Thursday, October 12, 2017

গোঁফখেজুরে মহিলা

এক ছিল এক লোক। সে খুব ভালো ছিল। কিন্তু তার বউ খুব অলস ছিল। অলস হলেও কোন কিছুর লোভ ছিল না। এমনকি টাকার লোভও না। সে চাকরী নিতেই চাইছিল না। কিন্তু তার স্বামী তাকে বারবার বলছিল, "চাকরী না নিলে আমার চাকরীর টাকা দিয়ে তোমাকে খেতেই দেব না। এত অলসতা ভালো নয়। ঝগড়া করে বলছি না। অলসতা তো ভালো নয়, তাই তোমার ভালোর জন্যই বলছি। যদি চাকরী না নাও, আমি কিন্তু সত্যি রাগ করে আমার টাকা দিয়ে তোমাকে খাওয়াব না।" বউ বাধ্য হয়ে চাকরী নিল। সে এমন চাকরী নিল, যেখানে শুধু বসে থাকতে হয়, আর কিছু গল্প-বক্তৃতা শুনতে হয়। যে বক্তৃতা দেয়, সে শেষে গিয়ে সবাইকে একটাই প্রশ্ন করে, কি বিষয়ে আমি কথা বললাম। বউটি শুধু প্রথম দিকের গল্পের নামটা শোনে, আর কিছুই শোনে না। আর শেষে গিয়ে নামটা বলে। কিন্তু সে এতই অলস ছিল যে, চাকরীর টাকা নিয়ে একটু চাল কিনে যে রেঁধে খাবে, তাও চাইত না। তার বাসার নিচেই ছিল এক হোটেল, যেই হোটেল থেকে খাবার উপরে উঠিয়ে দেয়া হতো। সে যে ফোনে একটু কল দেবে, তাও সে চাইত না। সে তার ঘরের কাজের বুয়াকে বলল যে, ঐ জায়গাটাতে চাপ দিয়ে আমার কানে ধরিয়ে দাও। কাজের লোক তা কানে ধরিয়ে দিল। বউটা ফোন করল। ফোন ধরল একজন বাবুর্চি। সে বউ বলল, "শোন! আমি তোমাকে আমার পুরো বেতনের টাকাটা দেব। তুমি শুধু খাবারটা রেঁধে উপরে নিয়ে এসে আমার মুখে তুলে খাইয়ে দেবে।" বাবুর্চি তো রেগেমেগে অস্থির! উপরে গিয়ে আবার নিজের হাতে খাইয়ে দিতে হবে! কিন্তু বাবুর্চির আবার টাকার লোভ ছিল। সে ভাবল, "তার নিজের পুরো বেতনটাই দিয়ে দেবে বলছে। প্রত্যেকদিন না হয় ঘন্টা খানেক সময় একটু নিয়ে গিয়ে খাইয়ে দিয়ে আসব। কিন্তু হোটেলের মাস্টারকে কি বলব? সত্যি কথাটাই বরং বলে দেই। মাস্টার তো আমাকে সবসময় পছন্দ করে। সে নিশ্চয়ই আমাকে যেতে দেবে।"- এই ভেবে সে হোটেলের মাস্টারকে গিয়ে বলল, "ওস্তাদ! ভালো একটা অর্ডার পেয়েছি। একেবারে তার পুরো বেতনটাই দিয়ে দেবে, যদি আমি সেই মহিলাটির বাড়ি গিয়ে তাকে খাইয়ে দিয়ে আসি।" মাস্টার তখন একটা বড় হাড়িতে অনেক বড় একটা ডাল ঘুটনি দিয়ে ডাল রাঁধছিল। মাস্টার রেগে গিয়ে বাবুর্চিকে ডাল ঘুটনি দিয়ে পাছায় বাড়ি দিল। বাবুর্চি বলল, "এ কী ওস্তাদ! মারছেন কেন? আমি না হয় কিছু টাকা আপনাকে দেব। একটু অনুমতি দিন না!" তখন মাস্টার বলল, "ঠিক আছে, কিন্তু আমাকে এর অর্ধেকটা দিতে হবে। আর তোকে আমি এ মাসের বেতনটা দিতে পারব না। আর যদি রাজি না হোস, তো তোকে আমি ঐ বাড়িতে যেতেই দেব না।" বাবুর্চি ভাবল, "হায়রে আমার কপাল! একে তো উপরে গিয়ে তাও আবার মহিলা মানুষকে খাইয়ে দিতে হবে। তার উপর আবার বেতন কেটে নেবে, অর্ধেক টাকা নিয়েও নেবে। আমার কপালটা কি খারাপ? তাও তো আমার কাছে একটু বেশি টাকা থাকবে।" সে তার ওস্তাদকে বলল, "ঠিক আছে, ওস্তাদ! আমি রাজি।" মাস্টার তো খুবই খুশী। সে তাকে যেতে দিল। বউয়ের স্বামী তখন ঘরে ছিল না। সে তার বেতনের অর্ধেক প্রত্যেক মাসে গরীবদের দিয়ে দিত। সে সেই কাজেই ব্যস্ত ছিল। বাবুর্চি তখন কলিং বেল দিল খাবার নিয়ে এসে। কাজের লোক দরজা খুলল। সে বাবুর্চিকে ভেতরে আসতে বলল। আর বউয়ের ঘরে যেতে বলল। বউ তখন পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিল। বাবুর্চি