Thursday, March 7, 2019

এলিয়েনের পুতুল

এক ছিল একটি দেশ। সেই দেশে অনেক কম মানুষ থাকত। কিন্তু ঐ দেশে অনেক অদ্ভূত অদ্ভূত জিনিস হতো। ঐ দেশটি এলিয়েনদের খুব পছন্দ ছিল। তাই এলিয়েনরা ঐ দেশের মানুষদের অদ্ভূত সব উপহার দিয়ে যেত। সেই দেশে একটি বিরাট জায়গা ছিল যেখানে কেউ যায় না। সেখানটা সবাই এলিয়েনদের জন্য রেখে দিয়েছে। তারা এলিয়েনদের দেয়া উপহার পছন্দ করে। একদিন এলিয়েনরা একটা অদ্ভূত পুতুল উপহার দিয়ে যায়। সেই পুতুলের সাথে একটা কাগজ ছিল। পুতুলটা কিন্তু জামার দোকানে যেরকম ডল সাজিয়ে রাখা হয় তেমন। কাগজটিতে লেখা ছিল, "এই পুতুল একটি বিশেষ পুতুল। এই পুতুলটি প্রত্যেকের কাছে এক মাসের জন্য যাবে। যদি কেউ এই নিয়ম ভঙ্গ করে, এই পুতুলটি উধাও হয়ে যাবে, আর জীবনেও এলিয়েনরা কিচ্ছু দেবে না। এই পুতুলটিকে তিন বেলা খাবার দিতে হবে। এই পুতুলটিকে নিয়ে একটি খেলা খেলতে হয়। তার জন্য একটা আলমারি দরকার। পুতুলটির পায়ের সাথে স্পেসশিপের ছবিওয়ালা একটা স্টিকার লাগানো আছে। ঐ স্টিকারটা আলমারির সাথে লাগাতে হবে। পুুতুলটিকে একা একটি ঘরের ভিতর রাখতে হবে। তারপর প্রতিদিন তিন বেলা তাকে খাবার দিতে হবে। পুতুলটি খাবার খেয়েও ফেলবে। তার জন্য একেক দিন একেক জিনিস আলমারির ভিতর উপহার দিয়ে যাবে এই পুতুলটি। এতক্ষণ শুধু ভালো জিনিস আলোচনা করা হয়েছে। এবার আসা যাক অসুবিধাতে। পুতুলটি যখন রুমের ভিতর খাবার খাবে, কেউ যদি উঁকি মেরে দেখার চেষ্টা পর্যন্তও করে, তাহলেও সেইদিনই তার হার্ট এটাক হবে। আর প্রত্যেকটি মানুষকেই এই পুতুল এক মাসের জন্য রাখতে হবে। খেতে দিতে হবে ও উপহার নিতে হবে। আবার এক মাসের বেশিও নেয়া যাবে না। সে ফকীরই হোক, আর আমীরই হোক। প্রথমে বলেছি, শুধু আর কোন উপহার পাওয়া যাবে না এই নিয়ম ভঙ্গ করলে। কিন্তু এটাই বলা হয়নি যে, কেউ ঐ নিয়ম ভঙ্গ করলে তার জন্ডিস, ক্যান্সার এরকম রোগ হবে। আর একটা কথা, এই কাগজ যে পাবে, তার জন্য একটা কাজ আছে। তাহলো, এখানকার লেখা সবকিছুই বড় বড় করে বড় কাগজে লিখে দেয়ালে টানাতে হবে। যে এই কাগজ প্রথম পাবে, তাকেই সবাইকে বোঝাতে হবে সব কিছু। সে কিন্তু ফকীরও হতে পারে। আর যদি সে নিয়ম ভঙ্গ করে, তার জীবনে নানা অসুবিধা আসতে থাকবে। আর এসব নিয়ম কারো কাছে উদ্ভট মনে হলে সে মন চাইলে বিদেশেও চলে যেতে পারে।"
