Tuesday, May 10, 2016

রাজার গল্প

এক ছিল এক রাজা। তার রাজপ্রাসাদের নাম ছিল প্রজাপতি রাজপ্রাসাদ। রাজামশাই দাস-দাসীদেরকে খুবই খাটাতো, কিন্তু রাজা ভালো ছিল। একদিন রাজামশাই দাসী রঞ্জনাকে বললেন, "রঞ্জনা! তুমি খোঁজ নাও, আমাদের প্রাসাদে কোন্‌ কোন্‌ প্রজা না খেয়ে আছে। আর আমার প্রাসাদে ছোটখাটো পোকামাকড় বা অন্য কোন প্রাণীরাও যদি না খেয়ে থাকে, তাদেরকে যদি তোমরা খাবার না দাও, তাহলে তোমাদেরকে কিন্তু আমি রাজপ্রাসাদ থেকে বের করে দেব। ছোট্ট একটি পিঁপড়েও যদি না খেয়ে থাকে, তাদের ছোট ছোট শস্যদানা দিতে হবে। আর এ রাজ্যের মশাগুলোকে যে করেই হোক বুঝাতে হবে, কারো গা থেকে রক্ত খেও না। প্রতিদিন কোন না কোন জায়গা থেকে রক্ত যোগাড় করে এনে মশাদেরকে খেতে দেবে। রক্ত কোথায় তা বলবে না, যেখান থেকেই পার আনবে- এইটা বলে দিচ্ছি। তোমাদেরকে নিজেদেরকেই খুঁজে নিতে হবে রক্ত। তাই বলে রক্ত যোগাড় করতে গিয়ে অন্যদেরকে না খাইয়ে রেখো না। রক্ত যোগাড় করেই যদি তোমার একদিন লাগে, তাহলে অন্য প্রাণীরা কি করে না খেয়ে থাকবে? আর আমার রাজ্যের পাশে যে জঙ্গলটি, সেই জঙ্গলের একটি হরিণও যদি না খেয়ে থাকে, তাকেও খেতে দিতে হবে। আর তোমরাও নিজেরা নিজেদের খাবার যোগাড় করে খেয়ে নেবে। রাজগরু তো আছেই। রাজগরু থেকে দুধ নিয়ে তোমরা খাবে। রাজফসলের ক্ষেতে অনেক ধান আছে। সেগুলো থেকে চালও তুলবে, পরে সব প্রজা, প্রাণী, মানব সবাইকে খেতে দিতে হবে, সবার যত্ন নিতে হবে। কারণ, আমি খুব ভাল একটি রাজা। সবাইকে যেন তুমি ঠিকমত ই কর। শুধু তোমার রক্ত নিতে যদি তোমার দুইদিন লেগে যায়, তাহলে তুমি অন্য দাসীদের সাহায্য নিতে পার, দাসদেরও সাহায্য নিতে পার। আর কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাড়াতাড়ি রাজবৈদ্যমশাইকে খবর দেবেই। এই রাজ্যের নিয়ম এটাই। রাজামশাই সবার যত্ন নেন, রাজপ্রাসাদ থেকে খাবার দেন। আর যারা অন্য রাজ্যে খুবই কষ্ট আছে, একদমই কষ্টে, তাদেরকে একদিন বড় একটি ভোজ করে তাদেরকেও ডেকে আনবে, ঠিক আছে? রাজপ্রাসাদ থেকে তাদেরকে খেতে দেবে। আমার বাগানে অনেক অনেক ফল ফুটে রয়েছে। সেই ফলগুলো সব বাড়ি বাড়িতে গিয়ে গিয়ে দিয়ে আসবে। সবজিও আছে। কী সুন্দর করল্লাও হয়েছে! একটা করল্লা আমার জন্য তুলে আনবে। করল্লার যে কী স্বাদ! বাহ! করল্লা বেশিজনকেই দিও। আর শসার তো প্রশ্নই আসে না খারাপ হওয়ার। আমার বাগানের সব জিনিসই খুব ভাল।" দাসী রঞ্জনা বলল, "রাজামশাই! যদি আমি দেখি যে, আপনার বাগানে একটি ছোট্ট বিড়াল না খেয়ে আছে, তাকেও খেতে দিতে হবে, মহারাজ? আপনি যদি বিড়ালকেও খেতে দিতে বলেন, তাহলেই আমি বিড়ালকে অনেক অনেক খেতে দেব।" রাজামশাই বললেন, "অবশ্যই। কিন্তু ইদুরও একটি প্রাণী, ইঁদুর দিবে না। দুধ বা মাছের কাটা দেবে। ইদুর দেবে না। ছোট একটি সাপও যদি না খেয়ে থাকে, তাকেও দিতে হবে। একেকটা প্রাণী একেকবার জিজ্ঞেস করছ কেন, রঞ্জনা? আমি বলেছি সব প্রাণীকেই দেবে।" তখন দাসী রঞ্জনা বললেন, "মহারাজ! আপনি যা বলবেন, তাই করব। কিন্তু মশার যে রক্ত, সেটা খোঁজার জন্য একটু বেশি সময় দিতে পারবেন?" "ঠিক আছে, একটু সময় দেব।" অমনি পাশ থেকে দাসী গোলাপী রাজামশাইকে বলল, "রাজামশাই! আমিও কি আমার বন্ধু রঞ্জনাকে একটু সাহায্য করতে পারি? সে যদি একা সব করে, তাহলে তো বেশি যত্ন নিতে পারবে না একা।" "নিশ্চয়ই! তোমরা দাস-দাসীরা মিলে সব করতে পার। কিন্তু আমার আদেশ যেন অমান্য না হয়।" ঐদিকে রাজ্যে এক ছিল একটি গরীব লোক। সেই গরীব লোকটি এক পয়সাও ছিল না। সে রাজামশাইকে বললেন, "রাজামশাই! আপনি কেমন আছেন? দয়া করে আমাকে একটি গরু দিতে পারলেই হবে। সেই গরু থেকে আমরা সবসময় দুধ খেতে পারি, মহারাজ। আমার একটি ছোট্ট সন্তান আছে, সে তো কিছু পায়ই না। আমি শুধু একটু একটু খুঁজে খুঁজে পাই। সেগুলো থেকে একটু দিতে পারি আমার সন্তানকে। এক দিনে একটি বিস্কুটের টুকরো খেতে পারি। ভালোই লাগে না। আর পানি তো খাই শুধু ছোট্ট একটা বাটিতে একটুখানি পানি থাকে, সেটুকু খেতে পারি।" মহারাজ বললেন, "দাস ইসলাম! তুমি কোথায়? তাড়াতাড়ি এসো। এই গরীব লোকদের তাড়াতাড়ি কিছু খেতে দাও। বহুদিন ধরে না খেয়ে আছে।" সবাই মিলে ঐ দেশে সব কিছু ঠিকঠাক মতো রাখলো। এবং ঐ দেশটিকে একটি সুন্দর দেশ করে তুলল। এমন দেশ, যেন সবথেকে সেরা। এই দেশে আকাশে আকাশে পাখি, নদীতে ভরে যায় পানি, সবাই খাবার পায়, যত্ন করে থাকতে পারে।

শিক্ষা: ভালো কাজ করলে ভালো ফলই পাওয়া যায়। যেমন, ঐ রাজা যে সবার যত্ন নিয়েছে, তাই সে এমন সুন্দর একটি দেশ পেয়েছে। নিজের জিনিস নিজে ভালো করে গড়ে তুলতে পারলেই ভালো।

No comments:

Post a Comment