Tuesday, March 1, 2016

মুসলিম রাজকন্যার গল্প

এক দেশে বাস করত এক রাণী। তার একটি মাত্র মেয়ে। তার নাম রূপমালা। সে ছিল মুসলিম। রাণীর নাম রূপা। রাণী মারা যাবার আগে বলে গেল, "রূপমালা! আমি মারা যাবার পরেই রাণী হতে যেও না। তোমার রাণী হবার বয়স হয়নি। আর ভালো হয়ে থেকো।" একদিন রাজকন্যার ভালো লাগছিল না। কারণ, সেখানে শুধুমাত্র পনেরটি দাসী আছে। আর পাঁচটি দাস আছে। তাই তার অনেক কাজ করতে হচ্ছে। কারণ, দাসীগুলো অলস। একটি মাত্র দাসী একটু বিছানা ঝাড়ে, আর শুয়ে থাকে, আর খায়। আরেকটি দাসী শুধু বাথরুম ধোয়। আর বাথরুম ধোয়া তো চার-পাচদিন পরের কাজ। মাঝখানে যে কয়দিন থাকে, খায় আর ঘুমায়। আর সব দাসীই কেউ কেউ ফ্যান মোছে, কেউ কেউ কাপড় ধোয়, কেউ কেউ ঘর মোছে, কেউ কেউ ঘর ঝাড়ু দেয়, কেউ কেউ জানালা মোছে, কেউ কেউ রানীর জিনিসপত্র মোছে, কেউ কেউ রানীর সেবা করে। সবাই মিলে শুধু এই কাজগুলোই করে। তাও আবার একটি কাজ একজনে করে। রানী শুধু ছেলের রান্না করে, জগে পানি ভরে, নদী থেকে পানি আনে, নিজে নিজের ওষুধ খায়, কোথাও বেড়াতে যেতে হলে নিজে নিজের ব্যাগ গোছায়, নিজে নিজের চুল আঁচড়ায়, নিজে নিজের থালা-বাসন ধোয়, নিজেই বেড়ে খাবার খায়। এইসব কাজই তো দাসীরা করবে। উল্টে এই বেশি কাজগুলোই রানী করে। তাই রানী অনেক খোঁজ করে একটি হিন্দু দাসী পেল। রানীর সবচেয়ে অস্থির লাগত কি জান? যখনই হিন্দু দাসীকে ডাক দেয়, তখনই এসে বলে, আদেশ করুন মহারানী! যখন কোথাও গিয়ে ফিরে আসে, তখনই বলে, প্রণাম! তারপর সালাম দিলেও জবাব দেয় না। সালামের জবাবেই উল্টো আবার নমস্কার দেয়। আর রানীকে দেখলেও সবসময় শুধু নমস্কার। তারপর কোন কোন সময় রানীর চোখের সামনে প্রদীপ জ্বালায়। রানীর খুব বিরক্তি লাগে। তখনই মনে মনে ভাবে, "উহ! ওকে নিয়ে আর পারলাম না। ভালো দাসী, তাই এনেছি। আচার-আচরণগুলো না দেখে যে কেন আনলাম? এখন তো আর তাড়িয়ে দেয়াও যায় না। তেমন কোন অন্যায় যদি নাই করে, যদি তাড়িয়ে দেই, মানুষকে সে কি বলে বেড়াবে?"- এই ভাবত রানী। রানী একদিন বিরক্ত হয়ে খুবই রাগ হলো। দাসীকে ডাক দিল। বলল, "দাসী! এখন থেকে প্রদীপ জ্বালানোর দরকার নেই। আমার না চোখের সামনে আগুন ভালো লাগে না। আগুনের তাপটা চোখে লাগে। ছোট্ট একটু হলে কি? ছো্ট্ট একটুতেও চোখে তাপ লাগে। তোমার ইচ্ছা হলে দূরে গিয়ে প্রদীপ জ্বালিও। পরে চোখ নষ্ট হলে আবার সবাই তোমাকেই গালিগালাজ করবে।" তখন দাসী প্রদীপ জ্বালালো না চোখের সামনে। তখন একটু রাগটা কমলো। কিন্তু এখন তো আবার রানী চাকরী শুরু করেছে। এখন তো প্রতিদিনই আসে। প্রতিদিনই শুধু 'প্রণাম', 'প্রণাম'; 'নমস্কার', নমস্কার'- এমন করতে থাকে। তখন দাসী যাতে এসব না বলে, এজন্য কিছু একটা ভাবল রানী। ভেবে ভেবে কিছু পায় না। রানী খুঁজে পেল উপায়। দাসীকে বলল, "দাসী! শোন। তুমি আর প্রণাম বা নমস্কার কিছু বলো না। আমার তো বাচ্চাদের যেমন পড়ার চাপ, আমারও তেমনই চাকরিতে পড়ার চাপ। কারণ, ঐ স্কুলে না আবার সবাই মনে করে যে, রানী তো ভাল সব জানবে। রানীকে তো বই দেখে খাতা চেক করতে দেয়া যায় না। অতএব, না দেখেই খাতা চেক করতে হয় আমাকে। তুমি যদি সেই সময় কোন কথা বল, আমি সব ভুলে যাব।" তখন দাসী বলল, "ঠিক আছে, যা বলবেন।" তারপর থেকে আরো বিপত্তি দেখা দিল। এতদিন তো তবু শুধু মুখে প্রণাম বা নমস্কার জানাতো। আর এখন মুখে বলাটা নিষিদ্ধ হওয়াতে সে মুখে কোন শব্দ না বলে সরাসরি বাস্তবেই ইশারাতে হাতজোড় করে মাথা নুইয়ে নমস্কার জানাতে শুরু করে দিল। রানীর তো মাথায় হাত। এবার কী করবে? চাকরি দিল ছেড়ে। তারপর সেই দাসীটি আবার সব সময় অনেক বড় একটি সিদুর পড়ে ঘুরত। রানীর সেটাও সহ্য হতো না। দাসীকে দেখলেই সে দূরে সরে যেত। তখন বলত, "শোন দাসী! তুমি যদি কপালের উপর দিয়ে একটি টিকলী পড়, তবে খুবই সুন্দর দেখাবে। টিকলী পড়বে।"- এই বলল। উদ্দেশ্য, টিকলি পড়লে সিদুরটি ঢেকে যাবে। আর যে "আদেশ করুন মহারানী" বলত, এতে তেমন কিছু হতো না। এবার দাসী সব ঠিকঠাক মত করে, শুধু একটা সমস্যা। শুধু হিন্দুদের বাড়ি গিয়ে হিন্দুদের সাথে আলাপ করে। রানী ডাকলে আসেও না। কিন্তু অন্য সময় আবার বলার আগেই করে ফেলে। যেটা তেমন কিছু না, সেটাই আগে আগে করে ফেলে। যেটা অনেক দরকার, সেটাই করে না। হিন্দুদের বাড়ি ছিল দূরে। রানী বলল, "দাসী! তুমি এখন থেকে আর অত দূরে যেও না। জরুরী কাজে ডাক দিলে শুনতে পাও না তো, তাই তুমি আশে পাশে যেই মানুষদের বাড়ি আছে, সেখানে গিয়ে কথা বলো। ডাক দিলে শোনা যাবে। দূরে যেও না।" তখন দাসীটি ভাল হয়ে গেল। রানীরও কোন অসহ্য হলো না। আর রানী এখন অনেক বই পড়ে, বুদ্ধি বাড়ে, যদি কোন অসহ্যের কাজ করে, তখনই বুদ্ধির বইটা পড়ে ঐ ধরনের কিছু দিয়ে বুদ্ধি বানায় আর সেগুলো কাজে লাগায়।

শিক্ষা: রাগ না করে বুদ্ধি প্রয়োগ করে পরিস্থিতি শান্ত করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

No comments:

Post a Comment