Saturday, February 10, 2018

মাখন-রুটি

এক ছিল এক গরীব পরিবার। তারা এক গ্রামে থাকত। পরিবারে ছিল মা-বাবা আর দুটি সন্তান। একটি মেয়ে ও একটি ছেলে। মেয়েটির নাম মিতা এবং ছেলেটির নাম ফারহান। তাদের বাবা মারা যাওয়ার পর তাদের মাকেই সব কাজ করতে হতো। তারা অনেক গরীব ছিল। তাদের বাড়ির আশেপাশে অনেক গোলাপ গাছ ছিল। তার মা গোলাপ দিয়ে মালা গেঁথে সেগুলো বিক্রি করত। তা দিয়ে যা টাকা পেত, তা দিয়ে এক বেলা কোনমতে চালিয়ে নিত। একদিন ফারহান ও মিতা দু'জনেই জেদ ধরল, মাখন-রুটি খাবে। মাকে তারা একথা বলল। মা শুনে ভীষণ রেগে গেল। মা বলল, "এক বেলা দু' মুঠো ভাত জোটে না, আর সে খাবে মাখন রুটি! কাণ্ড দেখ। এমনি পোড়া ছেঁড়া রুটি পাই না, তা আবার মাখন সহ রুটি। এখন যা তো তোরা। বড়লোকি আবদার আর করিস না। যা, পারলে তোরাও মালা বানাতে বস আমার সাথে। সাহায্য করবে না, শুধু জেদ করবে।" মিতা ও ফারহান রাগ হয়ে গেল। কিন্তু মার সাথে তো আর তারা অমন করে বলতে পারে না। কারণ, তারা ছিল নরম মনের। তাই তারা আর মাখন-রুটি খাওয়ার জেদ করল না। আর মাকে মালা গাঁথতে সাহায্য করল। কিন্তু বারবার তাদের মনে মাখন-রুটি খাওয়ার ইচ্ছেই তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। একদিন ফারহান মিতাকে বলল যে, "এই মিতা! মাখন-রুটি খাব।" মিতা বলল, "আমি কি করে মাখন-রুটি দেব? তুমি আমার থেকে বড় না? তুমি আমাকে মাখন-রুটি দাও। তুমি উল্টোটা বলছ কেন?" ফারহান বলল, "আমি কি করে মাখন-রুটি দেব? বড়দের কথাও তো একটু ভাবতে হয়।" তখন দু'জনে তর্ক করা শুরু করল। আর মা এসে বলল, "এত ঝগড়া করছিস কেন? বলেছিলাম না, এত বড়লোকি আবদার নিয়ে আর একটা কথাও হবে না? এই কথা যদি আর একবার মুখে এনেছিস! টাকা একটু বেশি পেলে পেট ভরে ভাত খাওয়ার আয়োজন করি। আর একদিন ফারহান এসে বলে কিনা, টাকা বেশি হলে নাকি মাখন-রুটি কিনে খাওয়াতে হবে। মাখন-রুটি এমন কি জিনিস! আর যদি এর কথা বলেছিস, তো আর খাবারই দেব না। আয়, আমাকে সাহায্য কর।" তারা দু'জন আবারও রাগ হয়ে গেল। এরপর মিতা একদিন ফারহানকে বলল, "মাখন-রুটি খেতে হলে মার কাছে চাইলে হবে না। আমাদের টাকা বেশি করার চেষ্টা করতে হবে।" ফারহান বলল, "পাগল হয়ে গেছিস? সেদিন মা কি বলল, শুনলে না? মা বলল, বেশি টাকা হলেও মাখন-রুটি দেবে না।" তখন মিতা বলল, "একটুখানি বেশি হলে তো দেবে না। কিন্তু যদি অনেক অনেক বেশি টাকা হয়, তাহলে তো একটু আধটু মাখন-রুটি কিনে