Monday, February 8, 2016

টুপির গল্প

এক মেয়ের ছিল এক অদ্ভুত টুপি। টুপিটি দেখতে খুবই সুন্দর। যখন কোন বিপদে পড়বে, ভেবে ভেবে বিপদটি নিয়েই একটি ছন্দ বলবে আর টুপিটি পড়বে। তাহলেই টুপিটি বিপদে সাহায্য করবে। কারণ, তার ছন্দ শুনতে খুব ভাল লাগে। ছন্দ শোনা তার অনেক প্রিয়। এই টুপি দোকানদারের কাছেই ছন্দ শুনতো। এরপর তো মেয়েটি কিনে নিল টুপিকে। একদিন মেয়েটি বড় হয়ে গেল। অনেক বড়। তার বয়স হল ২৫। তাকে বিয়ে দেয়ার সময় হয়ে গেল। সেখানে একটা অদ্ভুত কাণ্ড ঘটেছে। সেখানে বিয়ে করার জন্য বর কম ছিল, আর কনে বেশি ছিল। সবাই আগে আগে বিয়ে করে ফেলেছে। আর একটা লোক ছিল বিয়ে করার জন্য। কিন্তু সে মেয়েটিকে পছন্দ করছিল না, আর মেয়েটিও ছেলেটিকে পছন্দ করছিল না। কারণ, ছেলেটি খুব কালো। ঘরে তেমন ভাল কিছুও নেই। তাকে বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতে গেলে তার বাড়িতে তো কিছু নেই, তাই তারও তো কষ্টে থাকতে হবে। তাই দু'জনের কেউই দু'জনকে পছন্দ করল না। এখন তো একটা বড় বিপদে পড়েছে। তার দাদী তাকে বলে গিয়েছিল, বিয়ে করতে বেশি দেরি করলে আমি কিন্তু রাগ করব। আর তোমায় বকাও দেব। মহাবিপদ কেন জান? মেয়েটি তার দাদীর সব কথা শুনত। একটি কথা না শুনলে সবার কাছেই সেই কাজটা খুব অপমানের হবে। তখন তার একটুও ভাল লাগবে না। তার না ভাল লাগাটা একটুও পছন্দ না। সুন্দর টুপিটিকে হাতে নিয়ে ভেবে ভেবে ছন্দ খুঁজছিল। 
"বিয়ে করতে পারছি না-
বর এনে দাও না।
ছন্দ শোনাবো ছন্দ শোনাবো-
একটু খুঁজে দেখ গো।"
এই বলার সাথে সাথে টুপি খুশী হয়ে বলল, "এক মিনিটের মধ্যেই আমি বর খুঁজে আনছি।" টুপি তো আর তেমনভাবে বলতে পারে না। টুপি যতটুকু পারে ততটুকুই একটু বলল। পরে সে সন্ধান পেল এমন সুন্দর একটি ছেলেকে, যাকে দেখে ছবি না তুলে তার (টুপিটার) একটুও ভাল লাগছিল না। টুপি আবার গিয়েছিল একা। টুপি কি করে গিয়েছে জান? তখন আবার একটু ঝড় ঝড় ছিল। ঝড়ে একটু বাতাসে আর নিজের একটু শক্তি দিয়ে সে আমেরিকায় গিয়ে একটি খুঁজে পেয়েছিল। সে কেমন দেখতে জান? কাল কাল চুল, গায়ের রং দুধের মতন, রাজকুমারের মত পোশাক-আশাক, প্রতিদিন মেকাপ-টেকাপ, ক্রিম-ট্রিম লাগিয়ে অনেক সুন্দরভাবে সাজে, আর তাড়াতাড়ি যাতে তাকে সুন্দর দেখায় তাই সে সাড়ে এগারটার দিকেই গোসল করে। গোসল আবার করে ভাল সাবান ও শ্যাম্পু দিয়ে। হাত-পায়ে তেল মাখে, কী সুন্দর সুন্দর শার্ট-প্যান্ট! মেয়েটির নাম ছিল জোছনা। টুপিটি ভাবল, "এটাকে যদি আমি জোছনাকে উপহার দেই, সে খুব খুশী হয়ে আমাকে অনেক ছন্দ শোনাবে। এটা আমি ওকে সরাসরি দেব না। এটাকে আমি উপহার দেব। কি করে দেব, তা তো ভেবেই রেখেছি।" টুপিটি গেল ছেলেটির কাছে। ছেলেটির নাম ছিল মধু। মধুকে ডেকে বলল, "একটা কথা শোন ভাই। আমাকে তোমার ঘরে নিয়ে চল। তারপর কিছু কথা বলব।" মধু তো টুপিকে দেখেই চমকে গেল। সে বলল, "ও রে বাবা! টুপি আবার কথা বলে। এটা