Monday, September 14, 2015

শাফিফের গল্প

একদিন এক ছেলে বসে ভিডিও গেম খেলছিল। অমনি তার মা এসে পড়ল। শাফিফ বলল, "মা, তুমি আর আসার সময় পেলে না? তুমি এক্ষুণি চলে যাও। নাহলে আমি কিন্তু আজকে আর ভাত খাব না। তুমি কেন আমার গেমটা আজ ওভার করে দিলে? তুমি এলে আর আমার নজর তোমার দিকে গেল। আর পট করে আমার গেমটা ওভার হয়ে গেল। তুমি এক্ষুণি চলে যাও।" তখন মা বলল, "আরে আমার খোকা, আরে আমার সোনার শাফিফ, এমন মাকে কেউ বলে? দাড়াও দেখাচ্ছি মজা। আমি তোমাকে আরো দশটি ভিডিও গেমস কিনে দিতে পারব। কিন্তু আমি যা খবর নিয়ে এসেছি সেটা তো শোন আগে। মাকে কেউ অপমান করে এভাবে? এখনকার কথাটা নাহয় একটু শোন। শান্ত হও তুমি।" শাফিফ বলল, "মা, এটা কিন্তু ভাল হচ্ছে না।" মা বলল, "আচ্ছা, শোন তো আমার কথাটা।" তখন মা বলল, "তোর বন্ধুরা এসে কতক্ষণ ধরে বসে আছে খেলার জন্য।" শাফিফ বলল, "মা! তা আগে বলবে তো তুমি। ভিডিও গেমস খেলার সময়ই তুমি এইসব খবর নিয়ে এলে। তুমি এক্ষুণি আমার জন্য দশটি গেম না আনলে বন্ধুদেরকে আমি এক্ষুণি তাড়িয়ে দেব।" মা আর কী করবে! ছোট ভাইয়ের কাছে একটা গেম ছিল, কিন্তু ছোট ভাইটা ঘুমাচ্ছিল। সেই গেমসটা নিল এবং আলমারি খুলে আরো পুরানো গেমস আছে তাতে ব্যাটারি ভরে দিল। তখন শাফিফ বলল, "এবার তাহলে বন্ধুদেরকে ডাকুন।" মা বন্ধুদেরকে ডেকে বলল, "ওরে আমার সোনারা! তোদের বন্ধু তো এখনো বসে বসে ভিডিও গেমস খেলছে। তোদের সাথে খেলার জন্য পাত্তাই দিচ্ছে না, আমার সোনা মানিক। দেখ না, তোমাদের বন্ধু কেমন করে সন্ধ্যার সময় ভিডিও গেম খেলতে বসে আছে। আমার সোনা মানিকরা, গিয়ে দেখই না, কী করছে। ভালই লাগে না আমার।" বন্ধুরা শাফিফের কাছে গিয়ে দেখল, শাফিফ বসে বসে গেমস খেলছে। শাফিফের কাছে গিয়ে বলল, "বন্ধু, বন্ধু, ও বন্ধু! কি করছ কি তুমি? আমাদের সাথে খেলবে না তুমি?" তখন শাফিফ তো মায়ের কাছ থেকে দশটি ভিডিও গেমস নিয়েছিল। বন্ধুও দশটি ছিল। তখন শাফিফ বলল, "তোরা এসে গেছিস। আমি তোদের সাথে খেলব না আজ। প্রতিদিন তোদের সাথে খেলি। আজ আমার সাথে খেলবি তোরা।" তখন শাফিফ ভিডিও গেমগুলো দিল। তখন বন্ধুরা বলল, "ছি ছি ছি ছি! তুমি কুট্টি বাচ্চাদের মত ভিডিও গেমস খেল? ফুটবল খেলবে না?" বন্ধুরা আবার হেসে হেসে বলে, "আস, আমার সোনা বাবু। দাও দেখি ভিডিও গেম কত মজা! হা-হা-হা-হা-হা!" এই বলে বন্ধুরা হাসতে লাগল।" তখন বন্ধুরা ভিডিও গেমস খেলল। খেলে সবাই অনেক মজা পেল। সবাই বলল, "সত্যিই তো অনেক মজার গেম। তুই এই গেমস কোথায় পেলি? এমন সুন্দর ভিডিও গেমস আমি কক্ষণো দেখিনি। দশ মিনিটের মধ্যে ফুলদানিতে ফুল রাখতে হয়। একটি বাক্স থেকে বল বের হয়। সারাক্ষণ বের হতেই থাকে। বলের চারপাশ দিয়ে ফুলদানিতে ফুলটি রাখতে হয়। নাহলে গেম ওভার হয়ে যায়, সময় শেষ হয়ে যায়। এ তো ভারি মজার খেলা!" শাফিফ বলল, "দেখলে তো বন্ধুরা! আমার কেমন ভিডিও গেমস।" বন্ধুরা বলল, "এখন থেকে প্রতিদিন তোর বাসায় আসব। তোর সাথেই ভিডিও গেম খেলব। ফুটবল খেলতে আর ভাল লাগে না। মানুষের