Wednesday, August 28, 2019

শাপে বর

এক ছিল এক মহিলা। তার ছিল দুই মেয়ে। বড় মেয়ে রিতা ও ছোট মেয়ে মিতা। কিন্তু মহিলাটি মিতাকে কেন যেন বেশি ভালবাসত। সবসময় তার জন্য সেরা জিনিসটা দিত। কারণ, রিতার চেয়ে মিতা অনেক বেশি মডার্ন ছিল। মিতা ছিল খুব চঞ্চল ও নামকরা। তাকে যারা যারা পছন্দ করত, তারা তাকে গিফট বা টাকা দিত। আর মেয়ের ভাগ তো শুধু মেয়ে খায় না, মাও খায়। এজন্যই মিতাকে মা বেশি পছন্দ করত। আর রিতা ছিল নিতান্ত সাধারণ মেয়ে। কিন্তু তার রূপ-গুণ সব ছিল ভাল। শুধু মডার্ন ছিল না সে। এখন তারা বড় হয়েছে। একদিন মহিলাটি তার দুই মেয়েকে ডেকে বলল, "তোরা শোন। তোরা এখন বড় হয়েছিস। তোদের কাজ করে টাকা আয় করতে হবে। তার অবশ্য ব্যবস্থা আমি করেছি। রিতা, তুই পাশের বিল্ডিংয়ের ঐ সাধারণ পরিবারে কাজ করবি। আর মিতা, তুই ঐ বড়লোকের যে বাড়িটা দেখছিস, সেখানে দুটো বাচ্চাকে পড়াবি। তাদের সাথে আমি কথা বলেছি। সবাই টাকা দেবে বলেছে। রিতা যেখানে কাজ করবে, সেখানে বেতন ততটা বেশি নয়। কিন্তু মিতার কিন্তু ফাটিয়ে দেয়ার মত বেতন। আজ বুধবার, এই শনিবার থেকে তোরা কাজ করবি। টাকা আয় করবি। আর আমার কথাই কিন্তু মানতে হবে।" শনিবার সকালে রিতা ও মিতা দু'জনই নিজেদের কাজ করার জায়গায় পৌঁছে গেল। মিতা প্রথমে তার কাজের জায়গায় ঢুকেই উষ্ণ সম্বর্ধনা পেল। বাচ্চা দুটোও খুশী। নতুন টিচার এসেছে। এবার মিতা তার কাজ করা শুরু করল। বাচ্চা দুটিকেই প্রথমে বাড়ির কাজ করালো। আর ওদিকে রিতা বাড়িতে ঢুকল। ঢোকার পর সেই বাড়ির মালিক বলল, "তুমিই কি সেই কাজের মেয়ে? ঠিক আছে, ভিতরে এসো। তুমি কি সকালে খেয়েছ?" রিতা বলল, "মা যা দিয়েছে, তা খেয়েছি।" মালিক বলল, "কি দিয়েছে?" তখন রিতা উত্তর দিল, "একটা পোড়া রুটি আর এক চামচ বাসি ডাল।" মালিক অবাক হয়ে বলল, "কি বলছ তুমি? এটা কেমন কথা? এসো তোমাকে এই রুটি ও ডিম ভাজা দেই।" রিতা খাওয়া শেষ করল। মালিক বলল, "তুমি আসবে দেখে আমি ছোট রুমটা খালি করেছি। রুমটা একটু নোংরা, তবে কিছু মনে করো না। বিছানাটা পরিস্কার আছে। এখন গিয়ে বিশ্রাম নাও, তারপর না হয় ঘরটা একটু মুছে দিও।" রিতা মালিকের কথামতো কাজ করল। একটু পর দুপুরের খাবারের সময় হলো। বাড়িতে রান্না হলো ভাত আর গরুর মাংস। রিতা রেস্ট নেওয়া অবস্থায়ই মালিকের বউ সব রান্না করেছে। মালিকের ছিল একটি শিশুপুত্র। বয়স ছিল তিন। সেও রিতাকে খুব পছন্দ করেছে। মালিকের বউ রিতাকে বলল, "তোমার তেমন কিছু করতে হবে না। তুমি শুধু দুপুরের খাবারটা পরিবেশন করে দাও। আর শেষে একটু বাসনগুলো মেজে দিও। আর তারপর কিছু করতে হবে না। শুধু আমার বাচ্চাটাকে ঘুম পাড়িয়ে তার পাশে শুয়ে থেকো। কাজগুলো বেশি মনে হলে কিছু মনে করো না।" রিতা তো অবাক! এমন মালিক আবার হয় নাকি? সে মালিককে বলল, "আপনি ঠিক আছেন তো? আমি কিন্তু কাজের মেয়ে। আমার নাম কিন্তু রিতা।" মালিক বলল, "আমার বউ তো ঠিকই বলেছে। এত কাজ! তোমার একা হাতে করা কি সহজ? আর আমাদের একটা অভ্যাস আছে, আমরা কাজের মেয়ে হোক, মেহমান হোক, সবার সাথেই ভালো আচরণ করার চেষ্টা করি। তাছাড়া তোমার বেতনটা তো তত বেশি নয়, তাই খারাপই লাগছে তোমার জন্য।" রিতার তো মাথা ঘুরে যাচ্ছে। সে অবাক হয়ে আছে যে, "তার মালিক এত ভালো কি করে হলো? তাছাড়া তার মা তাকে এত ভাল মালিকের কাছে দেবে? মা মনে হয় বেতন কম দেখেই আমাকে এখানে দিয়েছে। মালিক এত ভালো- বুঝলে হয়তো এখানে দিত না।" এরপর রিতা মালিক ও তার বউয়ের সব কথামতো কাজ করলো। আরামেই তার দিন কেটে যাচ্ছিল। 
