Saturday, September 5, 2015

দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক

একদিন এক দার্শনিক কি নিয়ে চিন্তা করবে বুঝতে পারছিল না। তার বন্ধু ছিল এক বৈজ্ঞানিক। সে এসে বলল, "বন্ধু, শোন! গাছপালা, ফুল ও ফল নিয়ে ভাব। গাছ, ফুল ও ফল আমাদের অনেক কিছু উপকার করে। সেগুলো নিয়ে ভাব।" দার্শনিক বলল, "আচ্ছা, তুমি এখন তোমার কাজ কর। আমি এখন গাছপালা নিয়েই ভাবছি, তুমি যাও।" দার্শনিক গাছপালা নিয়ে চিন্তায় বসল। সে খাতা, কলম এসব নিয়ে বসে গেল। যা ভাবল সেগুলো লিখার জন্য। সে তখন ভেবে ভেবে দেখল, গাছ সত্যি অক্সিজেন দেয় কিনা। এটা পরীক্ষা করার জন্য সে একটুও গাছ নেই যেখানে এমন এক বদ্ধ ঘরে জানালা আটকানো অবস্থায় দরজা আটকানো অবস্থায় অন্ধকার স্থানে পরীক্ষা করল। গাছপালা ছাড়া সে নি:শ্বাস নিতে পারল না। তখন সে বদ্ধ ঘর থেকে বের হয়ে ভাবল, তাহলে সত্যিই গাছ অক্সিজেন দেয়। তখন সে বুঝে যাওয়ার পর সে খাতায় লিখে ফেলল। এখন আবার বৈজ্ঞানিকটি ঠিক পাচ্ছিল না, কি নিয়ে গবেষণা করবে। এখন দার্শনিক বৈজ্ঞানিকের ঘরে গিয়ে বলল, "বৈজ্ঞানিক, মানে আমার বন্ধু, শোন! তোমাকে একটা কথা বলি। তুমি মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে গবেষণা কর। রোগ, অসুখ, নিজের শরীরকে পরিস্কার করে রাখা সম্পর্কে গবেষণা কর তুমি। দেখবে, তাহলেই সব মানুষকে সুস্থ রাখতে পারবে। সব মানুষকে সুস্থ রাখলে সবাই তোমাকে টাকা-পয়সা ইত্যাদি দেবে। তুমি উপায় নিয়ে গবেষণা করে এর উপায় যদি তুমি সবাইকে বল, তাহলে সবাই তোমাকে টাকা দেবে। তুমি এগুলো নিয়ে গবেষণা কর।" তখন বৈজ্ঞানিক বলল, "ধন্যবাদ। তুমি এখন তোমার কাজ করতে চলে যাও।" এখন বৈজ্ঞানিকটি খাতা ও কলম নিয়ে শিরোনামে লিখল, "নিজের শরীরকে পরিস্কার রাখুন।" তারপর এক ঘন্টা ধরে চিন্তা করে পরে বর্ণনায় লিখল, "প্রতিদিন সকালে ও রাতে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। প্রতি সপ্তাহে শুক্রবার নখ কাটতে হবে। প্রতিদিন স্নান করতে হবে। টেবিলে রাখা খাবার সব সময় ঢেকে রাখতে হবে। না ঢাকা খাবার খাবে না। যদি তুমি টেবিলের উপর বাটিতে করে কিছু আপেল রাখ, পোকা বাইরে থেকে আসতেই থাকবে, আসতেই থাকবে। সেগুলো এসে ঘরও নোংরা করে ফেলবে, খাবারও নষ্ট করে ফেলবে, আর খাবার অর্ধেকটুকু তারাই খেয়ে নেবে। এইজন্য সব খাবার ঢেকে রাখতে হবে। ঢেকে রাখলে গন্ধটাও ঠিকমত পোকাদের নাকে যায় না। গন্ধ না পেলে পোকারা বোঝেও না যে, খাবার আছে। তখন তারা অন্যদিকে চলে যায়। আর প্রতিদিন সকাল বা দুপুরে ঘর ঝাড়ু দেবে আর মুছবে। দুই সপ্তাহ পর পর টেবিল সাবান দিয়ে মুছবে। স্কুল থেকে আসার পর জামা-কাপড় খুলে হ্যাঙ্গারে রাখবে। যখন দেখবে, জামা ময়লা, তখন মায়ের বলার আগেই বালতির মধ্যে রেখে দেবে জামা। বাইরে থেকে এসে হাত-মুখ পা সাবান দিয়ে ঘষে ঘষে ধোবে। মশায় ঘর ভরে গেলে মশার ওষুধ দেয়ার সাথে সাথে সবাই বাইরে বের হয়ে যাবে, মশার ওষুধ নাকে গেলে অসুখ হতে পারে। এমনকি অন্য যেকোন পোকার ওষুধ নাকে গেলে