০০/- টাকা। পচা টিচারের ভাগে ছিল বড় বড় ক্লাসের ক্লাস, আর বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন দুইটা মিলানো। এবার দুইজন গিয়ে ক্লাসে ঢুকলো।
প্রথমে দেখা যাক ভালো টিচারের কথা। সে আগে শিশুশ্রেণির ক্লাসে গেল। গিয়ে সে সবাইকে চুপ করে বসতে বলল। সবাইকে বই বের করতে বলল। এবং খুব ভালভাবে অংকের নিয়ম শিখিয়ে দিল। প্রত্যেক বাচ্চার কাছে বিশেষভাবে গিয়ে গিয়ে দেখল, তারা পারছে নাকি। না পারলে বুঝিয়ে দিল। তারপর সবাইকে দুটি অংক বাড়ির কাজ দিয়ে দিল। আর বলে দিল, "তোমরা সবাই কি অংকটা বুঝেছ? এ ধরনের অংক যদি বাসায় দুটো করতে দেই, পারবে তো? বাসায় টিচার থাকুক, আর মা-বাবা থাকুক, তাদের কোন সাহায্য নিও না। কিছু না বুঝলে তখন সেটা রেখে দাও। আর পরের দিন আমার কাছে এসে জানতে চেও। মনে কর, আমি তোমাকে এক নিয়ম শিখালাম। যদি মা-বাবা আরেক নিয়ম শেখায়, দুটো নিয়মই তুমি ভুলে যাবে। তাই সবাই যেভাবে বললাম সেভাবে বাড়ির কাজ করে আনবে।" তারপর ভাল টিচার বিদায় নিয়ে প্রথম শ্রেণির ক্লাসে গেল। সে বইয়ের প্রত্যেকটি লাইন দেখে প্রশ্নোত্তর বানিয়ে দিল। এবং বলে দিল, আজকে বাসায় গিয়ে তোমরা এই সব প্রশ্নোত্তর পড়বে। কালকে আমি পড়া নেব না। কিন্তু তাও আজকে গিয়ে পড়বে। কালকে রিভিসন করবে। তার পরের দিন আমি পড়া নেব। পড়তে গিয়ে কোন সমস্যা হলে কালকে আমাকে জানাবে। দুইদিন সময় পাওয়ার পরেও যদি তোমরা না পড়া দিতে পার, তাহলে একদিনে দুটো পরীক্ষা নিয়ে নেব। আর এ সব কিছুর নম্বর কিন্তু পরীক্ষায় যোগ হবে। দ্বিতীয় শ্রেণিতে গিয়েও টিচার একই কথা বলল। সে খুব ভালোই পড়ালো।
এবার আসি পচা টিচারের কথায়। সে তার সবচেয়ে ছোট ক্লাস ষষ্ঠ শ্রেণিতে গেল। একজনকে বলল বই নিয়ে আসতে। তাকে সামনে দাঁড় করালো। বলল, "বই দেখে জোরে জোরে রিডিং পড়, যাতে সবাই শুনতে পায়। আর সবাই! তোমরা ওর পড়া শুনে বোঝার চেষ্টা কর। আর ওর পড়ার মধ্যে কোন কথা বলবে না।" তারপর বাচ্চাটার রিডিং পড়া শেষ হয়ে গেলে পচা টিচার তাকে গিয়ে বসতে বলল। সবাইকে বলল, "বুঝেছ তো? এই চাপ্টারের প্রত্যেকটি লাইন থেকে হোম-ওয়ার্ক খাতায় প্রশ্নোত্তর বানাবে। তারপর পড়বে। কালকে আমি পড়া নেব। না পারলে পরীক্ষা থেকে ১০ নম্বর কমিয়ে দেব। আর কোন সমস্যা হলে বাসার টিচার বা মা-বাবার হেল্প নেবে। আমি এতকিছু সামলাতে পারব না।" এই বলে সে ক্লাস থেকে বিদায় নিল। এবার ষষ্ঠ শ্রেণির ইংরেজি ভার্সনে গেল। গিয়ে বলল, "Hey everyone! Take out your book and open at page 62. Read silently. After reading, make question-answer from each line and after finishing your work you can play. Now I am going to take rest, don't disturb me." মিসের এই কথা শুনে সবাই স্তব্ধ হয়ে গেল। সবাই এক কাজ করল। তারা বুঝল, টিচারটা আলসে। সে খাতা চেকও করবে না। তাই তারা ইচ্ছেমতো খেলাধুলা করতে লাগল। আর ঘন্টা পড়ে গেলে টিচার ক্লাস থেকে চলে গেল। ঐ সময় কারোরই কোন পড়া হলো না। এভাবে টিচার প্রতি ক্লাসে গিয়েই উল্টোপাল্টা গোজামিল দিয়ে চালাতে লাগল।
এর পরের দিন ছিল অভিভাবক দিবস। বাচ্চারাও আসল। ছোট ক্লাসের বাচ্চারা যারা ভাল টিচারের ক্লাস পেয়েছে, তাদের অভিভাবকরা প্রিন্সিপালকে গিয়ে বলল, "এই টিচার অনেক ভাল। এই টিচারকে কোনদিন দয়া করে সরাবেন না। বাচ্চারা এই টিচারকে খুব পছন্দ করে।" আর যারা পচা টিচারের ক্লাস পেয়েছে, তারা সবাই তার নামে অভিযোগ করতে লাগল। ঐ বাচ্চাদের মা-বাবারা গিয়ে প্রিন্সিপালকে বলল, "এই ক্লাসের টিচার মোটেও ভাল না। ক্লাসে বাচ্চাদেরকে কিছু বুঝিয়ে দেয় না। একটা বাচ্চা সামনে গিয়ে পড়তে থাকে, আর সবাই তা না শুনে দুষ্টুমি করতে থাকে। টিচার বুঝিয়ে দেবে না? রিডিং পড়া তো সবাই পড়তে পারে। আর এই টিচার সবাইকে বাসায় গিয়ে বাসার টিচার বা মা-বাবার কাছ থেকে সাহায্য নিতে বলে। এই টিচারকে শোকজ করুন, নয়তো এই ক্লাসে দেবেন না। এই টিচার থাকলে কেউ ভাল রেজাল্ট করতে পারবে না।" এরপর প্রিন্সিপাল ঐ টিচারকে শোকজ করলেন। আর ভাল টিচারকে গিয়ে বললেন, "তুমি অনেক ভাল পড়াও। তোমার বেতন আমি আরো বাড়িয়ে দিচ্ছি। তোমার বেতন আমি ২০,০০০/- করে দিচ্ছি। পচা টিচারের ভাগে অন্য যেসব ক্লাস ছিল, সেগুলো তুমি নাও। তাহলে তোমার বেতন ৫০,০০০/- করে দেব।" তারপর ভাল টিচার বলল, "না, না! আপনি যদি বেতনের লোভ দিয়ে আমাকেও বেশি ক্লাস দেন, আমিও তো পচা টিচারের মত হয়ে যাব। আপনি কি চান আমাকেও পচা টিচারের মত করতে? তাই দেখে দেখে আমার মত আরো টিচার নিয়োগ দিন। তাদেরকে অল্প অল্প করে ক্লাস দিন, বেতন একটু কমিয়ে দিন। তাহলে আপনার অনেক লাভ হবে। টাকাও কম দেবেন, আর লেখাপড়াও ভাল পাবেন।" তারপর প্রিন্সিপাল তাই করলেন। আর ঐ স্কুলটি এখন আরো ভালো হয়ে গেল।

No comments:

Post a Comment