Saturday, February 21, 2015

বুদ্ধি

এক ছিল এক রাজকন্যা। তার নাম রুপালী। আর তার একটি ছোট বোন ছিল। তার নাম সোনালী। সোনালী ছিল খুব বুদ্ধিমতী। আর রুপালী ছিল আরো কম বুদ্ধিমতী। একদিন রুপালী বাহিরে বের হয়ে তার ঘরের বাইরে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকল। একটু পরেই সে ডাকল: সোনালী! সোনালী! একটু আয় তো বোন। তুই আস আমার কাছে। একটু বাইরে বাগানে ঘুরতে যাব। সোনালী এসে পড়ল। আর রুপালীর মতলব ছিল যে, সোনালী তো আমার থেকে একটু বেশি চালাক। একে একটু শাস্তি দিতে হবে। আর কি করে তাকে শাস্তি দেয়া যায় তা ভাবছিল সে। তখনই এসে পড়ল সোনালী। "কি গো রুপালী, আমায় ডাকছিলে বুঝি? তো চল, বাগানে যাই।" তখন সে বলল, "আরে আরে, চল।" "হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমি আসছি। কোন আবার মতলব-টতলব নেই তো?" বলে, "না না না না, তোকে মতলব আটলে আমি মারার মতলব আটব। কিন্তু আমি কি তোমাকে মারতে পারি? তুমি না আমার বোন।" "আরে ঠিক বলেছ রুপালী, তুমি একটা কিছু একটা মতলব করতে।" "না না, আমি মতলব করব না, মতলবের কথা ভাবছিও না, শুধু চুপটি করে বসে আছি।" "আমি জানি, তুমি চুপটি করে বসে থাকনি। কি ভাবছিলে সেটি বল।" "আমি ভাবছিলাম, আমরা দু'জন বেশি বেশি মায়ের কথা শুনে পরীক্ষায় সবার আগে লেখা শেষ করে ফেলব, মিস আমাদের বেশি আদর করবে, সে কথা ভাবছিঝলাম।" "ঠিক আছে, ঠিক আছে, এখন এত হুড়োহুড়ির কি আছে? চল যাই বাগানে।" আসলে সেই বুদ্ধিমথী মেয়েটি জানত, সে তাকে মারারই কিছু মতলব আঁটছে। তাই সে এখন মনে করল, আর একবারও ঐ রূপালীর কিছু কিথা বললে শোনা যাবে না। আর আমাকে না জানিয়ে কিছু দিয়ে দিলে সেটা নেব না। নিলে আমি ঘুষ খাব। এই ভাবতে ভাবতে সে চলল। রুপালী বলল, "কি গো, মাঝখানে আবার একটু দাড়িয়ে রয়েছিলে কেন?" "হ্যা মানে আমি ভাবছিলাম কিছুই না। ভাবলেও আমি তোমাকে আদরের কন্যার মত আদর করার কথা ভাবছি।" "এটা আবার কেমন কথা গো! প্রথমে বলছিলে ভাবছি না, এখন আবার বলছ আদরের কথা ভাবছি। এ কোমন কথা বোন? তাহলে তুমি শুরুতে বললে কিন যে, আমি কিছু ভাবছি না?" "এই যে, বোকা, এখন পা চালা। নাহলে বাগানে ঘুরে বেড়ানো হবে না।" হঠাত সেই মেয়ে রুপালী একটা ফন্দি আটল। তাকে কিছু খেতে দিবে। তারপর বলবে ঘুষ খেয়েছ। এরপর সে নিশ্চয়ই ঘুষ খাওয়ার খতা শুনে আমার মত কাজ করবে। এটা ভাবল সে। সে একটা ফল নিল বাগান থেকে। ও একটি সুন্দর গোলাপ দিয়ে বলল, "নাও সোনালী, তুমি যে আমার বোন। সেজন্য এটা দিলাম তোমায়। তুমি যখনই এইগুলোর উপর ছোয়া লাগিয়ে বলবে যে, তুমি আস বোন রুপালী, তখনই আমি দেখা দেব।" তখন সে বুঝে গেল। রুপালী মানুষ, সে কিছুই বুঝতে পারবে না আমি ডাকলে। আর তাছাড়া ও তো সাধারণত ঘর থেকে বাইরে বের হয় তো না। তখন তার পরের দিন যা ঘটার ঘটল। এই নাকি হয়। সে সেই রুপালী আবার দৌড়ে বাগান ছেড়ে