Wednesday, October 22, 2014

মিরার মন খারাপ

এক দেশে ছিল একটা বাবু। সেই বাবুটার নাম মিরা। বাবুটি রোজ রোজ শুধু ভিডিও দেখত। তার মা তাকে কিছুতেই জোর করে পড়াতে বসতে পারত না। তার মা একবারে অনেক চিন্তায় পড়ে যেত যে, সামনে ওর পরীক্ষা। কি করে যে ওকে ফার্স্ট বানাতে পারি! লেখাপড়া না করলে ফার্স্ট হবে কেমনে আমার মেয়েটা? সারাদিন ভরে শুধু ভিডিও দেখে। মনটাই কেমন লাগে বল! একদিন মিরা বলল, "মা! আমি লেখাপড়া কোনদিন করব না। তুমি একদিনও পড়াতে বসাবে না, মা। কিন্তু আমাকে পরীক্ষায় ফার্স্ট হতেই হবে।" তখন তার মা বলল, "ঠিক আছে, ফার্স্ট হতে পারলে তোমাকে পুরস্কার দিব, আর ফার্স্ট না হতে পারলে তোমাকে পুরস্কার দিব না।" তখন তার মেয়ে বলল, "তবে কি পুরস্কার দিবে, মা?" তার মা বলল, "না, সেটা বলব না। সেটা বললে তুমি এখনই চাইবে। এর চেয়ে তোমার তখনই পুরস্কারটা নেওয়া দরকার। তুমি এখন শুন না।" সেই মেয়েটি তাড়াতাড়ি গিয়ে ভিডিও দেখল। সে একটা গল্প দেখল। দেখল, ঠাকুরমার ঝুলি গল্প। একদিন এক বানর গাছের উপর বসে লাফাচ্ছিল। একদিন একটা মেয়ে এসে বানরকে বলল, "বানর ভাই, বানর ভাই, গাছে বসে আছ। আমাকে একটু ফল দিবে? তুমি নিজে বসে বসে সব ফল খেয়ে ফেল। কেন খেয়ে ফেলছ, বানর মশাই? শোন, বানরটাই শেষে হারবে।" তারপর মেয়েটি বলল, "ও বানর ভাই, একটু ফল দেবে আমাকে?" বানরটি ভাবল, ওকে এখন ফল দিলে ও রোজ ফল চাইবে আমার কাছে। সে বুদ্ধি করে ভাবল, এইবার মেয়েটি আমার খাবার খেতে চায়, না। এবার দেখাচ্ছি মজা। তার মাথার উপর একটি শক্ত ফল ফেলল। মেয়েটির মাথায় সেটি পড়ল না। সেটা গিয়ে বানরেরই এক ভাইয়ের মাথায় পড়ল। তখন সেই বানরের ভাইটি বানরকে ধরে বলল, "কি, তুই আমার মাথায় ফল ফেলেছিস কেন? তোর সঙ্গে আমি অনেক গল্প করেছি না? তুই আমার মাথায় মারছস কেন? এবার বল কি কারণে মারছস? আমি কি তোমারে কি কোন ক্ষতি করেছি?" বানরটি বলল, "সব ঘটনা পরে বলব। আসলে ওই মেয়েটিকে শায়েস্তা করছি। আমার খাবার খেতে চেয়েছে ও। তুমি যাও, বাইর থেকে ঘরে গিয়ে থাক। এবার আমাকে সেই মেয়েটিকে মারতেই হবে।" তখন সেই মেয়েটির মাথায় আরেকটি শক্ত ফল ফেলল। সেটি গিয়ে মেয়েটির মাথায় পড়ল। কিন্তু মেয়েটির মাথায় কি যেন একা পরা ছিল, সেটায় কোন কিছু পড়লে মাথায় ব্যথা পায় না। এবং মাথা ফাটেও না। সেটি পরে মেয়েটি একটুও ব্যথা পেল না। তখন বানরটি বলল, "হায়! মেয়েটিকে একটুও শায়েস্তা করতে পারছি না।" এ বলে তাড়াতাড়ি করে লাফ দিয়ে মেয়েটির মাথায় পড়ে মাথার ওটি খুলে নিয়ে গেল বাড়িতে। সেটি বানরটির বাড়িতে রেখে আসল। তারপর সে এসে এবার মেয়েটির মাথায় ফল ফেলতেই মেয়েটি দৌড়িয়ে তার বাড়িতে চলে গেল।