দিতেই পারে।" ফারহান বলল, "আমি তোর সাথে কাজ করতে চাই না। কারণ, কোন আকাম ঘটলে মা আমাকেই আগে বকবে, কারণ আমি বড়। আমি দেখি, মাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে মাখন-রুটি আনাতে পারি কিনা। তোর যা ইচ্ছা তাই কর।" মিতা আর ফারহানের কথায় কান দিল না। সে নিজেই টাকা উপার্জনের চেষ্টায় নেমে পড়ল। সে এখন ভাবতে বসল, কি করে বেশি টাকা আয় করা যায়। মা তো দুটো ফুল দিয়ে একটা মালা গাঁথে, আর তাতে কতই বা টাকা পাওয়া যায়? দশ, বিশ এমনই তো পাওয়া যায়। এ দিয়ে কোনমতে দু'মুঠো চাল পাই। এর থেকে বেশি করলেও হবে না, অনেক বেশি করতে হবে। কি করা যায়? মিতা আবার পাঠশালার বাইরে বসে বসে অন্য ছাত্র-ছাত্রীদের পড়া শুনত, আর তার সাথে সাথে সেও পড়া শিখে গিয়েছিল। ছাত্র-ছাত্রীরা কি লেখে, তা দেখে লেখাও পড়তে শিখে গিয়েছিল। কারণ, সে পড়ালেখায় আগ্রহী ছিল। সে একটা সাইনবোর্ডে লেখা দেখল, কাজের লোক চাই। ছুটা হোক, বা বান্দা হোক। বেশি কাজ করলে বেশি টাকা পাবে। এক কাজের জন্য এক হাজার টাকা। এই শুনে মিতা খুশি হলো। কারণ, সে কাজও ভাল করতে পারত। সে ঐ সাইনবোর্ডের পাশ দিয়ে ঘুরতেই থাকল। সে ভাবল, যদি কোন মানুষের দেখা পাওয়া যায়, তাহলে তাকে জিজ্ঞেস করবে। হঠাৎ এক লোক ঐ সাইনবোর্ডটার কাছে আসল। সেই লোকই ছিল সে, যার কাজের লোক দরকার। মিতা তাকে নিজের কাজ করার ইচ্ছার কথা জানালো। এ শুনে সেই লোকটাও খুব খুশি। সে বলল, "ছুটা, নাকি বান্দা হয়ে কাজ করবে?" মিতা বলল, "সপ্তাহে কোনদিনই আমার ছুটি চাই না। আমি তিনদিন ছুটা কাজ করব, আর বাকি চারদিন বান্দা কাজ করব। কোন্‌ দিন, সেটা আপনার ইচ্ছায়ই হবে।" লোকটা খুবই খুশি। অন্তত চারদিন তো বান্দা হয়ে কাজ করবে! এরপর মিতা ৫ হাজার টাকার কথা বলল। বলল, সে পাঁচটি কাজ করবে। ঘর ঝাড়ু দেওয়া, ফ্যান মোছা, ঘর মোছা, রান্না করা এবং কাপড় ধোয়া। এক মাস কাজ করার পর সে পাঁচ হাজার টাকা পেয়ে গেল। এরপর সে একটা দিন ছুটি চাইল। ওদিকে তার ভাই ও মা তো খুব অস্থির। মেয়েটা কোন্‌ ফাঁক দিয়ে কোনখানে চলে গেল, তার ঠিক আছে? মা বলল, "এই ফারহান, মিতাকে ভালো করে খুঁজে দেখেছিস তো? তা তো দেখেছিস। কিন্তু মিতাকে যখন পাওয়া যাচ্ছিল না, তার আগে মিতা কি সম্পর্কে তোকে শেষ কথা বলেছিল? মাখন রুটির কথা নাকি? তাহলে নিশ্চয়ই মাখন-রুটি খুঁজতে গিয়েছে।" ফারহান বুঝতে পারল যে, সে টাকা আয় করতে গিয়েছে। কিন্তু সে মাকে জানালো না। সে