গায়ে ফুটবল লাগলে আমাদের নামে দোষ হয়। আর কাদামাটির সময় বৃষ্টি পড়লে তার মধ্যে যদি বল পড়ে, পা-টা ভিজে যায়, তখন মা-বাবা বকা দেয় যে, ময়লা-টয়লা গায়ে মাখিয়ে খালি অসুখ বাজায়। কাদামাটিতে কি থাকে জান? কাদামাটিতে অনেক মানুষ মূত্রত্যাগ করে। তার মধ্যে ইউরিয়া থাকে। এটা বলে মা-বাবারা কাদামাটিতে বল পড়ে সেই পানি দিয়ে পা-টা ভিজে গেলে।" এখন থেকে প্রতিদিন ভিডিও গেমসই খেলে ওরা। ওদিকে মা তো রেগে  একদম মাথা গরম হয়ে যায়। মা ভাবতে থাকে, ইস! ভিডিও গেমস নিয়ে শুরু হল মাখামাখি একদম। মনে হয় যেন খেলনার দোকান, টেস্ট করে টেস্ট করে দেখছে সারাক্ষণ। মনেহয় যেন মজার চোটে টেস্ট করতে করতে মাথাটাই খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আমার মাথা, না তাদের মাথা- কিচ্ছুই বুঝতে পারছি না। মা গিয়ে বাবার কাছে বলল, "দেখ তোমার শাফিফের কাণ্ড! আমি কিন্তু সবাইকে রেখে বাপের বাড়ি চলে যাব। ভিডিও গেমস খেলে আর সময় নষ্ট করে। নিজে তোমার সংসার চালাও। আমার সব কাজগুলো তুমি করবে। ভিডিও গেমস না থামাতে পারলে তোমার মাথাটা যদি আজ আমি না ফাটিয়েছি, তাহলে বাপের বাড়ি থেকে আমি আর ফিরেই আসব না। আর তোমাকে যে আমি বিয়ে করেছি, বিয়েটাই নষ্ট হয়ে যাবে তোমার সাথে। কালই আমি বাপের বাড়ি চলে যাব।"- বলে বউ বিছানায় গিয়ে শুযে পড়ল। তখন বাবা একটা বুদ্ধি খুজে পেল। বাবা একটা ঘর বানালো। তার মধ্যে সমস্ত টিচারদের ডাকল স্কুলের। তখন টিচারদের বলল, "আপনারা নিজেরাই একটা বই তৈরি করে ফটোকপি করে সবাইকে দিয়ে দেবেন। তার মধ্যে ভিডিও গেমস সম্পর্কেও থাকবে। বিভিন্ন রকম ভিডিও গেমসের ছবি দেওয়া থাকবে। আর প্রতিদিন সেই চাপ্টারটাই পড়াবেন। তাহলে বাচ্চারা মজাও পাবে।" এবার সে টিচারদেরকে যেতে বলল আর নিজেও চলে গেল। তোমরা কি জান, শাফিফের বাবা কেন এ কাজটা করেছে? কারণ, ক্লাসে ভিডিও গেম সম্পর্কে পড়তে পড়তে ভিডিও গেম খেলার নেশাটা চলে যাবে। পরের দিন মা সকালে উঠে বাবাকে ডেকে তুলে বলল, "আমি কিন্তু আজই চলে যাব বাপের বাড়ি।" তখন জামাই বলল, "থাক, আর কষ্ট করে টিকেট কাটতে হবে না। দুই দিন একটু থাক, অপেক্ষা করে থেকো। দুই দিনের জন্য মাত্র। পরে দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। ব্যাগ-ট্যাগ গুছানোর দরকার নেই। পরে যেতে হলে আমিই গুছিয়ে দেব আনে।" তখন বউ বলল, "ব্যাগ গুছাতে কি জান তুমি? মাথা নষ্ট কর শুধু! কর, কর, আমার ব্যাগ গুছানো লাগবে না।" পরে বউ রাগ হয়ে সত্যি সত্যিই করল না। দু'দিন স্কুলে যাওয়ার পরই ভিডিও গেমস নেশাটা কমে গেল। আর সব নেশা চলে গেল। এখন বউ বলল, "জামাই! তোমাকে এইরকম নামে ডাকতে হচ্ছে এই কাজ করার জন্য। ধন্যবাদ তোমাকে আমি দেবই না। কারণ, এতদিন তুমি কি করছিলে? বুদ্ধি খাটাওনি কেন তুমি? ধন্যবাদের শুধু ধন্যটুকু আমি বলব। বাদটা পরেই বলব। যখন তুমি আরো ভাল একটা কাজ করবে। তারপর এখন থেকে ভিডিও গেমস খেলা বাদ, আর জামাই আর বউয়ের বকাবকিও বাদ। গল্প শেষ।

No comments:

Post a Comment