Friday, March 18, 2016

লটারীর বিড়ম্বনা

অদ্ভুত ঘটনা। এই গল্পটা শুনলে খুব অদ্ভুত লাগবে। তেমন অদ্ভুত নয়। এটা হচ্ছে গিয়ে শুধু লটারীর জন্যই এ ঘটনাটা হয়েছে। এক শহরে একটি মেয়ে বাস করতো। তার একটি ছোট বোন ছিল। বড় বোনের নাম রুপালী, ছোট বোনের নাম সোনালী। রূপালী পাঁচ বছর বয়স থেকেই মাকে বলে, "মা, আমি কিন্তু বড় হয়ে ডাক্তার হব।" তখন মা বলে, "তাহলে ডাক্তারের মত পড়াশোনা কর।" সে ছোটবেলা থেকে ডাক্তারের মতো অনেক পড়াশোনা করেছে, অনেক ধরনের অংক করেছে, অনেক ডাক্তারী বই পড়েছে, অনেক ধরনের পাতা-টাতা নিয়ে ওষুধ দিয়ে কি হয় না হয় সব জেনেছে। কিন্তু বড় হওয়ার পর তার বাবা বলল, "ডাক্তার হওয়ার জন্য কোন পরীক্ষায় পাস করতে হবে।" মা বলল, "ওখানে অনেকগুলো পরীক্ষা আছে। সবগুলো পরীক্ষাই দিতে হবে।" দাদা বলল, "এক নম্বর গানের শিল্পী, দুই নম্বর ডাক্তার, তিন নম্বর পাইলট, চার নম্বর ইঞ্জিনিয়ার এই কয়টা পরীক্ষাই দিতে হবে। আমি নিশ্চিত, ও ডাক্তারই হবে। কারণ, অনেক ডাক্তারের মতন পড়াশোনা করেছে। এমনকি দু'জন আত্মীয় এসেছিল, বলেছিল কিছু রোগ আছে, সেগুলোও সে পাতা দিয়ে সারিয়ে তুলতে পেরেছে।" সবার প্রথমে বড় বোন রূপালী বলল, "আমি সবার প্রথমে ডাক্তারী পড়ার পরীক্ষাটা দিতে চাই।" তখন মা বলল, "উহ! পরীক্ষা তো কত পরে। আগে ভাল করে পড়ে দেখ দেখি। তার পরে না পরীক্ষা।" তখন রূপালী বলল, "আমি তো অনেক কিছু পড়েছি, অনেক কিছু পারি। তাহলে আমার আর পড়তে হবে না।" তখন মা বলল, "অমন কথা বলতে নেই। শেষমেষ দেখা যাবে আসল জিনিসই ভুল করেছ, আর ডাক্তার হতে পারলে না। নাও, পড়তে বস। তুমি বাবাকে বলে দাও যে, কি কি পাতা আনতে হবে। তোমার বাবা অনেক রকম পাতাই আনতে পারবে। তোমার বাবা অনেক লাফালাফি এবং দৌড়াতে পারে। যত দূরেই হোক না কেন, সে পারবে। হাটতে হাটতে শুধু দেখবে, গাছের দিক তাকিয়ে শুধু দেখবে আর বোঝার চেষ্টা করবে কোন্‌টা তুমি আনতে চেয়েছ।" এবার বাবা পাতার খোঁজে গেল। কিন্তু পরীক্ষা করবে কাকে দিয়ে? নাটকের মধ্যে যে এমন লোক আছে যে প্রাণের ঝুঁকিও নিতে পারে, তেমন তো বাস্তবে কোন মানুষ নেই। যদি উল্টো ফল হয়! মা বলল, "ঠিক আছে, একটুখানি ডাক্তার হবার জন্য একটা মানুষকে মেরে ফেলার তো কোন দরকার নেই। যদি তুমি ওষুধ ভুল কর, তুমি যা জান তাই পড়। অথবা ছোটখাটো ইঁদুর-টিদুরকেও খাইয়ে পরীক্ষা করতে পার।" তখন রূপালী পড়ল। পরীক্ষার দিন এল বটে। কালই সেই পরীক্ষা। রূপালী ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুম থেকে উঠে মাকে বলল যে, "কি সব দিয়ে পরীক্ষা হবে মা?" তখন