বলল, "তাই হবে। মিতা নিশ্চয়ই মাখন-রুটি খুঁজতে গিয়েছে। কিন্তু এক মাস ধরে কেন?" এক মাস পর একদিন ছুটি চাইল মিতা। এরপর সে দৌড়ে তার বাড়ি গেল। মা তাকে দেখে তাড়াতাড়ি মিতার কাছে গেল। সে জিজ্ঞেস করল, কোথায় ছিলি তুই? তোকে আমি মাখন-রুটি সব কিনে দেব। তুই আর কোথাও যাবি না।" ফারহান বলল, "দেখ কাণ্ড! মিতা বাইরে গিয়েছিল আর ফিরে এসেছে বলেই তাকে মাখন-রুটি দিতে হবে? তাহলে আমিও একবার বাইরে গিয়ে এক মাস পর আবার চলে আসব।" মা একথা শুনে বলল, "আবার লোভ করছিস নাকি? তুই তো সেদিন একটা ধনী লোককে দেখেছিস, মোবাইলে দেখছে। আর তাতেই তো দেখলি, একটা কার্টুনে দেখাচ্ছে, সুখু আর দুখুর গল্প। সেখানে কি হয়েছিল, মনে নেই? লোভ করলে কি হয়, জানিস না?" তখন ফারহান বলল, "ধূর বোকা, এমনি বলেছি। তাহলে আমাকে মাখন-রুটি দেবে তো?" মা বলল, "ঠিক আছে, সবাইকে দেব। কিন্তু টাকা পাব কোথায়? আজ যা টাকা এনেছি, তা দিয়ে তো একটুও হবে না।" মিতা বলল, "কে বলেছে? তুমি না হয় দশ টাকা আয় করেছ। কিন্তু আমি যে পাঁচ হাজার টাকা আয় করেছি।" মা খুব অবাক হয়ে গেল। সে বলল, "মানে? কী বলছিস তুই? পাগল হয়ে গেছিস নাকি?" মিতা তারপর পাঁচ হাজার টাকা দেখালো মাকে। মা বলল, "এই, তুই আবার চুরি করেছিস নাকি? অসৎ পথে টাকা উপার্জন করলে আমি কিন্তু এ টাকা ছুঁড়ে ফেলে দেব।" মিতা বলল, "পাগল হয়ে গেছ? আমি চুরি করতে যাব কি করতে? তুমি তো জানই, আমি কেমন মানুষ। জান না বুঝি?" এরপর সে পুরো ঘটনাটা মাকে বলল। মা বলল, "আমাকেও ঐ মালিকের কাছে নিয়ে চল। আমিও কাজ করব। আর ফারহানকে ড্রাইভার বানানোর চেষ্টা করব। ঐ বাড়িতে যদি কোন গাড়ি না থেকে থাকে, তাহলে ....." বলতে না বলতেই মিতা বলল, "আমি দেখেছি, কোন গাড়ি নেই ওখানে। গাড়ি না থাকলে কি করবে, সেটা বল।" মা বলল, "তাহলে ফারহানকে ঐ ড্রাইভার বানাবো। আর একটা গাড়ি কিনতে বলব।" মিতা বলল, "ঠিকই বলেছ। তাদের ড্রাইভারের অভাব দেখেই গাড়ি কেনেনি।" মা বলল, "তাহলে তো ভাল উপার্জন হবে।" এরপর তারা সবাই মিলে তাদের সব আবেদন মালিকের কাছে বলল। মালিকও খুশিমনে রাজি হয়ে গেল। আর মালিকই ওদের অনেক মাখন-রুটি কিনে দিয়ে দিল। এরপর তারা অনেক কাজ করল এবং অনেক টাকা আয় করল। এবং তা দিয়ে শেষে তারা কাজ করা বন্ধ করে দিল এবং তারা নিজেরা একটি মাখন-রুটির কারখানা দিল। আর তাদের উপার্জন আরো ভালো হতে লাগল এবং সুখে-শান্তিতে তাদের জীবন কাটতে লাগল।

No comments:

Post a Comment