আবার কি গো! টুপির মধ্যে আবার প্রাণ দিল কে?" টুপি বলল, "ভয় পেয়ো না। আমি একটি অদ্ভুত টুপি। আমাকে এত ভয় করছ কেন? আমাকে ভয় না পেয়ে একটু ঘরে নিয়ে চল। কতবার বলছি, ঘরে নিয়ে চলছ না কেন? আমায় নিয়ে যাও তোমার ঘরে। তোমার ঘরটা আমি একটু দেখব আর কথা বলব। তোমার মা-বাবার ঘরটাও দেখব, কিন্তু পরে। তখন ছেলেটি কিছু বুঝল না। সে যা বলল, তাই করল। ঘরে নিয়ে গেল টুপিকে। টুপি বলল, "কি সুন্দর তোমার ঘর! তোমার ঘরে দেখি আবার তোমার ছবিও টানানো আছে। তোমার বিছানার চাদরটি তো সুন্দর খুব! দেখি দেখি। চাদরটি কি সুন্দর টকটকে লাল! তোমার টেবিলটাও তো সুন্দর, চেয়ারটাও তো সুন্দর, আর তোমার ব্যাগটা তো সবচেয়ে সুন্দর! কী সুন্দর ফুল রাখা আছে টবে! টবটাও তো কত সুন্দর! তুমিও খুব সুন্দর। তুমি যে খুব সুন্দর, এই কথাটা আমার মনে হলেই কেমন লাগে জান? আমার মনে হয়, এটা তো স্বাভাবিক, ও তো সুন্দরই, এ তো আবার বলার কী আছে? তাই আমার মনে হয়। কারণ, তোমাকে আমি একনজর দেখেছি। একনজর দেখাতেই তুমি যে সুন্দর এটা আমি টের পেয়েছি। এবার কথাগুলো তো বলি। তোমার কয় বছর?" "কেন, আমার বয়স দিয়ে তুমি কি করবে?" এমনি একটু জানতে চেয়েছি। একটা জরুরী কাজের জন্য। একটু পরে বলছি সে কথা। মধু বলল, "আমার বয়স তো ৩০ হয়ে যাচ্ছে প্রায়। এই তো কয়দিন পর ৩০ বছর পূর্ণ হয়ে যাবে।" তখন টুপি ভাবল, "এরও তো বিয়ে করার সময় হয়েছে। তবে এরা বিয়ের কোন খোঁজ-খবরই রাখছে না।" তখন সে (টুপি) বলল, "এবার একটা কথা শোন! ভেবেচিন্তে অন্যদের বলো। কথা শুনে আবার তেমন কিছু মনে করো না। আমাদের ঘরে না একটা সুন্দর মেয়ে আছে। আমার কাছে তার একটা ছবিও আছে। দেখ তো সুন্দর কিনা ও!" তখন মধু দেখে বলল, "আমি তো দেখছিলাম যে, এইসব নিয়েই কোন কথা ভাবা যায় কিনা। অনেক মেয়েকে আমি দেখেছি। সব মেয়ের চেয়ে এই মেয়েটাই তো বেশি সুন্দর। মেয়েটার কাছে আমি একটু যেতে চাই। ছবি দেখে তো হবে না, বাস্তবেই মেয়েটাকে দেখলে আমি বুঝব।" তখন টুপি বলল, "মেয়েটা তো অনেক দূরে। বাংলাদেশে ঠিক। তবে যেতে পারবে আমার সাথে। আচ্ছা আরেকটা কথা বলি। কিছু মনেও করো না। বলতে পারি?" তখন মধু বলল, "আমি কেন মনে করতে যাব? আর আমি রাগই বা হব কেন? বল, সামান্য একটু কথায় কি রাগ হলে চলবে? সত্যি সত্যি যদি খারাপ কিছু করে তাহলে না হয় রাগ হওয়ার কারণ থাকে। বল।" তখন টুপি একটু ভয় ভয় ভাবে বলল, "সেই মেয়েটির নাম তো জোছনা। তুমি কি ওকে বিয়ে করতে পারবে?" তখন মধু বলল, "তোমাকে তো বলেছি যে, এই কথা নিয়েই তো আমি ভাবছিলাম। তুমি আমার একটা ইচ্ছে তো পূরণ করেই দিয়েছ। খুব ভাল করেছ। ধন্যবাদ। তাহলে নিয়ে চল দেখি, মেয়েটা কেমন। এ বিষয়ে তুমি আমার কাছে এভাবে বলছ কেন? আমার মা-বাবার কাছে বল।" তখন টুপি বলল, "কি বলছ? আমি বলতে পারব না, বাবা। যদি আবার কিছু বলে। তুমি বল। তোমাকে বরং কিছু বলবে না। তুমি তাদের ছেলে তো, তাই।" তখন মধুই বলতে গেল। বলল, "মা! তুমি