Monday, August 22, 2016

ঋতুর দেশ

এক ছিল একটি দেশ। সেই দেশের রাজা ছিল বসন্ত। সেই দেশের রানী ছিল বর্ষা। সেই দেশের সেনাপ্রতি ছিল শরত। সেই দেশের মন্ত্রী ছিল হেমন্ত। রাজপুত্র ছিল গ্রীষ্ম। রাজকণ্যা ছিল শীতমণি।রাজ্যের প্রজারা ছিল বৈশাখ, জৈষ্ঠ্য ইত্যাদি।একদিন ফাল্গুন বলল, রাজপুত্র মশাই! গ্রীষ্ম কাল এসে যাচ্ছে। আপনি কি প্রস্তুত চারিপাশে ছড়িয়ে পড়ার জন্য? আজ আগুন পোহায়ে গা গরম করে নিন। গ্রীস্ম কাল এলে সেই গরম ছড়িয়ে দিবেন। রাজপুত্র বর্ষা রানীকে গিয়ে বলল, "মা আগুনের ব্যাবস্থা কর।" বর্ষা বলল, "কেন? আমি নিজের কাজে ব্যস্থ। এক ঋতু পর বর্ষা আসবে। তখন আমাকে মেঘ হতে হবে। তোর আবার আগুনের জেদ উঠলো কেন?" "মা এক ঋতু পর বর্ষা। কিন্তু আগের ঋতু কি তা তোমার মনে নেই।" "ওহহও......ভুলেই গিয়েছিলাম। নাও  আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছি।" এই বলে আগুন জ্বালিয়ে দিল। গ্রীস্ম ঋতু শেষ হলো। বর্ষা মেঘের রূপ ধরে বৃষ্টি হয়ে নামল। বর্ষা ঋতু গেল। শরত ঋতু আসলো। শরত সেনাপতির দশটি কপি হয়ে গেল। প্রথম জন নবান্ন উতসবের জন্য সবাইকে ডাক দিল।দ্বিতীয় জন রোস্ট হয়ে গেল।তৃতীয় জন পানি হয়ে গেল।চর্তুথ জন বোরহানি হয়ে গেল। পঞ্চম জন পিঠাপুলি পায়েস হয়ে গেল। ষষ্ঠজন পোলাও হয়ে গেল। সপ্তম জন ভাজা মাছ হয়ে গেল। অস্টম জন ডিম হয়ে গেল। নবম জন মশলা হয়ে গেল।দশম জন শিউলি ফুল হয়ে চার পাশে গন্ধ ছড়িয়ে  দিল। ঐ বছরে হেমন্তকালের নবান্ন উতসব শরতকালেই করে ফেলেছিল। উতসবের কথা শুনে লোভ সামলাতে পারেনি কেউ। এবার হেমন্তকাল এসে গেল। মন্ত্রী বাইরে বের হলো। ঘাসের ডগায় শিশির জমিয়ে দিল। মাঠে এক সেকেন্ডের মধ্যে সুন্দর ধানক্ষেত বানিয়ে দিল। সবার ঘরে পায়েস ও পিঠে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে দিল। শেষের দিকে একটু একটু ঠাণ্ডা পরিয়ে দিল। হেমন্তকাল চলে গেল। রাজকন্যা শীতমনি ভাবল, এর পরের ঋতুটা তো আমার ঋতু। মাকে বলতে হবে। এই বলেই মার কাছে চলে গেল। "মা, মা! শোন। এর পরের ঋতুটি না শীত ঋতু। শীত ঋতুর সব দায়িত্ব না আমার। তুমি আমার হাত-পা বরফ দিয়ে ডলে ঠাণ্ডা করে দাও না।" রাণী বর্ষা বলল, "ঠিক আছে। চল, আমি আমার মেঘ থেকে শিলার বরফ নিয়ে আসি।"- এই বলে শিলা নিয়ে আসল। শিলা দিয়েই আজকে রাজকন্যাকে স্নান করালো। শীতঋতু আসার পর রাজকন্যা ম্যাজিক করল। হাজার হাজার সোয়েটার আর উলের সব কাপড়-চোপড় নিয়ে আসল। ঘরে ঘরে সেগুলো পাঠিয়ে দিল। জানান দিল, শীত আসছে। এই দেশের রাজকন্যা আসছে। শীত আসল। সবাই উলের কাপড় পরল। সবার গলায় উলের রুমাল। ঘুমানোর সময় সবাই কাঁথা গায়ে দেয়। শীতে পিঠা-কুলি খাওয়ার ধূম পড়িয়ে দিল। পিঠা বানানোরও দরকার হয়নি। হাজার হাজার পাটিশাপটা, ভাপা পিঠা আরো নানা রকমের পিঠা হাজির হয়ে গেল। সবার ঘরে ৫টি ৫টি করে পিঠা দিয়ে দিল। শীতকালে অনেক ঠাণ্ডা দিয়ে দিল। সারা গাছ শিশিরে ভরে উঠল। শীতকাল গেল। বসন্তকালেই তো আসল সমস্যা। শ্রাবণ বলল, "মহারাজ! আপনার প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়ার সময় এসেছে। এই সুন্দর ঋতুটির জন্যই আমরা অপেক্ষা করছিলাম। দয়া করে প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়ুন। আমরা গাছে গাছে ফুল, শাখায় শাখায় পাখি, ফুল-ফল ভরা নদী ভরা পানি- এই সুন্দর প্রকৃতি দেখতে চাই। কী সুন্দর আবহাওয়া হবে। এই প্রকৃতিটা আমরা দেখতে চাই, দেখতে চাই, দেখতে চাই।"- বলে মিছিল করা শুরু করল। বসন্ত বলল, "থাম, থাম, থাম। আমি ছড়িয়ে পড়তে পারব না। রাজ্য শাসন করবে কে? রানীর হাতে আমি রাজ্য ছেড়ে দেব না। বর্ষা যদি রাজ্য ভিজিয়ে দেয় আমি না থাকলে।" বর্ষা বলল, "কী হয়েছে, মহারাজ? আমি নাকি রাজ্য ভিজিয়ে দেব। আপনি নিশ্চিন্তে যান। আমি ভিজাব কেন?" রাজামশাই ভাবল, বর্ষা রাজ্য ভিজিয়ে দেবে। তখন রাজা বলল, "তাহলে বর্ষাও আমার সাথে যাবে। কিন্তু বর্ষা, মনে রেখো, তুমি যদি বৃষ্টি বানিয়ে দাও, তাহলে আমি কিন্তু তোমার ঘরের ভেতর মজার গাছপালা ভরে দেব না।" বর্ষা বলল, "ঠিক আছে, আমি যাচ্ছি আপনার সাথে।" সারা প্রকৃতি নতুন রূপে সাজল। শুধু প্রকৃতিই নয়। মানুষও সাজল। এই ভাবে এই বছরটি কেটে গেল। ওই দেশে এই বছরটি অন্য বছরের চেয়ে সবচেয়ে সুন্দর বছর।

1 comment: