Tuesday, September 15, 2015

সুরাবন রাজ্যের রাজা

এক রাজ্যের নাম ছিল সুরাবন। কিন্তু এই দেশের মানুষেরা শুধু মানুষদের অত্যাচার করত। বাদবাকি নানান দেশের সব মানুষ তাদেরকে ভাল বানানোর চেষ্টা করত; কেউই পারত না তা করতে। একটি ছোট্ট ছেলে আর ছোট মেয়ে ছিল। তারা ছিল একদম সমান সমান যমজ বুদ্ধি এবং যমজ শক্তি। দুজনের একই রকমের সব ছিল। সেই মেয়েটির নাম ছিল মধুমতি আর সেই ছেলেটির নাম ছিল আকিফ। তারা খুব কাছের ভাই-বোন। তারা অসুখ হলেও তারা একদিন একদম ভালভাবে শুয়ে থেকে বিশ্রাম নিয়ে ওষুধ খেয়ে খেয়ে একদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যেতে চাইল। তারা সেটা করতে পারত। তারা এটা কেন করত জান? স্কুল বেশিদিন তারা বাদ দিতে চায় না। একদিন স্কুলে টিচার এসে বলল, "Take out your diary. Write, after four days will be start summer vacation. So tomorrow is parents meeting. If English, Bangla and Maths has any problem, say to me. And other subjects to another miss. Ok? আমি কিন্তু ইংলিশে কথা বলব এখন থেকে। ইংলিশ ভার্সনে এসেছ। আর ডায়েরী বের করে সবাই এটা অবশ্যই লিখবে।" তখন বাচ্চারা ছুটি শেষে সবাই চলে গেল। সেই দুটি বাচ্চারা বাসায় ফিরে গিয়েই মাকে ডায়েরীটা দেখাল। মা বলল, "ইস! ইংরেজিতে তোমার কি গ্যানজাম। কেমন করেছ তুমি? অ্যাঁ!" মধুমতি বলল, "আমি বরং এখন যাই। তুমি ভাইকে সবকিছু বল। কী সমস্যা হয়েছে আবার। আমি এক্ষণি ব্যাগ গোছাতে যাই।" তখন আকীফের মা বলল, "ইস! তোর বোনটার কী অবস্থা দেখ। ইংলিশে word meaning এসেছে। কেজির ক্লাসে word meaning-কে সংজ্ঞা বলে শিখিয়েছিল। তাই সে এখন বাংলা অর্থ লিখতে বলেছিল নাম ছিল word meaning, সেটা দেখে সে সংজ্ঞা লিখে দিল। তোমার বোনের কাণ্ডটা একবার দেখেছ তুমি? এই বলে parents meeting-এ যাবে বলে ভাবল মা। তারপর মা সত্যি সত্যি parents meeting-এ গেল। গিয়ে টিচারকে সব ঘটনা খুলে বলল। তখন টিচার বলল, "আচ্ছা! সংজ্ঞা লিখে দিয়েছে কেন আপনার মেয়ে।" মা বলে, "আগের ক্লাসে থাকতে সে এটাই শিখেছিল।" তখন টিচার বলল, "What? কি হয়েছে? কি বলছেন আপনি? আগের ক্লাসে শিখেছে বলে এই ক্লাসেও শিখবে।? ক্লাস ওয়ার্কের খাতাটার দিকে তো একটু চেয়ে দেখবে। পরীক্ষার আগে তো parents meeting এমনিই দিয়েছিলাম আবার। সেদিন আসলেই তো আমি সব বলে দিতাম, কি করতে হবে। আমরা তো আর ওরকম বোকার মত সংজ্ঞা শিখিয়ে দেই না।" আর ওদিকে সুরাবনের রাজা সবার অত্যাচারের কথা ভাবছিল। রাজা কি করে মানুষদের উপর অত্যাচার কররে, এমন ভাবতে ভাবতে তার মাথাটাই গরম হয়ে যাচ্ছিল। প্রহরী এসে বলল, "রাজামশাই! পেপারে দিয়ে দিয়েছে কি জানেন? এবার তো আর আমাদের রক্ষে থাকবে না। পেপারে দিয়েছে, আমরা নাকি অত্যাচারের কথা ভাবছি।" তখন রাজা বলল, "আরে কি বলছিস তুই? অত্যাচার কি খারাপ কাজ নাকি যে, আমাদেরকে ওরা মারবে?" তারপর প্রহরী বলল, "হ্যাঁ, মহারাজ! অত্যাচার করলে ওরা কষ্ট পায়।" "কী! তোমাদের দেখে আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। তাই আমিও এখন শুরু করেছি। তোমরা থামাও অত্যাচার করা। আমাদের বিপদ ডেকে আনছ। অত্যাচার করলে পাপ হয়- এ কথাটা আমার মনে আগে আসেইনি। শুধু তোমাদের জন্যই এটা হয়েছে।" তবে এখন যে রাজা ভাল হয়েছে, এটা কারো পেপারে আসেনি। তারা শুধু ঐ রাজার উপর হামলা করতে আসছিল। রাজা বলল, "এই করছ কি, করছ কি? অত্যাচার একটি খারাপ কাজ। আমার মাথাটা ওরা নষ্ট করে দিয়েছিল সবাই। তোমরা এখন চলে যাও। পেপারে কেটে লিখে দাও, আমরা এখন ভাল হয়ে গেছি। দু'দিন আমাদের দেখ, আমরা কখনো আর অত্যাচার করব না।" সেইখানে ছিল মধুমতি আর আকীফ। আকিফ ছিল ওখানে। ওর মাও ছিল, ওর দাদা-দাদীও ছিল ওখানে। কেউ পেপার কাটল না। মধুমতির দাদা-দাদী আর মাও পেপার কাটা দিল না। কিনউত মধুমতি আর আকীফ বলল, "মা! একটা বুদ্ধি দেই তোমাকে। যখন এমন ভাল করে বুঝিয়ে বুঝিয়ে বলছে, এখন একটা কাটা দাওই না। বেচারী একটা লোককে এমনভাবে মারতে যাচ্ছ। ও তো নির্দোষও হয়ে থাকতে পারে।" আকিফ বলল, "মা, মা। বোন ঠিকই বলেছে। অমন মানুষকে কষ্ট দিতে হয়? আগে পরীক্ষা করে দেখতে তো হবে।" তখন ওরা দু'জনে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে যেন সবার কানে পৌঁছিয়ে যায় সেভাবে বলতে লাগল, "শোন, শোন! আমি বলছি যে, ও নির্দোষও হয়ে থাকতে পারে। ওকে এখন মারতে পারবে না। এসো, আমরা ওকে পরীক্ষা করার জন্য ভাবি।" সবাই মিলে ফিস-ফিস গুজ-গুজ করতে করতে মতলব আঁটতে থাকল, কী করে পরীক্ষা করবে। একজন ফিসফিস করতে করতে মতলবটা এটে ফেলল। মতলবটি হল, একজন সাহসী মানুষ পোশাকে ঐ রাজার সৈন্যদের রং করে রাখবে। সেই কাপড়টি পড়ে রাত্রেবেলা সেই রাজার কাছেই গিয়ে বসে থাকবে। বোন আর ভাইয়ের তো জময শক্তি, তাই এমন তাজা ওরা। আর তারপর সৈন্যদের ঘুমের ওষুধ খাইয়ে চারপাশ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখবে। তার আগে দুই-তিন দিন রাজার দাসী হয়ে থাকবে। তারপর দেখবে যে, রাজা আসলে ভাল না মন্দ। এই মতলবটি এঁটে ফেলল। তার পরের দিনই পোশাকে রং করে একজন রাজার প্রাসাদের দিকে সোজা চলে গেল। তখন রাজ্যের সামনে যে পাহারাদাররা থাকে, তাদেরকে বলল, "ভাই! আমি একটু রাজার জন্য ফল আনতে গিয়েছিলাম, সকালে উঠে খাওয়ার জন্য। আম তো ওনার খুবই পছন্দ, তাই আম নিয়ে এসেছি। আমি একটু বাইরে গিয়েছিলাম। তোমাদের জন্য একটু খাবার আছে। সেটা আমি পথে দৈত্যের হাত থেকে পেয়েছি। দৈত্য আমাকে সাহায্য করে এই জিনিসটি দিয়েছে।" আসলে এসব বানানো, বুঝলে তোমরা? সে হল মতলবটা এটেছিল যেটা সেইমত কাজ করছে। সেই ঘুমের ওষুধটি বের করে বলল, "এই যে, এই দুটি ওষুধ তোমরা খাও। এ দুটি খেলে তোমাদের আর কোন কাজ করতে কষ্ট হবে না। যদি হাতও কেটে যায়, তাহলেও কষ্ট হবে না। আর অমরের সংখ্যা বাড়িয়ে দেবে। এ দুটি খাও, নাও না। রাজার ফল রেখে আসতে হবে তো, খেয়ে নাও ঘট ঘট করে।" তখন দু'জন দুটি ওষুধ খেয়ে ফেলল। খাওয়ার পর প্রচণ্ড ঘুম আসতে লাগল। তখন বলতে লাগল, "হায়রে আমার কপাল! এ তুই কি খাওয়ালি? নিদ্রা যেতে তো চাইনি, চেয়েছিলাম অমরের সংখ্যা বাড়াতে আর কাজ করতে কষ্ট না লাগার জন্য। কি ওষুধ আনলিরে তুই? ওরে, মা, ওরে মা।" করতে করতে এখনি ঘুম পড়ে গেল তারা। তখন ঘুম পাড়িয়ে তাদেরকে নিয়ে ঝোপঝাড়ের পিছনে লুকিয়ে রাখল। তখন সে ভোরবেলা রাজাকে বলল, "রাজামশাই! শুনুন। কালকে না আমি দেখলাম, পাহারাদাররা পাহারাদারের জায়গায়ই নেই।" তখন সে এক রাজা বলল, "না, না। এ কি করে হয়? তাদের কাছে অনেক তলোয়ার, পিস্তল আছে। বাঘ-সিংহ তো আসবে না এ সুন্দর একটা বাগানের ভিতর দিয়ে। বাঘ থাকবে জঙ্গলে।" তখন আকীফের পরিবারে একজন এসেছে না? সে বলল, "রাজামশাই! সেজন্য আপনি প্রহরীদের পাঠান।" তারপর ঝোপঝাড়ের মধ্যে গিয়ে খুঁজে পেল রাজার প্রহরীরা। এবার খুজে পাওয়ার পর সব আবার ঠিকমতো হয়ে গেল। তখন রাজার সামনেই সে দাসীর মুকুট খুলে ফেলে বলল, "রাজামশাই! দেখুন, আমি কে?" "ওমা, আপনি? বলবেন তো। আমাকে ক্ষমা করবেন। তবে ক্ষমা না করলেও হবে আমাকে। আমি আমার দাসীদেরকে অমন খারাপভাবেই বলি। আপনি কেন দাসী হতে গেলেন আমার?" "আমি পরীক্ষা করছিলাম।" এখনই অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ভান করল। তখন রাজা বলল, "হায়রে! ওনার কি সর্বনাশ হলো গো! আরে কে কোথায় আছিস? দেখ না, কি হয়েছে! তোরা গেলি কোথায়?" তখন সবাই এসে বলল, "মহারাজ! অত্যাচার করতে চান না আপনি?" বললেন, "অত্যাচার তোরাই করতে চাস? যা, তোরা এক্ষণি ওর জন্য জল নিয়ে আয়, ওর গায়ে ছিটিয়ে দে।" তখন ছিটিয়ে দেয়ার আগেই সে বলল, "রাজামশাই! আমি বুঝতে পেরেছি, আপনি আসলে ভালই। এবার আমি ফিরে যাই আমার ঘরে।" বলে সে ফিরে গেল। তখন আকীফ আর মধুমতি একসঙ্গে বলল, "আপনি এসে গেছেন? কি হলো সেটা? রাজাটা কি খারাপ হয়েছিল, বলুন না।" তখন বলল, "ইস! রাজাটা কততো ভাল।" বলল, "কেন দাদা, আপনি কি করেছেন, আমার দাদাভাই?" "পরীক্ষা করেছি এই কথা দিয়ে। তারপর সে বলল, আরে আমার কপাল, এ কি হলো। তারপর দাসীদের বলল, তোমরাই শুরু করেছ। এমন ব্যবহার তো তোমরাই আমাকে শিখিয়েছ। খারাপ ব্যবহার করতে চান না আপনি?-এটা বলেছিল দাসীরা। তখন রাজা বলেছিল, অত্যাচার করলে ওরা কষ্ট পায়। এইসব বলে বলে অজ্ঞান অবস্থায় তাদের যদি কোন সেবা না করতে পারি, তাহলে অত্যাচার বলে সেটাকে। এটা বলেছিল রাজামশাই। এইসব বলে বলেই আমি বুঝলাম যে, সে আসলে ভাল।" তখন মা, দাদা-দাদী ও বাবাকে বলল, "কী মজা! তোমাদের কথা সত্যি হয়নি, হয়নি।" তখন মা বলল, "কী! আমার মুখে মুখে কথা বলছিস তোরা? দাঁড়া, একটু পরেই তোদের মজা আমি দেখাব। বুঝতে পারছিস, তুই?" তখন বাচ্চারা হাসল। বলল, "হা-হা-হা-হা-হা! মা, হি-হি-হি। তুমি নিজেই কি অত্যাচার করতে যাচ্ছ?" "ওমা, আমি অত্যাচার করছি কোথায়? ওরা আমাকে খারাপ কথা বলেছে, তাই তো আমি অত্যাচার করছি।" তখন আরো হেসে হেসে বলল, "হায়রে তোমার কপাল! আমরা তো তোমার সত্যিই কোন ক্ষতি করিনি। বড় কোন ক্ষতি তো করিনি। মুখের কথা তো একটা ভাষা বানিয়েছে তাই বলে। মুখের কথা শুনলেই কি অমন রেগে যেতে হবে? খারাপ কাজ, তাকে মারলে না অত্যাচার বলে তাকে। এমন করলে কি অত্যাচার বলে তাকে? হা-হা, হিহিহি।" তখন মা বলল, "আমায় তোরা ক্ষমা করে দে। আমার কথা ভুল হয়েছে।" কিন্তু দাদা-দাদীকে কেউ এমন বলে? বলে, "আচ্ছা, আর বলব না। যত্ত জ্বালা, ভ্যাদ, ভ্যাদ।" "আবার, যত্ত বেশি কথা বলিস?" এরপর প্রমাণ হয়ে গেল, কে ভাল, কে খারাপ। এরপর প্রমাণ হয়ে গেল, কে ভাল, কে খারাপ। রাজা যে আসলে ভাল, তা সবার কাছে প্রমাণ হয়ে গেল। তারপর থেকে সবাই আবার যার যার কাজ করতে লাগল। এবার সবাই গল্পের ঝুড়ি থেকে চলে গেল।

No comments:

Post a Comment