এবার আবার আসা যাক মিতার কথায়। শুরুর দিকে মিতাকে ভালোভাবে বরণ করে নিলেও পুরোটার যে ভাল হবে এর কোন গ্যারান্টি নেই। মিতা বাচ্চাদের পড়ানো শেষ করল। দুপুরের খাবারের পালা। সবাই খেতে বসল। মিতাও এসে খেতে বসল। ডাকার অপেক্ষাও করল না। মালিক বলল, "এই মেয়ে! এত বেতন নিয়ে এসেছো, আবার খাবারও কেন দিতে হবে? এসেছো, তা খাবার আনবে না? যাও, হোটেলে গিয়ে খেয়ে এসো। আর পার্সেল করে আর দু'দিনের খাবারও নিয়ে এসো। এটা ভেবো না যে, এত বেতন পাবে, তার উপর আবার ভালো ভালো খাবারও পাবে বসে থেকে।" মিতা তো খুবই Shocked হয়ে গেল। তার এখন ইচ্ছে করছে, মায়ের পিঠে ধাম্মুর ধুমুড় কিল মারতে। তাও এখন আর কি করার। মালিকের কথামতোই কাজ করলো। 
মিতার ছাত্র বাচ্চা দুটো ছিল আবার খুবই দুষ্ট। একদিন তাদের দুষ্টুমি সহ্য করতে না পেরে মিতা দু'জনকেই ধরে পিটালো। শব্দ পেয়ে মা-বাপ দৌড়ে এলো। তারা রাগ হয়ে মিতাকে তাড়িয়ে দিল। মিতা এমনিতেই রাগে টিকতে পারছে না। পথে আবার উঁকি মেরে দেখতে পেল, রিতা বসে বসে ঘুমোচ্ছে আর তার মালিকের বউ কাজ করছে। তার রাগ দ্বিগুণ হয়ে গেল। বাড়ি গিয়ে যখন মায়ের কাছে আসল, মা বলল, "কই রে মা, মিতা? বেতনগুলো দে হাতে।" এতে তার রাগ তিনগুণ বেড়ে গেল। সে রেগে গিয়ে টাকাগুলো বের করে মায়ের মুখের উপর ছুঁড়ে মারল, "এই নে, তোর টাকা! খালি তো টাকা চাস। মেয়ে কোথায় কেমন থাকবে, সেটাও জান না? রিতাকে এই বাড়িতে কাজ করতে দিলেই পারতে। রিতাকে দেখে আসলাম রাজার হালে আছে!" মা রেগে গিয়ে বলল, "তাই নাকি? কোথায়? দেখি তো গিয়ে!" মা আর ছোট মেয়ে রিতার কাজের বাড়িতে গেল। গিয়ে তারা মালিককে ধরল। বলল, "এ কি করছেন? কাজের মেয়েকে শুইয়ে রেখে নিজেরা কাজ করছেন? এ কেমন বিচার?" এরপর মালিক রিতার এখানকার কাজের ডেইলি রুটিনটা বলল। কিন্তু তা শুনেও তার মা-বোনরা সন্তুষ্ট হতে পারল না। বলল, "এত কম কাজ! সে তো আমিও করতে পারি।" ছোট মেয়েও বলল, "এত সোজা কাজ যে আমিও করতে পারি।" মালিকেরা সব বুঝতে পারল। তারা বলল, "পারেনই যখন। এখন থেকে এ সব আপনারা দু'জন মিলে করবেন। আর রিতাকে আমরা মুক্ত করে দেব। রিতার মত কম বেতন পাবেন, কিন্তু সমস্ত কাজ করতে হবে।" এবার মা ও ছোট মেয়ে মনে মনে ভাবল, "ইস! কথাটা বলতে গিয়ে তো ফেঁসে গেলাম। কিন্তু রাজি না হলেও তো মান-সম্মান থাকে না।" তাই এখন থেকে মিতা ও তার মা খেটে মরে, আর রিতা ঐ বাড়িতেই ওখানকার সদস্য হিসেবে আরামে থাকে।

5 comments:

  1. Its like you learn my mind! You seem to grasp a lot
    approximately this, like you wrote the guide in it or something.

    I think that you just could do with a few percent to drive the
    message home a bit, but other than that, this is wonderful blog.
    An excellent read. I'll certainly be back.

    ReplyDelete
  2. Sohoj o sundor lekhoni. Dhonnobad o shuvo kamona roilo. click here

    ReplyDelete
  3. Sohoj o sundor lekhoni. Thanks for sharing.

    ReplyDelete