Thursday, September 10, 2015

ছাতুর চকলেট

একদিন এক বাবু চকলেট খাওয়ার জন্য জেদ ধরল। কিন্তু সে ভালমত দাত ব্রাশ করত না, একটা ডলা দিয়েই রেখে দিত। বড় বোন তো ভালমত দাত ব্রাশ করতে পারে। তাই বাবা-মা তাকে বেশি বেশি চকলেট কিনে দিত। তাই বড় বোন চকলেট খেয়ে খোসাগুলো খেলার জন্য রেখে দিত। কিন্তু ছোট বোন খেলতে দিত না। বাইরে ফু দিয়ে উড়িয়ে উড়িয়ে দিত। একদিন মা-বাবা বড় বোনটির কাছ থেকে চার-পাঁচটি খোসা নিল। তারপর ছাতু ছোট ছোট গোল গোল করে চকলেটের খোসার মধ্যে ভরে ভরে জমিয়ে রাখতে লাগল। বাবুর (ছোট বোনের) যেদিন জন্মদিন ছিল, সেদিন কেকের সাথে একটা পলিথিনের মধ্যে সেই ছাতুর চকলেটগুলো ভরে দিল। তারপর কেকটা যখন টেবিলে রাখল, কেকের প্যাকেটের সাথে বাবুটি একটি পলিথিন দেখতে পেল। সেই পলিথিনটি নিয়ে দেখল অনেকগুলো চকলেট। সে ছাতুগুলোকে চকলেট ভেবে খুশীমনে খেতে লাগল। সে বলল, "ও মা, আমার জন্য দশটি চকলেট রেখে দিয়েছে মা। মা-বাবা কততো ভাল! আমি  চকলেট খেতে পারছি, মা বকা দিচ্ছে না। কি মজা, আমি চকলেট খাব। দশটি চকলেট দিয়ে দিয়েছে। আমার খেতে খুব মজা লাগবে, নিশ্চয়ই। সে খেয়ে দেখল, সত্যিই অনেক মজা। সে মাকে বলতে গেলে, "মা! আমার জন্য আরো তিন-চারটি  চকলেট দোকান থেকে কিনে নিয়ে এসো।" এখন তো মা-বাবা কি কাজ করবে? তারা চিন্তায় পড়ে গেল, দোকান থেকে আনবে কিভাবে। দোকানেরটা আনলে যে দাঁতে পোকা হয়ে যাবে। বাবাকে একটা বুদ্ধি দিল মা। মা বলল, "শোন! আমি বড় বোনের কাছ থেকে তিন-চারটি খোসা নিয়ে আসছি। আর আমি দুটো ছাতু বাটিতে ভরে একটি ব্যাগের মধ্যে রেখে দিচ্ছি। তুমি সেই ব্যাগটি নিয়ে বাইরে গিয়ে একটা পরিস্কার জায়গায় বানিয়ে বানিয়ে নিয়ে আসবে। দোকানের কাছে যেতে হবে না। ছাতু ব্যাগে ভরে দেওয়ার পর ব্যাগটা নিয়ে চলে আসবে। আর বাচ্চাকে বলবে, আমার অফিসে একটু কাজ আছে। আমি কাজও করব, তোমার জন্য চকলেটও নিয়ে আসব। এই বলবে বাচ্চাকে। কিন্তু বাচ্চাকে ব্যাগের ভিতর কি আছে তা দেখতে দেবে না।" মা খোসা এনে দিল সেগুলো ব্যাগে ভরার জন্য। তারপর বাচ্চা জিজ্ঞেস করল, "বাবা, এই ব্যাগটি কিসের?" বাবা বলল, "আমার অফিস আছে। অফিসের জন্য একটা হার্ড ডিস্ক লাগবে। সেইটা এই ব্যাগের মধ্যে রেখেছি।" বাবুটি বলল, "দেখিতো, কেমন হার্ডডিস্ক!" এখন বাবা কি করবে, আর কোথায়ই বা যাবে। বলল, "মামুনি! শোন, এই হার্ডডিস্ক আর পুরান কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক একই রকম। আমি বরং পুরানটা নিয়ে আসব। তখন তুমি দেখো। সব একই রকমের হার্ডডিস্ক। এখন আমার অফিসে তাড়া আছে। তাড়াতাড়ি যেতে হবে, সময় নেই।" বাবু বলল, "তাও একটুখানি উঁকি দিয়ে দেখি না!" বলে, "এই যে, এই এক মিনিট পরই অফিসের গেইট বন্ধ করে দেবে। আমি আসি।"