Sunday, March 17, 2019

***ধনী-গরীবের স্কুল***

এক ছিল একটি দেশ। সেই দেশের রাজা ছিল চিন্তাশীল। সে সবকিছু ভেবেচিন্তে এবং কোনটা ভালো হবে সেটা ভেবেই সব কাজ করত। সে দেখল, গরীব বাচ্চারা ঠিকমত লেখাপড়া করতে পারছে না। এজন্য সে একটি বিদ্যালয় খুলল। সেই বিদ্যালয়ের নিয়মগুলো সে একটা কাগজে লিখল। লিখে বলল, "এ কাগজটির লেখা জিনিসগুলো যেন জোরে মাইকিং করে বলা হয় সারা দেশে।" নিয়মগুলো হলো, "জানুয়ারি মাসের প্রথম দিন বই দিবস হবে, যেমনটা সব সময় হয়। আর সেই দিন গরীব-ধনী সবাইকেই বই দেওয়া হবে। গরীবদের পড়ানো হবে বিনে পয়সায়। আর যদি সাধ্য থাকে, তাহলে যতটুকু দেয়া যায় ততটুকু দিতে হবে। আর ধনীদের মাসে দেড় হাজার টাকা বেতন। প্রথম দিন বই দেয়ার সাথে সাথে গরীব এবং ধনীদের সাথে মেলামেশা করিয়ে দেয়া হবে। বই দিবসের সাথে সেদিন পরিচয় দিবসও হবে। ২ তারিখ থেকে ৩১ তারিখ পর্যন্ত গরীবদের বর্ণ, বর্ণমালা, কার চিহ্ন, সংখ্যা ইত্যাদি মৌলিক জিনিস শেখানো হবে। এবং ভালো করে শিখিয়ে দেয়ার পর অনেক অনেক বাড়ির কাজ দেয়া হবে। যার জন্য সময় দেয়া হবে ৬ মাস। এরপর পুরো জুলাই মাস তাদেরকে আরেকটু বড় লেভেলের জিনিস পড়ানো হবে এবং ডিসেম্বর মাসে তাদের পরীক্ষার কিছু টিপস দেয়া হবে। এরপর ডিসেম্বর মাসে তাদের পরীক্ষা হবে। ধনীদের নভেম্বর মাসেই পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে। আর বাকি সব মাসে ধনীদের পড়া হবে।"
এই ঘোষণা প্রচারের পর উক্ত স্কুলে ভর্তির জন্য হাজার হাজার আবেদন পড়ল। এরপর রাজামশাই ঠিক করল, আগে গরীবদের Admission হবে। ধনীদেরটা পরে দেখা হবে। তাও গরীবের সংখ্যা হাজারের নিচে নামল না। এখন রাজা বলল, "এই বছর শুধু ৫ থেকে ৭ বছরের বাচ্চাদের ভর্তি করানো হবে।" কিন্তু এই কথা বলার পরেও হাজারের নিচে সংখ্যা নামল না। এরপর রাজা ঠিক করল, আমার রাজ্যে তো এত গরীব থাকার কথা নয়। গরীবের সংখ্যাই সব মিলিয়ে ৫০০ থেকে ৭০০। কিন্তু ৫ থেকে ৭ বছরের বাচ্চাই যদি ১ হাজারের উপরে হয়, তাহলে কি করে হবে? এবার রাজা কে আসল গরীব সেটা যাচাই করার সিদ্ধান্ত নিল। সে বলল, আগামীকাল বিকেল ৪টায় এই স্কুল প্রাঙ্গনেই কাঙ্গালী ভোজ হবে। ভোজের পর ভর্তির সাক্ষাতকার হবে। কিন্তু রাজার মাথার আসল বুদ্ধিটা প্রকাশ করল না। এরপর সব মানুষ স্কুল প্রাঙ্গনে ভিড় করল। সবাই বসে পড়ল। এরপর শুরু হলো কাঙ্গালী ভোজ। কাঙ্গালী ভোজে দেয়া হলো ৬ দিনের বাসি পুঁইশাকের চরচরি। ধনীর দুলাল-দুলালীরা খাবার মুখে তুলতে না তুলতেই নাক চেপে ওয়াক দিতে দিতে দৌড়ে চলে গেল। তারা একেকজন মন্তব্য করতে লাগল, "এত জঘন্য পচা খাবার বাপজনমেও দেখিনি।" আর ভোজস্থলে পড়ে থাকল মাত্র ১০৯ জন। তারা বলল, "শোকর আলহামদুল্লাহ! এত মজার খাবার গত এক মাসেও খাইনি। আল্লাহ রাজা মশাইয়ের হায়াত দারাজ করুন। রাজা মশাই খুবই চিন্তাশীল। আমাদের পেটের ক্ষুধার খবরও তিনি রাখেন।" এরপর রাজা ঘোষণা দিলেন, "এরাই আমার স্কুলের দরিদ্র কোটার Original Candidate। এটাই ছিল আসলে পরীক্ষা। আমি পেয়ে গেছি আমার আসল গরীব ছাত্রদের। আর যারা ভুয়া দরিদ্র প্রার্থী ছিল, তারা ধনী কোটায়ও ভর্তির সুযোগ পাবে না। আর যদিও বা করতেই হয়, তাহলে তারা মাসে ১০ হাজার করে টাকা দেবে। আর তার থেকে যাতে গরীবদেরও পড়ার খরচটা উসুল হয়।" বাকি যারা ধনী কোটায় ভর্তি হয়েছিল, তাদের মধ্যে কেউ আছে যে, ভুয়া গরীব সেজে আবেদন করার চিন্তা করেছিল, কিন্তু বাস্তবে সেরকম করেনি। তারা খুশীমনে বলতে লাগল, "ভাগ্যিস! আমরা ২ নম্বরীর পথে যাইনি। তাহলে আমাদের ভর্তিটাও মাটি হয়ে যেত।"

3 comments:

  1. Oi bedi..This story is better than the ghash khaoa golpo..Eota bolish

    ReplyDelete