Friday, March 29, 2019

মিষ্টিনগরী ও ঝালপুর

এক ছিল এক দেশ। দেশের দুটি অংশ। একটি অংশে মানুষ মিষ্টি খেতে পছন্দ করে, আরেকটি অংশে মানুষ ঝাল খেতে পছন্দ করে। আর দেশটি দুই ভাগে ভাগ হয়েছে মূলত এই খাদ্যাভ্যাসজনিত বিভক্তির কারণে। যে অংশের মানুষ মিষ্টি খেতে পছন্দ করে, ঐ অংশের নাম দেয়া হয়েছে মিষ্টিনগরী। আর যে অংশের মানুষ ঝাল খেতে পছন্দ করে,  সে অংশের নাম দেয়া হয়েছে ঝালপুর।
মিষ্টিনগরীর মানুষ সকালে মাখন-চিনি দিয়ে পাউরুটি খায়, দুপুরে আর রাতে দুধ-ভাত খায়। আর জুস খেতে হলে দশ চামচ চিনি দিয়ে জুস খায়। অপরদিকে ঝালপুরের মানুষ সকাল বেলা পাউরুটির উপর মরিচভর্তা মাখিয়ে তার উপর দিয়ে মরিচের গুঁড়ো ছিটিয়ে খায়। আর দুপুরে লাল টকটকা (ঝাল) মুরগীর মাংস দিয়ে ভাত খায়। আর রাতে বোম্বাই মরিচ দিয়ে বেগুনভর্তা খায়। আর জুস খেতে ইচ্ছা করলে পানির সাথে গ্রীনচিলি সস মিশিয়ে তাতে হলুদের গুঁড়া দিয়ে খায়। অনেক বছর ধরে এই নিয়ম চলছে। কিন্তু এখন আবার মিষ্টিনগরীর মানুষ বলে, "ইস! আমাদের ভাগের মানুষের এত ডায়রিয়া কেন হয়? তাছাড়া কৃমির উপদ্রব কেন এত বেশি হয়? তাছাড়া মিষ্টি খেতে খেতে মাঝেমধ্যে বমি বমি লাগে। ওদিকে ঝালপুরের মানুষরা বলে, "আমাদের জিহবায় কেন ঘা হয় এত? পেটেই বা কেন এত আলসারের ছড়াছড়ি? তাছাড়া ঝাল খেতে খেতে ছোট বাচ্চারাও সব পানি শেষ করে ফেলছে।" ঝালপুরের মানুষ ভাবে, মিষ্টিনগরের মানুষ বোধহয় সুখে মিষ্টি খেয়ে কাটিয়ে দিচ্ছে। তাই তারা হার মানতে না চেয়ে কষ্ট সহ্য করছে। আর মিষ্টিনগরের মানুষেরও একই অবস্থা।
হঠাৎ মিষ্টিনগরের দুইটি ছেলে ও ঝালপুরের দুইটি মেয়ে খেলতে খেলতে দুই অঞ্চলের সীমানায় এসে পড়ল। তাদের দেখা হলো। পরে একজন ছেলে সাহস করে খাবারের কথাটা মেয়ে দুটিকে বলল। তাদেরকে জিজ্ঞেস করল, "তোমাদের কি এত ঝাল খেতে খেতে অসহ্য লাগে না?" এবার মেয়ে দুটো বলল, "কী! তোমাদেরও এই অবস্থা নাকি? বড়দেরকে খবর দিতে হচ্ছে।" এবার ছোট বাচ্চারা গিয়েই বড়দেরকে সব খবর দিয়ে দিল। এবার ঠিক করা হলো, মিষ্টিনগরের খাবার একটা বড় বাটিতে করে প্রত্যেক বাড়ির মানুষ সীমানায় রেখে আসবে। এরপর ঝালপুরের মানুষ সেইসব বাটির খাবার নিয়ে ঝালপুরের খাবার ঐ বাটিতে করে আবার সীমানায় রেখে দেবে। এভাবে চলতে থাকবে। আর এক বছর পরপর এই নিয়ম চালু হবে। প্রথম বছরে এই নিয়ম হবে। তার পরের বছরে যে যা খাচ্ছিল সে তাই খাবে। তার পরের বছর আবার এই নিয়ম চলবে। এভাবে চলতে থাকবে। তাহলে সবার সবকিছু খাওয়া হবে। রোগের সংখ্যাও কমে যাবে। এই নিয়ম অনেকদিন চলল। কিন্তু দেশকে দুইভাগ না করে একভাগ করে দিলেই তো হয়! সবাই সবকিছু খেতে পারে। এই বুদ্ধিটি আসল ৫ বছরের একটা বাচ্চা মেয়ের কাছ থেকে। সে বড়দেরকে এই উপায়টা বলল। বড়রা কেউ তাকে পাত্তা দিল না। কিন্তু তার বড় ভাই তাকে সাপোর্ট করল। এরপর আরো কিছু ছেলেমেয়ে এসে একজোট হলো। এবং সব বড়দের কাছে গিয়ে এই উপায়টা প্রচার করল। তারপর থেকে এরকম সাধারণ নিয়ম আবার চালু হলো। যার যেটা খুশি সে সেটা খাবে। সবাই আনন্দে থাকবে।

No comments:

Post a Comment