- বলে বাবা দৌড় দিয়ে সাঁই সাঁই করে চলে গেল। এখন সে তো আর অফিসে যাচ্ছে না। সে একটি নিরাপদ জায়গায় রেখে চকলেট বানিয়ে নিয়ে এল। এবার মেঝেতে হামাগুড়ি দিয়ে দিয়ে দেরাজ খুলে হার্ডডিস্ক বের করতে গেল। বাবুও তখন দেরাজ থেকে খেলনা বের করার জন্য গেল। বাবাকে দেখে সে চমকে উঠে বলল, "বাবা, তুমি এখানে কি করছ? আমাকে এক্ষুণি হার্ডডিস্ক দেখাও। নাহলে আমি নিজেই তোমার পকেট থেকে টাকা চুরি করে বাইরে গিয়ে চকলেট কিনে নিয়ে আসব। হার্ডডিস্ক দেখাও আমাকে। না দেখালে তোমাকে আমি জোরে বকা ধমক দিব।" বাবা কী আর করবে! বাবা বলল, "আমি তো হার্ডডিস্ক দেরাজে ঢুকিয়েই ফেলেছি, তোমাকে দেখানোর কথা ভুলেই গিয়েছিলাম।" এই বলে বাবা দেরাজ থেকে হার্ডডিস্ক বের করে দেখাল। তারপর ছাতুর চকলেট খেয়ে বাবুটি বলল, "আচ্ছা। আগামীকালও আমার জন্য দুটি চকেলেট আনবে। সে সময় আমিও তোমার সাথে আনতে যাব।" বলে, "মা, আগামীকাল শুক্রবার। দোকান বন্ধ থাকবে।" আসলে তার পরেরদিন ছিল সোমবার। তাহলে বাবুটি বলল, "আমার আজকে পরীক্ষা ছিল। দেখবে, আমি কি পেয়েছি?" দেখাতে গিয়ে হঠাত বাবুট সেই দিনের তারিখটি দেখল। তার পরে তো সেই তারিখের পরে যে সংখ্যা সেটাই হবে আগামীকালকের তারিখ। বাবুটি দেখে বলল, "বাবা, এই তারিখে তো সোমবার। তুমি কেন শুক্রবার বলছ? কালকে আমি যাবই তোমার সাথে। তুমি যদি না গেছ, তোমার খবর আছে। আমি মাকে বলে দেব। তোমার সাথে আমি যাব।" এই বলে বাবুটি রাত হওয়ার অপেক্ষায় আছে। পাচ ঘন্টা পর রাত হয়ে এল। তখন বাবুটি সকাল হওয়ার অপেক্ষায় বসে পড়ল। মা ভাত নিয়ে এসে পড়ল। "এই যে চকলেট খাওয়া বুড়ি! ভাত খেতে তো হবে। চকলেটের ভাবনা ভাবলে তো হবে না।" কিন্তু বাবুটি ভাত খেতে যেতে গেল না। বসে বসে দোকানে যাওয়ার চিন্তাই করতে লাগল। মা এসে বলল, এখনো তুমি খেতেই যাওনি।" তখন বাবুটি বলল, "মা, আমার তো খাওয়া শেষ। আমি তো এক মিনিটের মধ্যেই খাওয়া শিখে গেছি। তুমি জান না মা? কালকে আমি পাশের বাড়ির গরুকে দেখে তার খাওয়ার মত তাড়াতাড়ি খাওয়া শিখে গেছি। আমার খাওয়া শেষ, মা।" তখন মা বলল, "মা, তুই না কালগে বলেছিস যে, আজকে মায়ের হাতে ভাত খাবি। ভাতের পাাতিলে তো এক দানা ভাতও কমেনি, যেটুকু ছিল আগে।" তখন বাবুটি বলল, "মা, আমি পাকঘরের ভাত নিয়ে এসে খেয়েছি।" মা বলল, "পাকঘরে তো কোন ভাতই ছিল না। তুমি কি করে খেলে?" তখন বাবুটি বলল, "মা, আমি পাকঘরের বারান্দায় ভাত খেয়েছি।" "ইস, রান্নাঘরের বারান্দায় তো ভাতের একটা দানাও ছিল না। রান্নাঘরে কি ভাত থাকে? একদিনও ভাত থাকে না রান্নাঘরের বারান্দায়।" তখন বলল, "ইস, মা! আমি তো পাশের বাড়িতে ঘুরতে গিয়েছিলাম। তখনই আমাকে ভাত-মাংস খেতে দিল।" মা বলল, "ইস, মা রে তুমি ভাতই খাওনি। এতবার পাল্টিয়ে পাল্টিয়ে