Friday, September 1, 2017

নেক লোকের স্বপ্ন পূরণ

এক ছিল এক গরীব লোক। সে সৎ ছিল। তার জীবনের শখ ছিল মসজিদের মুয়াজ্জিন হওয়া। কিন্তু সে তো গরীব। এক পয়সাও ছিল না হয়তো। কিন্তু সে জানে, ভিক্ষে করতে হয় না। তাই সে ভিক্ষে করল না। ভাবল কী আর করবে! কিছু কাজের সন্ধান করবে। কিন্তু সেখানে কোন মানুষের বাড়ি ছিল না। আর ২/৩টা থাকলেও খুব রাগী মানুষের বাড়ি। একটু যে বলবে, যাও না, একটা ভাতটা রান্না কর না— তা নয়। বলবে যে, সকাল বেলা কী করতে হয়? বোঝ না কিছু? ভাত রান্নাই করে না! এমন বাড়িতে কী আর এমন কাজ করবে? কাজ করার কি উপায় আছে, বল? একটা ভালো বাড়ি তো দরকার। কিন্তু সে আল্লাহকে ডাকতে শুরু করল। আর জিজ্ঞেস করার জায়গাও ছিল না। মনে মনে আল্লাহকে বলতে লাগল, আমি কী করি? আমার তো কোন উপায় নেই, কি করব আমি এখন? মনে মনে বলার সঙ্গে সঙ্গেই গাছ থেকে একটা ছোট ফল পড়ল। সেই গাছে একটাই মাত্র ফল ছিল। অর্ধেক অংশ খেয়ে দেখল, ভিতরে অনেক বীচি। তার মাথায় একটা বুদ্ধি এল। সে আস্তে আস্তে হাত দিয়েই মাটি খুঁড়তে লাগল। সেখানে একটি ছোট্ট পুকুর ছিল, কিন্তু ছিল না কোন মাছ। সেই পুকুরের পানি খেয়েই কটা দিন সে বেঁচে ছিল। সেই পুকরে থেকেই কিছু পানি নিয়ে মাটিতে ঢালল। এক সপ্তাহ পর সে দেখল, একটি ছোট্ট গাছ সেই বিচির জায়গা থেকে বেরিয়ে আসছে। সে খুবই খুশি হল এই দৃশ্য দেখে। সে মনে মনে আল্লাহকে বলতে লাগল, "আল্লাহ! তোমার জন্যেই আমি এই গাছটি পেয়েছি। তোমার কাছেই আমি কৃতজ্ঞ।" এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে গাছটির কী অদ্ভুত দৃশ্য হলো! গাছটি এক দিনেই খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠল। পরের দিন লোকটি ঘুম থেকে উঠল। দেখল, ছোট্ট ছোট্ট কাঁচা পেয়ারা। সে খুব খুশি হলো। সেখানে আর একটা ওষুধ আবিস্কার হয়েছিল ক'দিন আগে। পেয়ারা গাছের পাতা দিয়ে ওষুধ বানালে নাকি ক্যান্সার সারে। (কাল্পনিক) তাই সে সেদিন একটু সেই ওষুধ বানানোর চেষ্টা করল। ডাক্তারের কাছে সে পাতাই বিক্রি করল। ডাক্তাররা হয়তো নিজেরাই ওষুধ বানাতে জানে। আর সেটা তো সত্যি, নাহলে ডাক্তার হয়? সে পেয়ারা পাতা বিক্রি করে টাকা পেল। সেই টাকা দিয়ে সে সামান্য কিছু ডাল কিনল। সে লাকড়ি, পাথর এসব দিয়ে সেই ডাল জ্বাল দিল। তারপর সেই ডাল খেল। পরের দিন সে দেখল, পেয়ারা একটু বড় হচ্ছে। কিন্তু কাঁচা। এর পরের দিনও সে পেয়ারা পাতা বিক্রি করে একই কাজ করল। তার পরের দিন আবার পেয়ারা পাতা পাড়তে লাগল। দেখল, পেয়ারা কিছু পাকতে শুরু করেছে। আর কিছু পেকেই গেছে। পাকা পেয়ারার দিকে তার নজর পড়ায় সে তা পেড়ে নিল। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করতে লাগল। বলল, "আলহামদুলিল্লাহ!" সে এগুলো বিক্রি করতে নিয়ে গেল বাজারে। শত শত মানুষের ভিড় পড়ে গেল। কারণ, সেই পেয়ারা দোকানের অন্য সব পেয়ারার মদ্যে সবচেয়ে ভালো ও মিষ্টি। অদ্ভুত না? তারপর সে প্রতিদিন এমন কাজই করে। আর টাকা পেয়ে পেয়ে ভাত আর ডাল জোগাড় করে। লাকড়ি দিয়ে তা রান্না করে খায়। কিছু কিছু দিন পেয়ারাই খায়। আস্তে আস্তে সে বেশি গরীব রইল না। তারপরে সে একটু কম গরীব। কিছুদিন পর সে গরীবই রইল না। সে একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন হতে চাইল। একটা নতুন মসজিদ তৈরি করতে চাইছিল সে নিজেই। কি করে তৈরি করবে? এই ভাবতে ভাবতে সে অন্য একটা জায়গায় গেল। দেখল একটা মরা গাছ। মরা গাছের কাঠ কি ভালো হয়? সে হাত দিয়ে দেখল, কাঠটা ভালোই আছে। সে কাঠ নিয়ে গেল। একটা ভালো জায়গা খুঁজে বের করল। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইল। বলল, "আল্লাহ! আমি শুধু পেয়ারা বিক্রি করে কি করে মসজিদ তৈরি করব? তুমি আমাকে শক্তি দাও, কোন উপায় বলে দাও।" দেখল একটি আপেল গাছ তৈরি হয়ে গেল এক সেকেন্ডের মধ্যে। পিছনে ঘুরে দেখল একটি আপেল গাছ। সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করল। সে গাছে আবার already অনেকগুলো আপেল। পাকা আপেল, কাঁচা আপেল, ছোট আপেল, বড় আপেল, মাঝারি আপেল। আপেলগুলো সে বিক্রি করতে নিয়ে গেল। অনেক অনেক টাকা জমল। তা দিয়ে সে লোহা, হাতুড়ি এসব কিনল। সে এক সপ্তাহের মধ্যেই মসজিদ বানিয়ে ফেলল। তারপর রঙ করল। হয়ে গেল একটি সুন্দর মসজিদ। সে একটি কার্পেট কিনল। কিছু সাদা কাপড় কিনল।  বিছিয়ে দিল সেগুলো সুন্দর করে। অনেক অনেক মানুষ সেখানে আসল নামায পড়তে। সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে লাগল। এতে আরো মানুষ সেখানে এসে হাজির হল। সে মুয়াজ্জিন হয়ে গেল। একজন ভালো মানুষ দেখে ইমাম বানালো, তার জীবনের লক্ষ্য পূরণ হলো। সে অনেক বার আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করল। অনেক করে বলল, "আলহামদুলিল্লাহ!"

শিক্ষা: আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোন কিছুই হয় না। আর আন্তরিকতা ও শোকর থাকলে আল্লাহর সাহায্য পাওয়া যায়।

No comments:

Post a Comment