Sunday, March 20, 2016

মেঘরাণীর গল্প

এক ছিল একটি বড় শহর। সেই শহরে অনেক রকম নিয়ম ছিল। বলতে পার, এমন নিয়ম কি মানুষ পালন করতে পারবে? নিয়ম হল, প্রতি বছরে আলাদা আলাদা একটি করে চাকরি নিতে হবে। এক জায়গায় সবসময় চাকরি করা যাবে না। সেইখানে থাকত একটি ছোট্ট মেয়ে। তার নাম মেঘরানী। মেঘরানী মাকে বলল, "মা! মা! এই শহরে নাকি নিয়ম আছে; কি নিয়ম, বল না মা! বল না, চুপ করে থেকো না। এটা কিন্তু বলবে না যে, এত কিছু জেনে তোমার কাজ কি?" তখন মা বলল, "কি নিয়ম বুঝতে পারছিস না এখনো। বারবার দেখছি, প্রতি বছরে আমি একটি করে চাকরির জন্য পরীক্ষা দিচ্ছি। আর তুমি তো তোমার বাবার সাথেই বেশি কথা-টথা আলাপ-টালাপ কর। বাবা কি বলতে পারবে এসব নিয়ে বেশি? বাবা তো ব্যবসা করে, তাই সে এসব বিষয়ে খেয়ালই রাখে না। সে শুধু পরীক্ষার সময় পরীক্ষার হলে আমাকে নিয়ে যায়, অন্য সময় আর কিছু করে না। তুমি এমন করো না তো। ও, নিয়মের কথা বলছ? এখনো বুঝতে পারছে না, ব্যাপারটা যে কী? নিয়ম হচ্ছে গিয়ে, প্রতি বছরে চাকরী আলাদা আলাদা করে নিতে হবে।" তখন মেঘরানী বলল, "মা, মা! এটা আবার কেমন নিয়ম গো?" এইবার মেঘরানী চিন্তায় পড়ে গেল। কারণ, প্রত্যেকটা পরীক্ষায় একটিতে পাস না করতে পারলেই সারা বছর চাকরী ছাড়াই থাকতে হবে। কম খেয়েই থাকতে হবে। শুধু বাপের ব্যবসা। তারপর মেঘরানী আরো ভাবল, আর আমি যখন বড় হব, তখন আমারও তো পরীক্ষায় পাস করতে হবে। কী যে করি! আর নিয়মটা ভাঙ্গার কোন উপায়ই তো পাই না। এবার যে কী হবে? মেঘরানী অনেক ভাবছিল। মা ডাক দিল, "মেঘরানী! ভাত খেতে আস।" তখন মেঘরানী বলল, "না, মা। এখন আমি চিন্তা করছি। একটু পরে ভাত খেলে হয় না? প্রতিদিনই তো ১২টার দিকে গোসল করে খেতে বসি। আজ একটু সাড়ে বারটায় খাই। আমাকে একটু সময় দাও ভাবার, ও মা! আর খাব না।" তখন বাবা বলল, "না, না, ছোট্ট মেঘরানী। দেখ, মা তো ভাত মাখিয়ে ফেলেছে। তোমার পছন্দের একটা জিনিস দিয়ে। টমেটোর ঝোল। তুমি খেতে খুব পছন্দ কর না? দেখ, তাও আবার বুড়া টমেটো আনিনি কিন্তু। একদম সুন্দর কচি এনেছি। সেই টমেটো তোমার নিশ্চয়ই খুব ভাল লাগবে। টমেটোর ঝোল দিয়ে মাছ রান্না হয়েছে। আজ অন্য ঝোল বা ডালের বদলে এই টমেটো মাছ আর টমেটো ভাত খাবে। খুবই স্বাদ হয়েছে। আমি খেয়েছি তো। দেখ, দেখ, মা তো মাখিয়ে ফেলেছে। নাহলে কিন্তু আবার বুড়ো টমেটোর মত স্বাদ লাগবে, খারাপ। আর একটু পরে যদি খাও, তবেই কিন্তু খারাপ। এখন যদি খেতে পার, কচির চেয়েও কচি লাগবে, খুবই ভাল। রঙ একদম টকটকে লাল, ভেতরটাও টকটকে লাল, কি সুন্দর রসালো! তুমি যদি এটা খেতে পার, তোমাকে আরো একটা রসালো টমেটো খালি খেতে দেয়া হবে।" তখন তো মেঘরানী চিন্তায় পড়ে গেল। এবার কী করব! দুটোই তো আমার প্রিয় কাজ। যাক বাবা, চিন্তা তো পরে করা