তাকে ডাক দিল। মহিলাটি ঘুমের মধ্যে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে বলল, "যা খাবার এনেছ; পাশেই ব্লেন্ডার আছে, ব্লেন্ড করে ফিডারে ভর। তারপর আমাকে ঘুমের মধ্যে খাইয়ে দাও। আমার ব্যাগের ভিতরে ডেস্কের চাবি আছে। বেতনটা নিজেই নিয়ে নাও। পরে প্রতিদিন খাইয়ে দিও। পরের মাসে আবার বেতন দেব। আর এর পরের দিন থেকে হোটেলের ফিডারে করেই সবজির জুস এনে আমাকে ঘুমের মধ্যে খাইয়ে দেবে। ব্যস, সমস্যা মিটে গেল! আমার এত কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। যা যা বললাম, তাড়াতাড়ি কর তো! আমি ঘুমিয়ে যাই, ঘুমের মধ্যে খাইয়ে দিও।" তারপর বাবুর্চি বলল, "ঠিক আছে।" আর মনে মনে বাবুর্চি বলল, "ঠিক আছে, বাবু!" তারপর সে জুস বানিয়ে ফিডারে ভরল। তার আবার ফিডারে কাউকে খাওয়ানোর অভ্যাস ছিল না। তার বোনের বাচ্চা হওয়ার সময় কিছুদিন তাকে ফিডারে খাইয়েছিল, সেই অভ্যাসমতই মহিলাটিকে 'আয় ঘুম আয়' গান গাইয়ে গাইয়ে ফিডার খাইয়ে দিল। তারপর সে তার মাস্টারের কাছে গেল। এমনই চলতে থাকল।
তখন শীতকাল ছিল। সেই সময় বাংলাদেশেও হালকা বরফ পড়তে লাগল। বাংলাদেশে তখন গরীব মানুষের সংখ্যা একটু বেশি ছিল। শীতে যারা ধনী ছিল, তাদের ধনও একটু কমে গিয়েছিল শীতের কাপড়, শীতের খাবার এসব কিনতে গিয়ে। তাই তারা কাউকে ভিক্ষে দিতেই চাইত না। অনেক মানুষই গরীব। বাচ্চারা ব্রিজের নিচে আশ্রয় নিচ্ছিল, কিন্তু ব্রিজের সামনের পাহারাদাররা তাদের তাড়িয়ে দিচ্ছিল। মহিলার স্বামী ভাবল, এ অবস্থায় নিশ্চয়ই সাহায্য করা দরকার। আমি তো অনেকদিন আগে একটা ফাঁকা জায়গা কিনেছিলাম। তখন তো ভেবেছিলাম যে, কত বলদের মত কাজই না করেছি। কিন্তু এখন জায়গাটা কাজে লাগবে। সবাই শুনেছে এতিমখানা। কিন্তু এবার আমি বানাবো সবরকম গরীবরা থাকবে এমন গরীবখানা। সে অনেক বড় একটা বাড়ি বানালো। সে অনেক কার্পেট কিনল। একটা বড় ঘরে সেইসব কার্পেট বিছিয়ে দিল। মানে সেটা বানালো গরীবদের শোবার ঘর। একটা বড় ঘরে অনেক বড় একটা পাটি আর ছোট ছোট মাদুর সাজিয়ে রাখল চেয়ার-টেবিলের মত। সেটা হলো গরীবদের খাবার ঘর। আর আরেকটা ঘর পুরো ফাকা রাখল। সেখানে সে অনেক চাল, ডাল আর আলু এনে রাখল। আরেকটা ছিল ঘর। সেই ঘরে সে উনুন বসালো। আর বড় হাড়ি কিনল। আর চারপাশে অনেক কলাগাছ লাগালো। সে একজন লোক রাখল গরীবদের দেখাশোনা করার জন্য আর গরীবদের সবরকম প্রয়োজনে সাহায্য করার জন্য। আর পাশে একটা পুকুর ছিল, সেখানে সবাই স্নান করতে পারবে। কলাগাছ লাগালো, কারণ কলাপাতা কেটে কেটে প্লেটের মত করে গরীবদের দেয়ার জন্য। পরের দিনই সে মাইকে করে এই খবর সবাইকে জানিয়ে দিল। যাদের যাদের খুব খারাপ অবস্থা, তারা তারা সেই লোকটির কাছে এল। তারা বলল, "দয়া করে আমরা কি আপনার এই গরীবখানায় থাকতে পারব?" তখন লোকটা বলল, "তোমাদের জন্যই তো বানিয়েছি। তোমরা থাকবে না তো কারা থাকবে? নিশ্চয়ই যাও। ঐদিকে শোবার ঘরে গিয়ে বিশ্রাম নাও। আর আমার এই লোকটি তোমাদের দেখাশোনা করবে। এই লোকটি যখন তোমাদের ডাক দেবে, তখন তোমরা ঐ খাবার ঘরে চলে যাবে। লোকটি তখন ভাত আর ডাল রান্না করল। তারপর সেইগুলো পাটিতে সাজিয়ে দিল। গরীবরা পেট ভরে খেল। ওখানেই গরীবরা থাকতে লাগল। 

No comments:

Post a Comment