Saturday, June 6, 2015

রাজার মাথায় ব্যাঙের লাশ

রাজা বাদশাহ বাবু একদিন রাজপ্রাসাদে বসেছিলেন। উনি বড় চিন্তায় ছিলেন যে, ঐ রাজপ্রাসাদে একটি সোনার চেয়ার ছিল। রানীর লোভ সেই সোনা গলিয়ে সোনার গয়না গায়ে দেবে। আর রাজার লোভ আরো বেশি ছিল। রাজা চাইতো, সেই সোনা শুধু আমার নিজেরই হবে। আর সেগুলো দিয়ে আমি সোনার বাটি তৈরী করে বিক্রি করে অনেক টাকা দিয়ে অনেক মজার মজার জিনিস কিনব। তারপর সেগুলো বিক্রি করে যা খাঁটি খাবার পাব না, কাউকে না দিয়ে খাব। আর সেই সোনা একটু রেখেও দেব, যা দিয়ে অনেক সুন্দর জিনিস বানানো যায়। সেগুলো গলিয়ে উনি জিনিস বানাবেন এবং সেই জিনিসগুলো দিয়ে যা টাকা হবে তা দিয়ে আবোল তাবোল জিনিস কিনে আনবেন এবং সেই আবোল তাবোল জিনিস নিজে অনেক কাজে ব্যবহার করবেন বলে ভেবেছিলেন। আর রানী তো শুধু একটু কানের দুল, নাকের দুল ও গলার হার  চায়। রানী একদিন রাজাকে বলে, "রাজা বাদশাহ বাবু গো! শুধু সিংহাসনে বসে ঘুমোলে হবে? রাজা হয়ে সিংহাসনে বসে থাকলে না এক কথা। তাও আবার ঘুমিয়ে থাকেন আপনি।" রাজা বলে, "এই, মূর্খ রানী! রাজাদের ঘুম পেলে কি আর ঘুমায় না? আমি রাজা, আমি আমার ইচ্ছামত কাজ করতে পারব। রাজা হলে সবচেয়ে বেশি দয়ামায়া হয়। সবাই রাজাকে অনেক দয়ামায়া করে। আর মূর্খ রানী! বেশি সোনার লোভ করিস না কিন্তু। দেব একতরে ব্যাঙের পিঠে চাপিয়ে। তুই কিন্তু কোন বুদ্ধিমতী মেয়ে নয়। মনে রাখিস মূর্খ রানী। এমন মূর্খ কোনদিন দেখিনি। রাজার মুখের উপর কি সব বলে। বলে নাকি সিংহাসনে বসে ঘুমিয়ে থাকার কথা।" রানী বলল, "আচ্ছা যা বলছেন তাই হবে। আমি আসি।"- বলে রানী রাগ করে চলে গেল। নিজের ঘরে গিয়ে ভাবল, এই রাজাকে জব্দ করবই। এই রাজা আমাকে এত ভালবাসে না। এই রাজাটা দেখছি আমাকে একটু আদরও করে না। শুধু বকে। এই বার দেখাচ্ছি মজা রাজামশাই, ওরে বাদশাহ বাবু, দেখাবো এবার তোমায় মজা, হি-হি-হি।"- বলে রানী গেল দোকানে। দোকান থেকে একটি পোষা ব্যাঙ কিনে আনল। কারো কাছে ব্যাঙের কথা না বলে ব্যাঙটিকে অনেক যত্ন সহকারে রাখল। একদিন সেই ব্যাঙটাকে অনেক গন্ধওয়ালা পাউডার মাখিয়ে দিল। সেই গন্ধ ছিল এমন, রাজা মশাইর নাকে গেলে রাজামশাই গন্ধে পাগল হয়ে যাবে। তারপর ব্যাঙের খাবারে বিষ মাখিয়ে দিল। তারপর ব্যাঙটি মারা গেলে যখন রাজাকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে তার মাথায় দিল সেই ব্যাঙের লাশ। তারপর আরো একটা ব্যাঙ নাকি মরেছিল ছাদের উপর। ছাদ থেকে লাফিয়ে এসে ব্যাঙটি পড়ল রাজার মাথায়। দুটি ব্যাঙ হল। দুটি ব্যাঙ হল। আর রানী তো অনেক খুশী হয়ে সেই ব্যাঙটাকেও আরো মারার চেষ্টা করে মারল। করে তো মারতে পারলই, তবে সেই ব্যাঙের গায়েও গন্ধওয়ালা পাউডার মাখিয়ে দিল। তারপর রানী ঘুম থেকে ডাকল রাজাকে। যেই রাজা একটু চোখ খুলছে, অমনি রানী পালিয়ে গেল দরজা দিয়ে। রাজার ঘর থেকে পালিয়ে গিয়ে নিজের ঘরে গিয়ে বসল। আর রাজা ঘুম থেকে উঠে চিরুনি দিয়ে মাথা আচড়াতে গিয়ে দেখে ব্যাঙের লাশ। তারপর যেই একটু ভালমত খেয়াল করেছে, নাকের মধ্যে গন্ধটা ঢুকে তো রাজা এদিকে দৌড়ায়, ওদিকে দৌড়ায়। দৌড়াতে দৌড়াতে সে রানীর কাছে গিয়ে বলে, "আমাকে বাঁচাও। আমি তোমাকে এই সোনা দিয়ে অনেক গয়না বানিয়ে দেব। সোনাগুলো গলিয়ে তোমায় গয়না বানিয়ে দেব। আমাকে তুমি এই ব্যাঙের হাত থেকে বাঁচাও। মাথার উপর থেকে ব্যাঙটা সরিয়ে দাও।" বলে, "ছিছিছিছি, আমি কিনা রাজার স্ত্রী, আর আমি কিনা ধরতে যাব ব্যাঙের লাশ! ছিছি রাজা মশাই, ছিছিছি!" বলে, "না, তুমি সরিয়ে দাও। আমি জানি, তুমিই করেছ এ কাজ।" রানী বলল, "এ কেমন রাজা মশাই, নিজের মাথা থেকে ব্যাঙ সরাতে পারেন না! আপনি নাকি বলেছিলেন যে, প্রজারা অনেক সাহায্য করে রাজাদেরকে। আপনি প্রজাদের সাহায্য নিয়ে এমন হয়ে পড়লেন? তাড়াতাড়ি প্রজাদের কাছে গিয়ে বলুন।" আর প্রজারা ছিল অনেক লজ্জা পাওয়ার প্রজা। তখন রাজা যেই প্রজার কাছে গেল, সবাই হাসে: এ কী! রাজার মাথায় ব্যাঙের লাশ? এ কি করে হয়? হা-হা-হা-। কি মজা তো! চল সবাই গান গাই "রাজার মাথায় ব্যাঙের লাশ" বলে। সবাই গাইতে লাগল, রাজার মাথায় ব্যাঙের লাশ, রাজার মাথায় ব্যাঙের লাশ, রাজার মাথায় ব্যাঙের লাশ। লাল-লা-লা-লাল-লা। কি মজা, কি মজা! এত সুন্দর কথা। কবে থেকে শুনলাম আজ। রাজার মাথায় ব্যাঙের লাশ কি করে যে এল, তোমরা কি জান রে ভাইয়া? বলতে বলতে সবাই আনন্দ করতে লাগল আর রাজা মন খারাপ করে বসে থাকল।

No comments:

Post a Comment