আমার একটা কথা শুনবে? কিছু বলো না আবার, হ্যাঁ। আমার বিয়ে করার বয়স হয়ে গেছে। আমি একটি মেয়ের সন্ধান পেয়েছি। মেয়েটি খুব সুন্দর ছিল। আমি তার ছবি দেখেছি।" মা বলল, "কে দেখালো আবার ছবি? কেই বা সন্ধানটা দিল? আর কার কাছে তুমি মেয়ের কথা জেনেছ? মেয়েটির নাম কি, বলতে পার?" মধু বলল, "মেয়েটির নাম তো জোছনা। জান একটা অদ্ভুত দৃশ্য দেখেছি। আগে বল, বিশ্বাস করবে তো? কিছু বলবে না তো আবার? বললে কিন্তু হবে না। আমাকে আগে কথা দাও। কথা যদি না রাখতে পার, আমি কিন্তু কোন দিনও বিয়ে করব না।" তখন মা ভাবল, ছেলেটিকে বিয়ে না দিয়ে আমি করব? বিয়ে না দিলে মানুষে কি বলবে? ওর ছেলেমেয়েই বা হবে কেমনে? তখন সে রাজি হয়ে গেল। বলল, "ঠিক আছে আমি কথা রাখব। কথা দিয়ে দিলাম তোমায়। ভয়ংকর কিছু হলে একটু ভাবতে দিও।" তখন বলল, "আমি একটি টুপি দেখেছি। ওই টুপিতে না কথা বলে। টুপিটা একদম মানুষের মত। আমাদের কথা বোঝে। সেই টুপি আমাকে এই মেয়ের কথা বলেছে। আমি তার ছবি দেখেছি। সে কিন্তু খুবই সুন্দর, মা। আমি তার সাথে বিয়ে করব। এবার কিন্তু কথা রাখতে হবে! না রাখলে কিন্তু সত্যি সত্যি যা বলেছিলাম, তাই হবে।" তখন মা বলল, "আচ্ছা আচ্ছা, অত ভয় করব না। বিয়ে করবে, করবে। একটু শান্ত হও, বাবা। আমায় একটু ভাবতে দাও। বলেছিলাম না, ভাবতে দেবে?" তখন ভেবেশুনে মা বলল, "ঠিক আছে, ছবিটা আমায় একটু দেখাও তো! আর টুপিকে আমার সামনে এনে দাও।" টুপিটি আসল। মা দেখে বলল, "কি সুন্দর তুমি! তুমি কি টুপি, নাকি মানুষ?" "আমি হচ্ছি আজব টুপি। দেখ আমার হাত-পাও আছে।" তখন মা বলল, "আচ্ছা! তোমাকে দেখে কেমন যেন লাগছে। তুমি কে? কার সাথে থাক?" "আমি একটি মেয়ের সাথে থাকি, যেই মেয়ের নাম জোছনা। যেই মেয়েটির সাথে আপনার ছেলেকে বিয়ে দিতে চাচ্ছিলাম।" তখন বলল যে, "আচ্ছা, তোমার সবচেয়ে ভাল লাগে কি?" বলল, "আমার সবচেয়ে ভাল লাগে ছন্দ শুনতে।" তখন মা বাবাকে সব কথা বলল। বাবাও বিয়ে দিতে রাজি হয়ে গেল। তখন শুধু ছেলেটিকে নিয়ে যেতে হবে মেয়েটির কাছে। তখন সে (টুপি) মধুকে নিয়ে দেশে ফিরে আসল। বাড়ির সামনে গিয়ে দরজায় টোকা দিল। মধুকে এক জায়গায় লুকিয়ে থাকতে বলল। দরজা খোলার সাথে সাথেই বলল, "একটা জিনিস, একটা জিনিস... বলে লাফিয়ে উঠল।" তখন মধু চলে আসল, আর টুপি বলল, "সারপ্রাইজ!" তখন মেয়েটি দেখে অবাক হয়ে গেল, "ওমা! কী সুন্দর গো! এক্ষুণি আমি বিয়ে করব।" তখন টুপি বলল, "এখন তো আর করা যাবে না, পরশু করব।" তার পরের দিন বউভাত আর তার আগের দিন হলুদ হবে। তারপর ঘর-টর সাজানো হল, আলাপ আলোচনা করা হল, সবার নাম-ধাম জানা হলো। হলুদের জন্য মার্কেটে গেল, হলুদ কিনল, হলুদের বাটি কিনল। "হলুদ" লেখা একটি কাগজ কিনল। সুন্দর সুন্দর ফিতা কিনল। বেলুনও কিনল। ফুল কিনল। পোলাওয়ের চাল কিনল। একটি মোরগ কিনল। মিষ্টি কিনল, দই কিনল। বিয়ে হল। টুপিকে ছন্দ শোনালো।

No comments:

Post a Comment