এই গল্পটি সেই বাবুটি দেখল। কম্পিউটারে দেখে মেয়েটি খুব খুশি হল। কিন্তু তার খুশীর মনটা খারাপ হয়ে যাবে। কারণ সে একটুও পড়ালেখা করেনি, নিশ্চয়ই সে পরীক্ষায় জিতবে না। মেয়েটি ভিডিওটি দেখে খুশীতে নাচতে নাচতে পরীক্ষার সময় হয়ে গেল। মেয়েটি নাচতে নাচতে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে স্কুলে চলে গেল। স্কুলে গিয়ে পরীক্ষা শেষেই দেখল যে, একটুও পারেনি। এটা শুনে মেয়েটি ক্লাস থেকে বের হয়ে ক্লাসের বাইরে গিয়ে বসল। আর এ কাগজটি মিসের লেখা সব ফ্লুইড দিয়ে মুছে ফেলল। তারপর নিজে রং পেন্সিলের লাল কালি দিয়ে রাইট দিয়ে দিল সব। তারপর আবার মে আই কামিং মিস বলে আবার ক্লাসে ঢুকে পড়ল। বেঞ্চে বসে পড়ল। তারপর মিস বলল যে, "এবার সবাই খাতাটা বের করে আমার কাছে আবার জমা দাও, এবার দেখব কে কত পেয়েছ।" এটা মিস বলার সাথে সাথে তাড়াতাড়ি ফ্লুইড বের করে টিক চিহ্নগুলো মুছে ফেলতে ফেলতেই টিচার আসতে নিল। এসে দেখল যে, সে লাল কালি দিয়ে ক্রস দিচ্ছে। ওটা সে করেছিল মিস ওটা দেখে পরীক্ষার রেজাল্ট  ভাল করে দেবে সেজন্য। কিন্তু মিস এসে তাকে ধরে বলল, "এই মেয়ে, আমার টিক চিহ্নগুলো মুছেছো না, আবার ক্রস দিচ্ছ। এবার দাও। তোমার ব্যাগ থেকে সব ফ্লুইল-টুলুড আমাকে বের করে দাও, তোমার রং পেন্সিলের লাল কালিও দিয়ে দাও্।" তখন মেয়েটি মন খারাপ করে দিয়ে দিল। তবে এখন মেয়েটির ঘটনাটা হবে এই যে, মেয়েটি তার মায়ের কাছে অনেক বকা খাবে। এরপর মেয়েটি ক্লাসে কাঁদতে লাগল। মিস বলল, "এই মেয়ে, কাঁদছ কেন, অ্যাঁ? কাঁদা বন্ধ কর, নাহলে ক্লাসের বাইর কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখব। কাঁদা বন্ধ কর তাড়াতাড়ি।" তবুও মেয়েটি কান্না বন্ধ করল না। তখন মিস বলল, "ঠিক আছে, তোমাকে ক্লাসের বাইরে দাড় করিয়ে রাখব না। তুমি বরঞ্চ সামনে এসে পিটি কর। তাহলেই তোমার শাস্তিটা হয়ে যাবে।" মেয়েটি একবারে মন খারাপ করে গিয়ে পিটি করল। কিন্তু তার মনটা খুব খারাপ হবে এ গল্পে। এটাই গল্প। তারপর অনেক অনেকক্ষণ পর মেয়েটিকে যেতে দিল। তখন মেয়েটি বেঞ্চে গিয়ে মন খারাপ করে বসে থাকল। এখন মেয়েটি বাসায় গিয়ে ব্যাগটা রেখে বিছানায় গিয়ে বসল। মা এসে ব্যাগ থেকে বই-খাতা বের করে দেখল যে, তার পেন্সিল রঙের লাল কালারও নেই, তার সব ফ্লুইডও নেই। তখন তার মা বলল, "এই মেয়ে, ফ্লুড-টুলুড সব কোথায় গেছে? তুমি আমার কাছে ফ্লুইডগুলো দাও। নাহলে কিন্তু আমি তোমাকে অনেক শাস্তি দিব। ফ্লুডগুলো এনে দিতে হবে তোমাকে।  কোথায় গেছে তোমার ফ্লুড গুলো? এনে দাও সেগুলি।" তখন মেয়েটি বলল, "পরীক্ষার শিট পরে দিবে। কিন্তু লাল কালিরও খবর নেই, আর আমার ফ্লুইডেরও খবর নেই।" তখন তার মা বলল, "এই যাও, কোথায় থেকে নিয়ে এসেছো, যাও। নাহলে তোমার শাস্তিটা দিয়ে দিব। তুমি তাড়াতাড়ি বাবাকে নিয়ে কোথায় গিয়েছ সেটা দেখিয়ে দাও। নিয়ে এসো, আর নাহলে ভাত খেতে দিব না।" তারপর মেয়েটি গিয়ে তার বাবার কাছে বলল, "আমার আম্মু কি বলে তুমি একটু শুনে আস না।" তখন তার বাবা দৌড়ে তার মায়ের কাছে গিয়ে বলল, কি বলেছ তোমার মেয়েকে?" তার মা সব কথা খুলে বলল। তারপর তার বাবা তার মেযেকে নিয়ে বলল, "কোথায় রেখে এসেছো সেটি, মা? তোমার মা তোমাকে অনেক বকা দেয় কেন, বলতো একটু।" তখন বাবুটি সব কথা খুলে বলল। আর বলল যে, "সেটি আমার মিস নিয়ে গেছে।" এরপর তো সব