Sunday, March 6, 2016

গরীব লোকের গল্প

এক ছিল এক গরীব লোক। তার ছিল শুধু একটি স্ত্রী আর কেউ নয়। তাদের শুধু চারটি মাত্র জিনিস আছে। ছোট্ট একটি ঘর, মনে কর একটি বিছানার সমান একটি ছোট্ট পুকুর, লুঙ্গি-গেঞ্জি, আর একটি কামিজ। কিচ্ছুই ছিল না আর। কি করবে? শুধুমাত্র এই কয়টি জিনিস আছে। এই সবগুলোই তো ওদের প্রয়োজন। পানি ছাড়া কেউ বাঁচে? তাই পুকুর। অন্য সবগুলোও তো দরকার। এখন বিক্রি কি কিছু করা যাবে নাকি? প্রয়োজনের জিনিস বিক্রি করলে তো অন্য সময় যখন প্রয়োজন পড়বে তখন কি হবে? এখন তারা চিন্তায় পড়ে গেল। স্ত্রী বলে, "এবার কি বিক্রি করব? কিছুই তো নেই।" তখন বলল, "শোন! বুদ্ধি খাটাতে হবে। ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। ছোটবেলায় মা-বাবা থাকতে যে ধনী ছিলে, তখন তো পাঠশালায় যেতে। দু'জনেই তো কাক ও কলসীর একটি গল্প পড়েছি। ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়, এটা শিখেছ না? আল্লাহর কাছে দোয়া কর। অত চিন্তায় পড়ে যেও না। আল্লাহর ইচ্ছা। আমাদের একটু ধনী করে তুলতে চাইলে করবে, নাহলে গরীব হয়েই থাকতে হবে, নাহলে আল্লাহ যদি মারতে চায় মারবে, আল্লাহ যা চায় তাই হবে, কী করব।" তখন একদিন স্ত্রী বলল, "আহ! পেটের মধ্যে কেমন যেন গুতোগুতি করছে কি যেন।" তখন লোকটি রাজার কাছে গিয়ে বলল, "রাজামশাই! আপনার বৈদ্যবুড়িকে একটু বলবেন? অন্য কোন ডাক্তার তো আমি পাই না। আর আপনিও তো অন্য ডাক্তারদের পাচ্ছেন না। রাজবৈদ্য পেয়েছেন, এখন অন্যদের খেয়াল নেই। রাজবৈদ্য দিয়ে কাজ চালাচ্ছেন। একটু বৈদ্যবুড়িকে বলতে পারবেন? ডাকতে পারবেন এখানে? আমার স্ত্রীর পেটে কি যেন হয়েছে।" তখন রাজা দাস-দাসীদেরকে বলল, "দাস-দাসীরা, তোমরা বৈদ্যবুড়িকে ডাক। এখনই ডাক।" দাস-দাসীরা ডেকে আনল। বৈদ্যবুড়ি বলল, "আমাকে একটি খালি কক্ষে নিয়ে চলুন।" তখন রাজামশাই একটা খালি কক্ষ বের করে দিল। তখন বৈদ্যবুড়ি ঐ লোকের স্ত্রীকে নিয়ে কক্ষে ঢুকে দরজা বন্ধ করল। বৈদ্যবুড়ি চিকিৎসা করে দেখল, ওমা! এইটা যে কী সুখের খবর গো! কিন্তু এইটা আবার কি করে হলো? মহিলা টেরও পেল না? ভাবল অসুখ? এ আবার কেমন কথা? তবে সবাইকে তো জানাতে হবে আসল কথাটা। স্ত্রীকে উঠতে বললেন। বললেন, "উঠুন! এদিকে আসুন। ঐদিকে চলুন। সবার কাছে গিয়ে সবকিছু বলি।" বৈদ্যিবুড়ি সবার কাছে গিয়ে বলল, "আহ! কি সুখের খবর। এই লোকের স্ত্রী তো মা হতে চলেছে।" তখন রাজা বলল, "কী হলো আবার?" তখন বৈদ্যিবুড়ি বলল, "শুনুন রাজামশাই! এই লোকের স্ত্রীর যে বাচ্চা হবে।" সবাই মিলে এবার বলল, "আ! এ কী? বাচ্চা হবে?" তখন এ রাজ্যের রাণী বলল, "বাচ্চা হবে। তো বাচ্চাকে বের করেই তো আনতে পারতে।" তখন বলল, "ঠিক আছে।" তখন বৈদ্যবুড়ি পিছনে ঘুরে দেখল, "স্ত্রী বাচ্চার কথা শুনে বসে বসে বাচ্চার জন্য কি যেন করছে।" তখন বলল, "উহ! আপনি এসব করতে বসে গেছেন কেন? বাচ্চা হওয়ার পর তারপরে করতে পারবেন। এখন করার সময় না। এতক্ষণ বাচ্চা যদি পেটে থাকে, তবে কী হবে? বেশিক্ষণ থাকা যাবে না। চলুন আপনি কক্ষে। আস্তে আস্তে চলবেন। বাচ্চা হওয়ার পর আপনি খুব পাতলা খাবার খাবেন। এবং মিষ্টি খাবার খাবেন। যাতে বাচ্চা বুকের দুধ মিষ্টি পায়। আর যদি শক্ত