বাইরে মানুষের ঘরে খুঁজতে লাগল, কোথায় গিয়ে আশ্রয় নিলে আমার বোন কোথায় গেলে খুজে না পায়, যাতে ও কষ্ট পাবে। সেই রুপালী একটি ঘর খুঁজতে খুঁজতে তার মাথা আউলিয়ে পথ হারিয়ে অন্য দিকে চলে গেল। দেখল ঘন বন। একি, আমি তো পথের মধ্যে একটি নদী দেখলাম। তবে কি আমি সুরমা নদী পদ্মা নদী পেরিয়ে সমুদ্রের কাছে এসে ঘন বনে ঢুকে গেলাম? তাকে আমি শাস্তি দিতে কেন গেলাম? না এ হতে পারে না। আমি কেন ওকে শাস্তি দিলাম? হায় সর্বনাশ! এখন আমি পথ না চিনে কোন্‌ দিকে যাই? এখানে তো দশটি রাস্তার পথ। কোন দিকে যাব? পথ হারিয়ে পথ খুজতে খুজতে তো আরো দশ দিন গড়িয়ে যাবে। আর ততদিনে পেটে কিছু না পড়লে আমি বাঁচব কি করে। আমি তো ছোট। মাত্র ছয়/সাত বছর। রাস্তায়ই হাটতে পারি না। আমি এখন কেন এখানে আসলাম? বুঝতে পারছি না। কেউ আছ, কেউ আছ, আমাকে সাহায্য কর। বলে সে চেচাতে লাগল। আর ঐ দিকে সোনালী তো আরামেই থাকছিল যে, আমাকে ঠকাতে চায় আমার বোন। এবার দেখবে মজা। নিশ্চয়ই পথ হারিয়েছে। কিন্তু আমার বাবা এসে গেলে রূপালী রূপালী করে খুজে আমার ঘাড়টাই চমকে দেবে। যাই, বোনের খোজে বের হয়ে যাই। সে বোনের কাছে যাবার জন্য দশটি নদী পার হল। আসলে সে তোর বোনকে দেখতে পায়নি পথের মাঝে। আসলে সে বোন যেখানে আছে সে জায়গা ছেড়ে অন্য দিকে চলে গেল। তারপর সে আবার উল্টো দিক ঘুরল। তখন বলল, "রুপালী, বোন। তুমি কি আমার কাছে এসে আমাকেই ঠকাতে চাচ্ছিলে? কেন বোন? আমি না তোমার বড় বোন, সোনালী। আমি এখনই বাবার কাছে বলে দেব, রুপালী আমাকে ঠকাতে যায়। আর যেসব অঘটনের কথা বাবাকে বলা যাবে না সেগুলোও আমি বাবাকে বলে দেব।" "না, এটা তুমি বলো না। বললে বাবা আমার হাত চমকে দেবে। সে তো এক চাষী। কিন্তু তুমি একবারও বলবে না বাবার কাছে এ কথা।" তখন সে তার কাছে অনেক মাফ চাইল। বলল, "না বোন, তুমি আস। ঘরে চল। বাবা এসে আমাদের না দেখতে পেলে সে না কতই পাগল হয়ে যাবে। আর তখন তার পর আমাদের দেখলে আমাদের সে ঘাড় মটকে দেবে। বলবে, কেন তোরা গিয়েছিস ঐ ঘরে? এখন তো মাইর তোদের খেতেই হবে। এটা বলবে। চল যাই।" এ বলে তারা চলে গেল ঘরে। তার বাবা এসে লক্ষ্মী মেয়ে বলে আদর করে দিল। সব ঘটনা বলার পর সে বলল, "আর কখখোনো করবে না, রুপালী। আর এরকম কক্ষেণো করবে না সোনালী। সোনালী! তুই কেন রুপালীকে বাচ৭াতে গিয়েছিলে? রূপালী তো শুধু দুষ্টুমি করে। সবাইকে ঠকাতে চায়। যাই এখন আমি রুপালীকে একটু বকাঝকা করে আসি। তারপর সব কথা শুনব।" এ বলে বাবা রুপালীকে গিয়ে বকাঝকা করল।

শিক্ষা: কখনো কোন চালাক মানুষকে বুদ্ধিওয়ালা মানুষকে লোভ করলে তাকে ঠকাতে চাইলে নিজেরই শাস্তি পেতে হয়। আর তোমরা কখনোই এরকম কাজ করো না। আর রুপালীর মতো কোন কাজও করো না। লক্ষ্মী মেয়ের মত স্থির হয়ে থাকবে। কখনো রুপালীর গল্পটি পড়ে সেই মত কাজ করা শিখে ফেলবে না।

No comments:

Post a Comment