মা বলল যে, "ওষুধ বানাতেও দিতে পারে। অথবা অন্য কিছুও দিতে পারে। হয়তো সবার সাথে একজন করে লোক থাকবে, তাকে বলতে হবে যে, এই পাতা আন, ওই পাতা আন, ঐ জিনিসটা আন, এই জিনিসটা আন। এরকম বলে দিলেই হয়তো এনে দিতে পারবে। কিন্তু আসল জিনিসটাই কিন্তু ওনাদের দিয়ে বানানো যাবে না। অন্য কিছুতে তুমি শুধু হাত গুটিয়ে বসে থাকবে। কারণ, তুমি তো ডাক্তার হতে চাও, তাই না? আবার এমন কিছু না হয় যে, তুমি ডাক্তারী একটাই ভাল করে পড়লে না। অযথা শুধু পরীক্ষা দিলে, একটাতেও হতে পারলে না- এমন যেন আবার না হয়। তারপর জলদি জলদি সে পরীক্ষা দিতে বেরিয়ে পড়ল। পরীক্ষার হল এল। মা বলেছিল যা, তাই ঠিক। রূপালী বলল, এই পাতা আন, ঐ পাতা আন। বলে দিল, তখন লোকেরা এনে দিল। পরীক্ষায় ওষুধ বানাতে দিল। এটাও পড়তে দিল যে, সবার ভাগেই একজন একজন করে অসুস্থ রোগী দেয়া হবে, তাদের অসুখ সারিয়ে তুলতে হবে। উল্টো ফল যেন না হয়। এই হল পরীক্ষা। আর যদি উল্টো ফল হয়, এজন্য আগে থেকেই তার ওষুধ (এন্টিডট) বানিয়ে রাখা হল। কারণ, অন্য ওষুধে যদি উল্টো ফল হয়, তাহলে সেই ওষুধ দিয়ে আবার সারাবে। এরপর অন্য পরীক্ষাগুলো দিল। ঐ পরীক্ষা শেষ। রেজাল্টে রূপালীর সঙ্গে একটা অদ্ভুত ঘটনা হয়ে গেল। রূপালী হয়ে গেল গানের শিল্পী। কারণ, সে লটারীতে ডাক্তারী পায়নি। সে কিন্তু গানের শিল্পী হওয়ার পরীক্ষায় হাত গুটিয়ে বসে ছিল। কি করে হলো এটা? মা লটারীতে গিয়ে সব দেখল। বাবা লটারীর সময় ছিল না। বাবা বাড়িতে ছিল। বাবার কাছে এসে সব ঘটনা বলল। বাবা তো অবাক! এটা কি হলো? কি করে হলো এটা? ডাক্তারী সবচেয়ে ভাল শিখেছে। অথচ লটারীতেই হলো না? সে গানের শিল্পী হলো? ভেবেছিলাম, সে ডাক্তার হয়ে কতই না মানুষের রোগ সারিয়ে দিতে পারবে গো! এইটা আবার কি হলো? কিন্তু এবার সোনালী বলল, "কি হলো গো? এত অদ্ভুত অদ্ভুত কি ঘটনা ঘটলো?" তখন মা-বাবা বলল, "ও সোনালী! তুই তোর বড় বোনকে নিয়ে কিচ্ছু বুঝবি না। ছোট একটা পিচ্চি মেয়ে।"- বলে বকল। আর অমনি সোনালী কান্নাকাটি শুরু করে দিল। তখন বাবা আবার কোলে নিল। বলছে, "এই মেয়ে, কাঁদে নাতো।" তখন সোনালীকে বলল, "এই মেয়ে, কাঁদে না। তুমি নাকি সবাইকে শুধু বলে বেড়াও, আমি বড় হয়েছি। আমি এখন সব কথা স্বাভাবিক বলতে পারি। দেখ, দেখ। আর এখন? এখন তো কিছুই পারছ না। এমন করে কেউ কান্না করে নাকি? আর কোলে নিতে পারব না, যাও। কান্না করছ কেন, অ্যাঁ? তুমি নাকি বড়। যাও, বড় হয়ে থাক। ছোট হয়ো না আবার। সবাই আবার ছোট বলবে। তখন তো আবার রাগ হবে ঠিকই।" শুনে বলল, "ঠিক আছে, নামিয়ে দাও। তুমি পচা।" তারপর