Saturday, February 27, 2016

সুবাতের নানুবাড়ি

এক গ্রামে বাস করত এক ছো্ট্ট মেয়ে। সে তো গ্রামে থাকে। তাই শহরে গেলে খুব ভয় পায়। তার বয়স ৫ বছর। সে ক্লাস কেজিতে পড়ে। সেই ক্লাসে সবচেয়ে ছোট। ছোট হলেই ভাল। কেন জান? কারণ, তাহলে তুমি খুব তাড়াতাড়ি ক্লাস কেজিতে উঠে গেছ, বড় ক্লাসে উঠেছ। অন্যদের তো হয় সাড়ে পাঁচ, নয়তো ছয় বছর, নয়তো ছয় বছর দুই মাস। তার নানু বাড়ি ছিল আবার শহরে। ঢাকাতে। ধানমণ্ডি এলাকায় ধানমণ্ডি লেকের পাশে। সেখানে সে বেশি ভয় পাবে না, কারণ লেকে তো পানি, আর গ্রামে তো কত নদী-পুকুর দেখেছে। তাই হয়তো ভয় পাবে না। কিন্তু ভয় পাবে কেন জান? গ্রামে তো ছোট ছোট একতলা ঘর। কিন্তু শহরে তো ১০/১২ তলা, ১৫/১৬ তলা, ৫/৬ তলা, বড় বড় তলা অনেক। তাই হয়তো সেগুলো দেখলে ভয় পাবে। তার নানু জানত যে, বাচ্চাদের বেড়ানো পছন্দ। তাই নানু মেয়েটির মাকে ফোন করল। বলল, "আমার সোনামনি কি করে? তাকে একটু নিয়ে আসবে আমার এখানে? খুব সুন্দর জায়গা। অনেক কিছু দেখাব তোমায়। তুমি একটু আস। এক-আধদিন মাদ্রাসায় না গেলে কিছু হবে না।" এখন মা বলল, "উহ! ও তো দেড়টায় ভাত খেয়ে দুইটা থেকে তিনটা পর্যন্ত ঘুমোয়, তিনটা থেকে চারটা পর্যন্ত হুজুরের কাছে আরবী পড়তে যায়, আর চারটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত খেলতে যায়, আর অন্য সময় বাসায় মাদ্রাসার পড়া পড়ে। তাহলে এক-আধদিন তোমার বাড়িতে গিয়ে থাকলে তো ঘুম আর পড়াশুনা সব বাদ দিয়ে ছোটাছুটি করবে, দেখাদেখি করবে সবাই কেমন। আর মাদ্রাসা আর আরবী পড়া দুইটা শিখতে পিছিয়ে যাবে।" তখন নানু বলল, "ও! আমি তো ভুলেই গিয়েছি। সময় তো ঠিকই করে রেখেছি। এখন কি মাস? ফেব্রুয়ারী না? ওর তো শুক্রবার ছুটি, তাই না? শুধু শুক্রবার। আমাদের শহরে না শনিবারও ছুটি। এখন ২০১৬ সাল, তাই তো? এখন ২২ তারিখ মাঘী পূর্ণিমা। আর ২১শে ফেব্রুয়ারী তো ভাষা দিবস। আর শুক্রবার তো এমনিতেই ছুটি। তাই শনিবার শুধু একদিন বাদ গেলে কি সমস্যা? পরে আবার অন্য সময় স্যারদের কাছে গিয়ে জেনে নেবে। ছুটির সময় স্যারকে বলে রাখবে, একটু দাঁড়ান, সেদিন কি কি পড়ালো একটু বলে দেন, নাহয় অন্য বাচ্চাদের কাছেও জেনে নিতে পারে, কি পড়ালো। তুমি নিয়ে আস। আজ কয় তারিখ, অ্যাঁ?" মা বলল, "তুমি ভুলেই গেছ। আজ ১৫ তারিখ। তাহলে এখন রাখি। আসার চেষ্টা করব। আসার জন্য চিন্তা-টিন্তা হয়ে গেলে যদি ঠিক করি, আসতে পারব, তাহলে জানাব।" এইবার ফোনে কথা বলা শেষ। মেয়েটির নাম ছিল সুবাত। মা বাবাকে বলল, "দেখেছ? আমার মা কি বলছে? আমরা নাকি শহরে যাব। তা আবার সুবাতকে নিয়ে। মানে ওর নানুবাড়ি যেতে হবে।" তখন বাবা বলল, "ও! এ তো ভাল কথা। তবে কবে যাবে?" মা বলল, "তুমি জান না, ফেব্রুয়ারী