ঘটনাই বোঝা গেল। তারপর তার বাবা দৌড়ে গিয়ে মিসের কাছে বলল, "আপনি আমার মেয়ের জিনিস নিয়েছেন কেন? আপনাকে আমি কিন্তু শাস্তি দিব। তাড়াতাড়ি বলেন, কিজন্য নিয়েছেন আর কোথায় রেখেছেন?" কিন্তু বাবুটি বলেনি যে, এটা দিয়ে খাতায় কি করেছিলাম। তখন মিস বলে দিল যে, আমার সাইন নষ্ট করেছে। তখন তার বাবা বলল, "এই দুষ্টু মেয়ে! তুমি তোমার মিসের সাইন নষ্ট করেছ কেন? এটা করতে হয় না। এটা করলে এরকমই হয়। এগুলো নিয়ে যায় মিস। এখন আবার আমার কষ্ট করে মিসের কাছ থেকে নেয়া লাগতেছে। তুমি তাড়াতাড়ি মিসকে সরি বলে ওগুলো নিয়ে আস।" তখন বাবুটি সবকিছু বলে ওর রং পেন্সিল ও লাল কালি নিয়ে এল। ফ্লুড নিয়ে এল। এরপর মেয়েটির মা বলল, কি হয়েছে অ্যাঁ! পরীক্ষার শিট কোথায়? বলে, "এই যে মা, আমার ব্যাগেই আছে। এবার গিয়েছিলাম না, তখন ওগুলোর সঙ্গে খাতাও দিয়ে দিয়েছে।" তখন মা বলল, "দুষ্টু! কি করেছ খাতায়?" তখন তার বাবা বলল, "মিসের সাইন নষ্ট করেছে।" এসব কথা বলল বাবা তার মাকে। মা শুনে খুব রাগ হয়ে গেল। মা বলল, "তুমি এই জিনিসগুলো না করলে তো তুমি ১ নম্বর পেতে। কিন্তু তুমি ঐটা করার জন্য তোমাকে এক নম্বরের বদলে জিরো (০) দিয়ে দিয়েছে। এ প্লাসও পাবে না। রেজাল্টে দেখবে, এ প্লাসের জায়গায় থাকবে বি। তুমি কেন এইগুলো করলে?" তখন মেয়েটি খুব বকা খেযে মেয়েটির মনটা অনেক অনেক অনেক খারাপ হয়ে গেল। মেয়েটি একেবারে কাঁদতে লাগল। মেয়েটি দৌড়ে গিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে তার বন্ধুদের নিয়ে মিরা খেলতে লাগল। আর বাড়ি এল না। বাড়ি এলে তার মা বকা দিবে, সেজন্য। তারপর রাত্রিবেলা তো মেয়েটির ক্ষুধা লেগেছে। মিরা ভাত না খেয়ে শুধু গাছের ফল খেল। সেটা খেয়েই মিরার রাতের খাবার মিলল। তখন মেয়েটি দেখল যে, একটি মেয়ে কাপড় শুকা দিয়েছে, কিন্তু তার পাটিটি নিতে ভুলে গেছে। তখন মেয়েটি সেই পাটিটা নিয়ে মাঠের মধ্যে ঘুমানোর জন্য উপস্থিত হল। কিন্তু এখন বালিশ কোথায় পাবে? যেতে যেতে তার পকেটে দুটি পয়সা ছিল, সেই পয়সা দিয়ে বালিশের কভার পেয়ে তুলা নিয়ে- কোথা থেকে জানি একটু তুলা পেয়েছিল, কভারের মধ্যে ভরে সেই পাটির উপরে ঘুমাতে লাগল। তার পরের দিন সেই মেয়েটি দৌড়ে দৌড়ে খুব ভোরে যখন তার বাবা-মা ঘুম থেকে ওঠে না তখন নিজের বিছানায় গিয়ে শুইল। যাবার আগে পাটিটা ভাজ করে রেখে আসল আর সেই বালিশটা গরীবদের বাসায় দিয়ে আসল। মিরা নিজ বাড়িতে গিয়ে ঘুমানোর পর মা-বাবা উঠে দেখল, মিরা এখানে ঘুমানো আছে। তখন মা-বাবা চোখ ডলে তারপর বলল, আমরা আবার স্বপ্ন দেখিনি তো যে, মিরা বাইরে গিয়ে আর আসল না? তারা কোন কিছু জানল না। কিন্তু অন্য এক বাসা থেকে একটি ছেলে দেখেছিল সেগুলো। সেই ছেলেটি তাদের বাসায় এসে বলল, "আন্টি, আন্টি!" এরকম বলে বলে সব ঘটনা বলল। এসব শুনে মা মেয়েটিকে আদর করে বলল, "তুমি এখন থেকে এরকম দুষ্টুমি আর কখনো করবে না। তবে এখন তোমাকে আম্মু বলে ডাকা হলো। তবু আমাদেরকে নিয়ে এ গল্পগুলো শেষ হল।"

No comments:

Post a Comment