সোনালী নামল। বলল, "আমাকে কিন্তু উত্তর দাও। কি হয়েছে রূপালীর?" তারপর মা বলল, "আবার রূপালী? রূপালী আপু।" এবার ভ্যাঁ দিয়া কাইন্দা দিছে (কেঁদে দিল)। বাবা বলল, "বলেছি না, কেঁদো না। সবাই ছোট বলবে।" তখন আবার কান্না থামল। তখন বলল, "রূপালী আপুর কি হয়েছে, বল না।" তখন মা বলল, "সব কথায় প্রশ্ন করতে নেই।" আবারো কান্না শুরু করে দিল। তখন বাবা বলল, "আবারো কাঁদে। কাঁদলে ছোট মেয়ে বলবে।" তখন বলল, "ঠিক আছে। কিন্তু একটু বল না, কি হয়েছে?" তখন বাবা বলল, "না, না। এসব জেনে তোমার কাজ নেই। তুমি বুঝবে না। যাও, তুমি তোমার কাজ কর।" তখন সোনালী বলল, "আমার আবার কি কাজ গো?" তখন বাবা বলল, "যাও, পড়ালেখা কর।" সোনালী বলল, "ঠিক আছে, যাই।" এবার রূপালী গানের শিল্পী হয়ে গেল। ছোট বোন সোনালী বলল, "আমার বড় আপু যখন গানের শিল্পী হয়েছে, আমিও গান শিখব, গানের শিল্পী হব।" তখন মাকে বলল যে, "কালকেই মার্কেটে যাব। হারমোনিয়াম, একতারা, গীটার সব কিনে আনব।" তখন মা বলে যে, "ঠিক আছে। কাল না হয় যাওয়া যাবে। এখন পড়ে ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়।" পরের দিন হল। সোনালী বলল, "মা! দাও না হারমোনিয়াম, একতারা, গীটার এসব কিনে।" তখন মা বলল, "উহ! তুমি কি রূপালীর মত বড় হয়েছ? কেবল চার-পাঁচ বছর বয়স। এখন ক্লাস কেজিতেই পড়। এখন নাকি গানের শিল্পী হবে?" মায়ের এভাবে বলাটা সোনালীর কাছে বকা মনে হল। সোনালী আবার কান্না শুরু করে দিল। বাবা আবার বলল যে, "এই মেয়ে! বলেছিলাম না, ছোট বলবে সবাই। কেঁদো না।" তখন আবার কান্না থামল। মা আবার বলল, "বোকা মেয়ে! আমি আবার বকা দিলাম নাকি?" মা বলল যে, "আরো বড় হও, তারপরে।" সোনালীও অনেক বড় হয়ে গেল। ছোটবেলা থেকেই সে গানের প্রাকটিস করেছে। আগে থেকেই গীটার, একতারা, হারমোনিয়াম সব রকমের বাজনা কিনেছে। বাঁশিও কিনেছে। কিনে সেগুলো দিয়ে অনেক গান গায়, গান শেখে। অন্যান্য বিষয় ও খুব কম শিখেছে। পরীক্ষার দিন এল। বড় একটি ব্যাগে হারমোনিয়াম, একতারা, বাঁশি গানের সবকিছু নিয়ে গেল। অনেক সুন্দর গান গাইল, যেন মনে হয় সবচেয়ে বড় শিল্পী গাইছে। রেজাল্টের সময় মাকে নিয়ে সোনালী এল রেজাল্ট দেখতে। সবার তো চক্ষু ছানাবড়া! দেখে, সোনালী ডাক্তারীতে চান্স পেয়েছে। এখন সোনালীর মনটা খারাপ হয়ে গেল। বলে, "ওমা! এটা কি হলো? চেয়েছিলাম গানের শিল্পী হতে, হয়ে গেলাম ডাক্তার। ঐ লটারীর কারণেই এমন হয়েছে। কেন যে লটারী নামক জিনিসটা এত আগে আবিস্কার হল? সব উল্টোপাল্টা হয়ে গেল এই লটারীর কারণে।"

No comments:

Post a Comment