মাসে কি? আজ ১৫ তারিখ। শোন, কিছু তারিখ বলি, এগুলো কি বন্ধ, তুমি ঠিক করে বুঝে নাও। ১৯, ২১, ২২ এগুলো কি বন্ধ?" তখন বাবা বলল, "ও, হ্যাঁ....! তুমি ঠিকই বলেছ। কিন্তু তা তো শনিবার।" মা বলল, "তোমার চাকরিতে তো ছুটি নেয়া যাবে। আর আমার তো শুধু সংসারের কাজ। আর সুবাতের তো একদিন বন্ধ হলে কিছু হবে না। স্যার-ম্যাডাম বা অন্য বন্ধু-বান্ধবের খাতা দেখে সে বুঝে নেবে যে, কি করালো। তাহলেই তো হয়ে গেল। দেখি, তুমি চাকরি করে এসে টিকেট করে নেবে। আমি সবসময় কেয়া গাড়িতে যাই, যেখানেই যাই। কেয়া গাড়িটা আমার কাছে ভাল লাগে।" বাবা বলল, "কিন্তু কেয়া তো শুধু একসিডেন্টের গাড়ি।" তখন মা বলল, "আচ্ছা, পছন্দ হওয়া না হওয়ায় কি, ভালটাতেই চড়। তাহলে সবচেয়ে ভাল কি, বলতে পার তুমি?" বাবা বলে, "মানে ভাল গাড়ি হচ্ছে দেশ ট্রাভেলস। আর ওখানে করলেই ভাল হয়। বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে যাচ্ছি।" মা বলে, "তবে এ গাড়িটা খারাপ না হোক, অন্যদিক থেকে আবার এক্সিডেন্টের গাড়ি যেন না আসে। ড্রাইভারকে সাবধান থাকতে বললেই হবে। যদি দেখ, এক্সিডেন্ট যেই গাড়ি করে, সেই গাড়ি সামনে এসে যাচ্ছে, তখনই পিছনে পিছিয়ে সরে যেতে বলবে। আর তুমি সামনের সিটে থাকবে। তাহলেই সাবধান হতে বলতে পারবে। আর আমরা একটু পিছনের দিকে বসব, কারণ সামনের দিকে বেশি হর্নের শব্দ থাকে, আবার সামনে পেট্রোল-টেট্রোলের গন্ধ। সামনের সিটে ঝাঁকিও বেশি লাগে।" তখন আলোচনা হল। বাবা ১৭ তারিখে টিকেট কেটে ফেলল। আর বলল, "বাস থেকে নেমে সিএনজিতে যাবে। তবেই ভাল হবে।" তখন মেয়েটি গাড়ি-ঘোড়ার কথা শুনে ফেলল। তখন ও বলল, "গাড়ি-ঘোড়ার কথা কেন? গাড়ি-ঘোড়ায় চড়ে তো কোথাও যায়। আবার কোথায় যাবে?" তখন মা বলল, "তুমি যদি লক্ষ্মী মেয়ের মত খাও, লক্ষী মেয়ের মত পড়াশোনা কর, ক্লাসে ভালভাবে থাকতে পার, সুন্দর করে ঘুমাতে পার আর যদি মা-বাবার কথা শুনতে পার, তবে তোমাকে একটা জায়গায় নিয়ে যাব।"- এই বলল মা। এই শুনে মেয়েটি লক্ষ্মী হয়ে থাকল। মা যা যা বলেছে, যা যা করলে নিয়ে যাবে বেড়াতে, সেই সেই জিনিসই করতে থাকল। আর মা এসব বলল কেন জান? বাচ্চা বেড়ানোর কথা শুনলেই যা যা করতে বলব তা তাই করবে। তাই মা বলল যদি এমন কর, তাহলে এমন হবে। আসলে তো সেটা না করলেও নিয়ে যাবে। তখন বাবা ছুটি নিয়ে নিল ২০ তারিখ। এরপর ১৯ তারিখ হতে চলল। বাচ্চাকে টিভি দেখতে দিয়ে বা লিখতে-পড়তে দিয়ে অন্য জায়গায় গিয়ে তবেই ব্যাগ গুছাতে শুরু করল। এরপর সকাল হল ১৯ তারিখে। সুবাত ঘুমোচ্ছিল। সুবাতকে ডাকল। সুবাতকে বলল, "সুবাত, সুবাত! তুমি তো লক্ষ্মী হয়ে থাকতে পেরেছ। বললাম না, কোথায় যেন বেড়াতে নেব? চল, বেড়াতে নিয়ে যাই। ঘুম থেকে উঠে পড়। এই যে সুন্দর জামা