বলছ। আস, ভাত খেতে আস। দুষ্টু মেয়ে, মিথ্যে বলে।" শেষ পর্যন্ত বাচ্চাকে খাওয়াতে পারল মা। কিন্তু দাঁত মাজাতে পারছে না। দাত সে কিছুতেই মাজছে না। শেষে বাচ্চাকে বলল, "মা, তোমার মুখে একটা চকলেট যাদু করে দিয়ে দিচ্ছি, হা কর।" তখন বাবু হা করল আর দাঁত মাজিয়ে দিল। তারপর পানির সাথে তিতা খাবারের রস দিল। তারপর বেসিনের কাছে গিয়ে তার মুখের মধ্যে সেই রসটা দিয়ে দিল, তারপর সে ওয়াক ওয়াক করে ফেলল। তখন আবার দিতে গেল, বলল, "মা এটা চকলেটের রস।" তখন আবার তিতা লাগল, মুখ থেকে ফেলে দিল। এতে কুলি করার কাজটা হয়ে গেল। আর তিতা রসটা ছিল যা মুখকে পরিস্কার করে। তারপর বিছানায় এনে শোয়ালো। কিন্তু সে কিছুতেই ভালভাবে শোবে না। উল্টিয়ে পাল্টিয়ে চিন্তা করতে লাগল দোকানের কথা। মা-বাবা কেউই তাকে ঠিকমত শোয়াতে পারল না। শেষে মা বলল, "যদি তুমি এমনভাবে ঘুমাও, তাহলে তোমার যত চকলেট আছে সব পরীরা নিয়ে চলে যাবে। আর যদি তুমি ঠিকমত করে ঘুমাও, তাহলে যেগুলো আছে সেগুলোও থাকবে আবার আরো অনেক চকলেট দেবে পরী। ফুলপরী এসে দিয়ে দিবে। মোচড়ামুচড়ি করলে তো সব চকলেট নিয়ে যাবে পরীরা।" বাবুটা বলল, "কোন্‌ পরী?" মা বলল, "ঐ যে মা, অনেকদিন আগে তোমার সজিব ভাইয়া এসে একটা ফুলপরীর গল্প শুনিয়েছিল সেই পরীটা।" "মা, ঐ পরীটা তো ভাল। কেন মানুষের জিনিস নেবে?" "আরে বাবা, যারা ভাল মত থাকে না, তাদেরকে ক্ষতি করে। আর যারা ভালমত লক্ষ্মী হয়ে থাকে তাদেরকে আরো দেয়।" তখন বাবু বলল, "আচ্ছা, গল্পে কখনো সত্যি হয় না। তার পরেও পরীরা সত্যি থাকে না। পরী হল মেয়ে জিন। জিনরা মানুষের ভাল কখনো করে না, যদিও তাদের কোন উপকার করে থাকে।" "এই, ঘুমানোর সময় কখনো জিনদের গল্প করতে হয় না। জিনদের গল্প করলে সত্যি সত্যি জিন আসে।"- মা বলল। বাবু বলল, "না, মা। পরীর গল্প বলতে তুমিই শুধু করলে।" মা বলল, "আচ্ছা, আমিই শুরু করেছি। এবার তাহলে ঘুমাও। একটুও কিন্তু চোখ খোলার চেষ্টা করবে না। আমি সারারাত জেগে থাকব, ঘুমাও কিনা দেখব।" আসলে এটা ঘুম পাড়ানোর জন্য বলেছে। কিন্তু মা তো আসলে ঘুমোবেই। এটা বাবুটি জেনে গেল। সে চুপি চুপি উঠে বাবার পকেট থেকে টাকা নিয়ে পকেটের সামনে গিয়ে টাকা চুরি করল। টাকা নিয়ে সে কোয়ার্টারের সামনেই যে একটা দোকান আছে ওখান থেকে তিন-চারটি চকলেট নিয়ে এসে টেবিলের উপর রেখে দিল যে, সকালে উঠে খাবে। সকালে বাবা আরো চকলেট নিয়ে আসবে, তাহলে আমি বেশি চকলেট খেতে পারব- এই ভেবে। সেই চকলেট রাখল। চকলেট ওখানে রাখার পর সকাল হল। তারপর মা বাবুর আগে উঠে দেখে, টেবিলের উপর অনেক চকলেট রাখা। তাই বাবা করল কি জান? বড় বোনের কাছ থেকে খোসা নিয়ে চকলেটগুলো পাল্টে দিল। আর পকেটের কাছে গিয়ে দেখল, দশ টাকা উধাও। 

No comments:

Post a Comment