আনিকা নামের একটি ছোট্ট বাচ্চা মেয়ে যে কেবল পড়া শিখেছে ও এলিয়েনদের বিষয়ে আগ্রহী, সে প্রথম এ কাগজ ও ডলটিকে দেখতে পেল। সে দৌড়ে ডলটির কাছে গেল। সে প্রত্যেকদিন ঐ জায়গার কাছে আসত এবং দেখত, এলিয়েনরা কিছু দিয়েছে কিনা। আজ সে পেয়েছে। সে কাগজটি নিয়েই পড়তে শুরু করলো। শেষে গিয়ে সে ভাবল, আমাকেই দেখছি এখন সব করতে হবে। কিন্তু আমার বাসায় তো অনেক মার্কার, কাগজ, ভালো ভালো জিনিস আছে। আমি তো পারি বড় বড় করে লিখে টানাতে। তাহলে করে ফেলি কাজটা। যদি এটি ভুয়া হয়, তাহলে আমি পড়াশুনাই কিন্তু ছেড়ে দেব।- এই ভেবে সে বড় বড় করে কথাগুলো লিখে দেয়ালে টানিয়ে দিল। তারপর সবাই ঐ লেখা পড়ল। সর্বপ্রথম আনিকাই ঐ ডলটি নিজের বাড়িতে নিয়ে গেল। সে সব ঠিকঠাক করল। শুধু মা-বাবার কাছে একটা শর্ত দিয়ে যে, সে পড়ালেখায় অনেক ভালো করবে। প্রথমদিন আনিকা তার সকালের নাস্তা থেকে অর্ধেক পুতুলের জন্যই জমিয়ে রাখল। কারণ, মা-বাবা তো আর এজন্য কষ্ট করে বেশি ভাত রান্না করবে না। তারপর সে খাবারের থালাটি পুতুলটির সামনে রেখে সব দরজা-জানালা পর্দাসহ ঠিকমতো বন্ধ করে রাখলো। সে ভেবেছিল, হয়তো তার পরিশ্রম জলে যাবে। কিন্তু তা হলো না। আনিকা দুপুরবেলা দরজা খুলে এসে দেখল, থালা খালি হয়ে গেছে। পুতুলটির রুমে একটি চক ছিল। চক দিয়ে দেয়ালের কোনায় লেখা ছিল, "পানি।" আনিকা  বুঝল, "পুতুলটি পানি চাইছে।" আনিকা পানি ও দুপুরের খাবার পুতুলের কাছে দিয়ে বাইরে চলে গেল। রাত্রেও এরকম করে পুতুলকে খাবার দিল। এবং রাত্রেবেলা ঘুমানোর আগে সে আলমারি খুলে দেখল, আলমারির ভিতর একটা গয়নার বাক্স। তার মধ্যে সুন্দর সুন্দর গয়না। ৫০ ভাগ গয়না সোনার, আর ১% গয়না হিরের, এবং বাকি ৪৯ ভাগ গয়না রূপোর। আনিকার খুব পছন্দ হলো জিনিসগুলো। কিন্তু সে মাকে দেখালো না। সে উপহারগুলো আলমারিতে জমিয়ে রাখল। এরকম করে খাবার দিতে দিতে সব খাবার খাওয়ানো হয়ে গেল। মাসও শেষ হয়ে গেল। তার সাথে আলমারিও উপহার দিয়ে ভরে গেল। এরপর তার মনে ভয় জেগে উঠলো। সে তাড়াতাড়ি একজনকে বলল, "তুমি তাড়াতাড়ি একটা আলমারি যোগাড় কর। দয়া করে এই মাসটা তুমি পুতুলকে নিয়ে রাখ।" যাকে আনিকা একথা বলেছে, সে রাজি হয়ে গেল। এভাবে পুতুলটি একেকজনের বাড়িতে যেতে লাগল এবং সবাই প্রায় বড়লোক হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত কয়েক বছর কেটে যাওয়ার পর একজনও বাকি রইল না, যে পুতুলটি নিজের কাছে একমাস রাখেনি। এরপর পুতুলটি একদিন অদৃশ্য হয়ে গেল। এবং আকাশ থেকে কিছু কাগজ উড়ে উড়ে পড়তে লাগলো। সেই কাগজে লেখা, "তোমরা খুব ভালোভাবে পুতুলটি ব্যবহার করেছ। খুব খুশি হয়েছি। তোমাদের পুরস্কার- প্রত্যেকদিন বিকেল ৪ টার সময় ঐ খালি জায়গায় সোনা-রূপোর গয়নার বৃষ্টি হবে। তোমরা বড়লোক হয়ে যাবে। ধন্যবাদ।" এরপর থেকে প্রত্যেকদিন সোনা-রূপার বৃষ্টি হতে লাগলো এবং সবাই সুখে-শান্তিতে বাস করতে লাগলো। [পানির বৃষ্টি বন্ধ হয়নি।]

No comments:

Post a Comment