পড়ে যাবে। ওঠ সুবাত, তাড়াতাড়ি ওঠ। নাহলে কিন্তু আর যাওয়া যাবে না। উঠে জলদি করে কিছু খেয়ে নাও। আমি তোমার পছন্দের নুডুলস রান্না করেছি। বাসে বসে সেটা খাবে। উঠে পড় সুবাত, উঠে পড়। জলদি করে উঠ। না উঠলে কি করে যাবে? তাড়াতাড়ি উঠ। সুবাতের বেড়ানোর কথা মনে পড়ে গেল। সে 'ইয়ে..' বলে লাফ দিয়ে উঠে পড়ল। দৌড় দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলল। সে তো প্রতিদিন সকালে মধু খায়। মুখ ধুয়ে তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলল মধু। সে জলদি করে ভাত খেয়ে রেডি হয়ে পড়ল। দৌড়ে দিয়ে ঘরের বাইরে বের হয়ে গেল। মা-বাবারাই তো ঘর থেকে নিয়ে আনবে, উল্টো সুবাতই নিচে গিয়ে ডাকল, "মা, বাবা, নিচে নেমে আস। এতক্ষণ বাড়ির ভিতর থাকা যাবে না। বাস চলে যাবে, জলদি। আমি যাবই যাব, নিয়ে চল না, নিয়ে চল না। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আস।" সুবাতই উল্টে ামা-বাবাকে ডাকল। মা-বাবারা ভাবল, "ওমা! আমরাই তো ওকে ডাকব। এখন ওই দেখি উল্টা আমাদেরকে ডাকছে। তাড়াতাড়ি রেডি হও।" মা-বাবা রেডি হয়ে আসল। সুবাত মা-বাবাকে নিয়ে মা-বাবার হাত ধরে দৌড় দিয়ে যেতে চাইল। কিন্তু মা-বাবা কি আর ছো্‌ট্ট বাচ্চাদের মত দৌড়াদৌড়ি করতে পারে? তারা সুবাতকে বলল, "এই, দাড়াও, দাড়াও, রিকশায় করে যাই, চল।" রিকশায় করে বাসস্ট্যান্ডে চলে গেল ওরা। সুবাত কোনদিন বাসস্ট্যান্ড তো দেখেনি। তাই সে ভয় পেয়ে গেল। বলল, "মা, এটা কি? এত বড় বড় যানবাহন কোনদিন দেখিনি। আমি শুধু ছোট ছোট গাড়ি-ঘোড়া দেখেছি। এটা আবার কি গো?এটাতে দেখি সিড়িও আছে? আমরা কোনটাতে যাব? এই যানবাহনের নাম কি?" তখন মা বলল, "হা-হা-হা! আরে বোকা! এই যানবাহনের নাম বাস।" সুবাত বলল, "কি বললে? এটা বাজ? তার মানে এখানে বাজপাখিরা চড়ে? তাহলে তুমি আমাকে বাজপাখি দেখাতে এনেছ? এ তো খুবই পুরান।" তখন মা বলল, "হা-হা-হা-হা------। মা হাহাহা করে হাসতেই লাগল।" বাবা বলল, "উহ! কিচ্ছু বোঝে না। লিখে দেখাব? বর্গীয় জ না, দন্ত স। ব-এ আকারে বা, দন্ত স। বাস। এবার বুঝেছ? বাসে মানুষরা চড়ে। এখনো আসল জায়গায় যাওইনি। এইখানে আমরা যে গাড়িতে যাব সেই গাড়ি এখনই চলে আসবে। চলে এলেই উঠিয়ে দেব তোমাকে।" দেশ ট্রাভেলসের গাড়ি চলে এল। সুবাত দেখে ভয় পেয়ে গেল। বলল যে, "গাড়িতে আবার বিভিন্ন রকমের ডিজাইন! এইটা কি লেখা, পড়ে দেখি তো। DESH Travels। ও, তার মানে দেশ ট্রাভেলস? দেশ ট্রাভেলসে আমরা চড়ব? চল মা, চড়ি। এবার বাবা, মা ও সুবাত গাড়িতে উঠল। সুবাত ভাবল, "ওহ! এইটা যে চলছে, তাতে খুব বাতাস লাগছে। কী সুন্দর বাতাস! কিন্তু ভয়ও করছে। এত উঁচু যানবাহন থেকে যদি পড়ে যাই।" সুবাত পড়ে যাওয়ার কথাটা মাকে বলল। মা