যাবে। এখন খেয়ে আসি। নাহলে মা আবার খালি খালি বকবে। বকাঝকা আর ভাল্লাগে না। ওঁহো, ওঁহো। তারপর টমেটোর ভাত খেতে গেল। খাওয়া শেষ করল। এবার মাকে বলল, "মা, আরো দাও টমেটো ভাত।" তারপর আরও দিল। সেটুকু খেয়ে এবার বলল, "এবার তাহলে খালি টমেটো একটু দাও।" মা বলল, "ঠিক আছে, এই নাও টকটকে সুন্দর লাল। খেয়ে ফেল ঝটপট। চুষে খেয়ো না, ভাল লাগবে না, চিবিয়ে খাও।" তখন টমেটো খাওয়া শেষ করে মাকে বলল, "মা! আর একটা টমেটো দাও।" তখন মা বলল, "না, রাতে আবার যদি টমেটো ভাত খাও, তবেই তোমাকে আরো একটা টমেটো দেব। যাও, কি ভাববে ভাব। আমার কাজ শেষ, তোমার খাওয়ার দিকে খেয়াল রাখা। তারপর মেঘরানী গেল ভাবতে। মেঘরানী ভাবতে লাগল যে, উহ! বুদ্ধি তো পাচ্ছিই না। পেয়েছি পেয়েছি! হুররে! পেয়েছি বুদ্ধি, খুব ভাল বুদ্ধি। কী ভাল একটা বুদ্ধি পেলাম। এই শহরেই তো শুধু এই নিয়ম আছে। অন্যখানে তো এই নিয়ম নেই। অন্যখানে চলে গেলেই তো সব সমস্যা মিটে যায়, হা হা হা! মায়ের কাছে গিয়ে বলল, "মা! বুদ্ধি পেয়েছি একটা। তুমি শুধু শহরের এই চাকুরীটুকু ছেড়ে দাও। আমি একটা বুদ্ধি পেয়েছি। জান, যদি তুমি শহর থেকে চলে যেতে পার, তবে না তুমি ঐ নিয়মটা ভঙ্গ করে এক জায়গায় চাকুরী করতে পারবে। তুমি অন্য কোন একটা শহরে গিয়ে থাকলে তোমার আর কোন সমস্যা হবে না, হি হি হি।" তখন মা বলল, "বেশ ভাল বুদ্ধি তো? তবে এই চাকরিটা ছাড়ব কেন? এই চাকরিটা রেখে দেই। এই চাকরিতে থাকতেই তো ভাল লাগে। তবে চাকরিটা শেষ হয়ে গেলে আমি অন্য শহরে চলে যাব। হা, হা, হা। সোনা মেঘরানী, এজন্যই তোমার নামের শেষে রাণী আছে। আমার সোনামনি! এসব নিয়ে পরে ভাবা যাবে। এই চাকুরীটুকু অন্তত চালাই এতদিন। কিন্তু তোমার স্কুল আর তোমার বাবার ব্যবসা? এগুলোতে তো কোন সমস্যাই নেই। শহরেরই বাইরে। ওখান থেকে আসব কি করে বল?" তখন মেঘরানী বলল, "জান, আমি একটা জিনিস জানি কিন্তু? সেই জিনিসটা হচ্ছে গিয়ে রাজশাহী শহরে নাকি এমন সুন্দর একটা ভাল স্কুল আছে, যেখানে বেতনও কম এবং খুব ভাল পড়ায়। তোমার মনেই নেই। বড়দের কি মনে থাকে? আমার চাচাতো বড় বোন ঐ স্কুলে পড়েছে, অন্য কোন স্কুলেই যেতে চায়নি।" মা বলল, "বেশ ভাল তো তুমি। এজন্যই তোমাকে আমার অনেক পছন্দ। তুমি এখন আজকে শিশুপার্কে যেতে পারবে। তোমার মাথায় যে অনেক বুদ্ধি! কিন্তু বাবার ব্যবসা?" তখন মেঘরানী বলল, "হা হা হা হা হা! এতটুকু বুদ্ধিও তোমার নেই। ব্যবসার জিনিসপত্র ওখানে নিয়ে গেলে ওখানেই ব্যবসা করবে।" তখন মা বলল, "এই তো আমার মেঘরানী। কততো ভাল।" তখন মেঘরানী বলল, "কিন্তু তুমি যে কিছু বোঝ না। আমার কাছ থেকে যে শিখতে হচ্ছে।" মা বলল, "আমার শেখার কোন প্রয়োজন নেই। তুমি শিখলেই আমি শিখতে পারব তোমার কাছ থেকে। এই তো সব ঠিকঠাক হয়ে গেল।"

No comments:

Post a Comment