অসুস্থ হয়ে যেতে পার তোমরা। বাস এবং গাড়ি বাতাসকে ময়লা করে। বাড়ির চারপাশে গাছ লাগাবে। গাছ বাতাসগুলোকে পরিস্কার করে ফেলবে। পোষা প্রাণীদের সাথে খেলার পর হাত সাবান দিয়ে জোরে জোরে ঘষে ঘষে পরিস্কার করে ফেলবে। সাবান এবং পানি দিয়ে অবশ্যই হাত ধুবে। হাত না ধুলে ক্ষুধা পেলে যখন বুঝতে পারবে না তখন হাত চাটতে গেলে সেই ময়লাগুলো পেটে চলে যাবে।" এক ঘন্টা ধরে সেগুলো চিন্তা করে খাতায় লিখে ফেলল। ততক্ষণে দার্শনিক লিখল গাছ সম্পর্কে। প্রথমে ভাবল, "গাছের পাতা ছেড়া ভাল নয়। গাছের প্রাণ আছে। এখন গাছের পাতা ছিড়লে গাছ ব্যথা পায়। এটা অনেক মানুষে বোঝে না।" তখন সে এই মাত্র যেগুলো ভেবেছে সেটাই লিখেছে। আরো লিখল, "অনেক লোক বোঝে না, গাছের পাতা ছিড়লে গাছ কষ্ট পায়, গাছের ব্যথা লাগে। তাই সে লিখে দিল, যারা জানে যে, গাছের প্রাণ আছে, তারা তাদেরকে বুঝিয়ে বলার পরও যদি তারা না শোনে, তাহলে তাদের চুল ধরে টান দিবে। তারপর তাহলে যদি সে ব্যথা পায়, তখন তাকে বলবে, সে ব্যথা পেল কিনা। তখন বলতে হবে যে, দেখলে, গাছ এরকমই কষ্ট পায়। এটা বলতে হবে যারা জানে তাদেরকে।" এরপরে চিন্তা শেষ হল দার্শনিকের। সে বৈজ্ঞানিককে গিয়ে বলল, "বন্ধু! এবার কি নিয়ে গবেষণা করি বলতো।" "ফুরিয়ে গেছে, বন্ধু! আমারও তো ফুরিয়ে গেছে। একটু পড়ে দেখ না লেখাটা, আমি কি লিখেছি।" তখন দার্শনিক বলল, "ঠিক আছে, দাও দেখি।" দার্শনিক লেখা পড়ে বলল, "এই তো কেমন সুন্দর লিখেছে। আমার খাতা আমি নিয়ে আসি বাসা থেকে।" বলে দার্শনিকও দার্শনিকের খাতা নিয়ে গেল। খাতা নিয়ে আসার পর বৈজ্ঞানিক দেখে বলল, "খুব ভাল। তোমারটা অনেক ভাল হয়েছে। এবার শোন, এবার তাহলে তুমি ফুল নিয়ে গবেষণা কর। তার পরের সপ্তাহে ফল নিয়ে গবেষণা করবে।" "আর আমি কি নিয়ে গবেষণা করব?" "তা তুমিই ভাব।" "আমারটা ঠিক আছে। তুমি নিজেই ভেবে দেখ তুমি কি নিয়ে গবেষণা করতে চাও।" তখন বৈজ্ঞানিক ভাবল, "আমার বন্ধু আমার সাথে এমন করল কেন?" তখন বৈজ্ঞানিকটা বলল, "দাড়াও। আমি তোমাকে এত উপকার করলাম, আর তুমি আমার একটুও উপকার করলে না। আর তুমি আমার সাথে এমনভাবে কথা বললে, যেমনভাবে পাগলিরাও কথা বলে না।" বলেছে এভাবে, "এই, তুমি কি পাগল নাকি, আমি তোমাকে বলে দেব। আমি কি তোমার দাসী? যাও। আমি তোমার দাসী নই। আমি চলে যাচ্ছি। পাগলী কোথাকার!" এমনভাবে বলেছিল দার্শনিকটা। তখন বৈজ্ঞানিকটি মজা দেখাতে আসল। দার্শনিকের যখন ফুলের গবেষণা শেষ হয়ে ফলেরটাও শেষ হয়ে গেল, তখন দার্শনিক যখন কি নিয়ে ভাববে জানতে আসল, তখন বৈজ্ঞানিক তার আলমারি-টালমারি ওয়্যারড্রব-ট্রয়ারড্রব সব নিয়ে বিদেশে বাড়ি বানাতে গেল। বিদেশেই এখন থেকে সে থাকতে লাগল। আর দার্শনিকটাও কষ্টে নিজেই ভেবে ভেবে সবকিছু করল।

শিক্ষা: অন্য কেউ যদি বেশি সাহায্য করে তোমায়, তাহলে তুমি যদি ছোট সাহায্যও না কর, তার সাথে আজেবাজে ব্যবহার কর, তাহলে দার্শনিকটার মতই হবে। সাহায্য যে করে, তার সাথে দুর্ব্যবহার করতে হয় না।

No comments:

Post a Comment