বলল, "ওহ! এর মধ্যে থেকে পড়বে কি করে? জানালা দিয়ে তো আর পড়বে না। সামনে তো আর আমরা বসিনি। আমরা তো কিছু সিট পিছনেই বসেছি। সামনে বসলে তো আরো ভয় পেতে, যদি দরজা দিয়ে পড়ে যাও। পড়ে যাবে না। কত বেড়া দেয়া আছে। এর থেকে কি পড়ে যাওয়ার কোন ভয়?" তখন সুবাত বলল, "আচ্ছা, ভয় পাব না।" তারপর শহরে আসল। নেমে সে খুব ভয় পেয়ে গেল। সে বলল, "মা, দেখ! কততো বড় বড় বাড়ি! এত বড় বাড়ি আমি কোনদিন দেখিনি।" তার নানুর বাসা ছিল দশ তলা বিল্ডিংএর পাঁচ তলায়। নানুর বাড়িটা দেখে সে ভয় পেয়ে গেল। সে বলল, "মা! এটা কি রাক্ষসের বাড়ি?" বাবু মনে করল, পুরো বাসাটাই একজনের। সে খুব ভয় পেয়ে গেল। তারপর মা বলল, "চল, ভিতরে ঢুকি। বাড়ির ভিতরে ঢুকবে না?" তখন বাবু বলল, "না, মা। আমার খুব ভয় করছে। এটা কাদের বাড়ি? তুমি চিনতে ভুল করনি তো? এখানে দেখছি সবই রাক্ষসের বাড়ির মত।" মা বলল, "আহ-হা হা হা! রাক্ষস নয়, খোক্কস নয়, কার বাড়ি, তা আগে ভিতরে ঢুকে দেখ না!" তখন সুবাত বলল, "মা, আমার কিন্তু ভয় করছে। রাক্ষস থাকলে কিন্তু তোমারই দোষ।" তখন মা বলল, "তাহলে রাক্ষস না থাকলে কিন্তু তোমার দোষ হবে।" তখন বাবু বলল, "না, না।  তা হবে না।" তখন বাবা বলল, "এত কথা না বলে ভিতরে ঢোক তো।" তখন সবাই ভিতরে ঢুকল। বাবু বলল, "এ বাড়িটা অনেক বড় ছিল না? ভিতরে এত ছোট্ট কেন?" তখন মা বলল, "উহ! চুপ কর।"- বলে মা কলিং বেল টিপ দিল। বাবু কলিং বেল শুনে ভয় পেল। বাবু বলল, "এটা কি? এটা কি কোন রেডিও? এটায় কি গান শোনে? কি সুন্দর একটু আগে গান হল। টিপ দিলে গান বেজে উঠল।" তখন নানু দরজা খুলল। তখন সুবাত বলল, "নানু! তুমি এখানে কি করে এলে? এটা তুমি কোনখানে এলে? এটা অনেক বড় তো, ভিতরে এত ছোট কি করে হল?"-বাইরে বসেই বলল। তখন নানু বলল, "উহ! সোনা। আমার সোনার সুবাত! বাইরে বসে কেন কথা বলছ? ভিতরে ঢোক। দেখ, কি।" তখন সুবাত বলল, "এত শক্ত মাটি তোমাদের! আমাদের জান, ল্যাদভ্যাদা মাটি।" আর এখানে তো অনেক কিছু অনেক রকম পার্থক্য আছে আমাদের বাড়ির সাথে। আমাদের বাড়িতে অনেক ছোট ছোট চুলা। তোমাদের অন্য রকম চুলা। আমাদের তো নিচে, তাও আবার ল্যাদভ্যাদা যেমন মাটি তেমন। তোমাদের চুলাটা না অনেক সুন্দর। ও বাবা! তোমাদের রুমগুলোই তো দেখিনি। আমরা কোন রুমে থাকব তোমাদের বাড়িতে এসে?" তখন নানু বলল, "তোমার যেই রুমটা পছন্দ হয় তুমি সেই রুমেই থাকবে।" সুবাত বলল, "আমার যেই রুমটা পছন্দ সেই রুমে কি ঘুমানো যায়? আমার পছন্দ যেই রুমে অনেক সোফা-টোফা, টেবিল, যেই ঘরে মেহমানদের বসতে দেয়া হয়, সেই রকম।" তখন নানু বলল, "ও! এই রুম? এই রুমের নাম তো ড্রইং রুম।" তখন সুবাত বলল, "তাহলে তো এই রুমে ছবি আকা যাবে। আমি তো আমাদের রং,

No comments:

Post a Comment