খান, তবে বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। কতক্ষণ ধরে কিছু খাচ্ছেন না। গরীব মানুষ। তাহলে বাচ্চা হবার আগে কিছু নরম জিনিস খেয়ে নিতে হবে। কারণ, বাচ্চা হওয়ার সাথে সাথে দুধ মুখে দেয়া দরকার। আমি রাজামশাইকে বলছি খাবার দিতে। রাজামশাই! একটু পায়েস দিবেন? মানে পায়েস তো একটু বেশি শক্ত, তাহলে দুধই একটু দেন। বাচ্চা হওয়ার পর যদি দুধ না পায়, তাহলে বাচ্চার বড় রকম অসুখ হতে পারে। এখন তাহলে বাচ্চা হওয়ার পর কি করতে হবে সেগুলো আগে বলে নেই। নাহলে বাচ্চা হওয়ার পর খুশীতে সবাই মাতামাতি করবে, তখন আর এগুলো বলার সময় পাওয়া যাবে না। উল্টাপাল্টা কাজ করলে বাচ্চার ক্ষতি হবে। আপনি এখন একটু দুধ দেন।" তখন রাজা দাস-দাসীদের বলল, "এই! এক গ্লাস দুধ ঐ লোকের স্ত্রীর কাছে একটু দিন।" তারপর বৈদ্যিবুড়ি বলল, "না, ওনার কাছে দিলে উনি নিজের হাতে খেয়ে ফেলবেন। আমি ওনাকে একদিন দেখেছিলাম, কি করে পানি খায়। ঢকঢক করে খেয়ে ফেলে। ওভাবে খাওয়া যাবে না। আমার হাতে দিন। আমি আস্তে আস্তে করে এনাকে খাওয়াচ্ছি।" তখন রাজা বলল, "ঠিক আছে। দাস-দাসীরা তোমরা ঐ লোকের স্ত্রীর কাছে দিও না, বৈদ্যবুড়ির হাতে দাও।" তখন দাস-দাসীরা দুধ এনে বৈদ্যবুড়ির কাছে দিল। বৈদ্যবুড়ি এটা আস্তে করে খাইয়ে দিল। তখন কক্ষ বন্ধ করে বাচ্চা বের করল। সাথে সাথে বৈদ্যবুড়ি এটা বের করেই এসে বলল, "এখন বাচ্চা আলো সহ্য করতে পারবে না। কিছু নরম পরিস্কার কাপড় দিন আমায়।" রাজা জলদি করে পরিস্কার কাপড় দিল। তখন বাচ্চার গায়ে জড়িয়ে স্ত্রীর হাতে দিল। স্ত্রী দুধ খাওয়ালো বাচ্চাকে। আর বৈদ্যিবুড়ি বলল, "শুনুন! ৭/৮ দিনের আগে বাচ্চাকে গোসল করানো যাবে না। এতে ঠাণ্ডা লাগার ভয়। আর বাচ্চার জন্মের পর ৬ মাস শুধু মায়ের দুধই খাবে। কোন পানিরও প্রয়োজন নেই। আর বাচ্চাকে এখন বাইরে নেয়া যাবে না। গরম তাপ লাগলেও বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে। আর বাচ্চাকে আস্তে আস্তে একটু একটু করে আলো সহ্য করাবেন। খুব আস্তে আস্তে। একবারে বেশি দিলে বাচ্চার চোখেরও ক্ষতি হতে পারে। এই বললাম। সব কথা শেষ। বাচ্চাকে নিয়ে সবসময় ভাল রাখবেন। আর রাজামশাই! ওনাদের কিন্তু বাচ্চা হয়েছে। এখন আর কুড়েঘরে থাকলে চলবে না। তাতে বাচ্চার আরো কষ্ট হবে, ক্ষতি হবে। আপনি ওনাদেরকে বাচ্চার জন্য যা যা দরকার তা তা একটু দান করুন। এবার আমি আসি।"- বলে বৈদ্যিবুড়ি তার কাজে চলে গেল। তখন বাচ্চাকে নিয়ে খুব আনন্দ করল। আর রাজামশাই দাসদাসীদের সবার সাথে আলাপ করল যে, কি দান করব। তখন রানী বলল, "রাজামশাই! শোন। তুমি বরং একটি গরু দাও। বাচ্চা যাতে বেশি ভাল দুধ পায়, তাই নিজেরও হালকা মিষ্টি খেতে হবে।" তখন রাজা বলল, "ঠিক। সবার আগে একটি গরু দান করি।" তখন একটি গরু দিয়ে দিল গরীব লোককে। কিছু নরম ও পাতলা কাঁথা দিল। ছোট দুটি আরামদায়ক লিলেন কাপড় দিল। আর বাচ্চা ৬ মাসের পর তো মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্য খাবারও খাওয়াতে হবে। তাই রাজা একটি ধানক্ষেত দিয়ে দিল। ঐ ছোট পুকুরটি রেখে একটি বড় পুকুর দিল। দাস-দাসীদের বলল, "ওদের ঘরে আরেকটু মেরামত করে ভাল বানিয়ে দাও। বাচ্চা এমন ঘরে থাকলে বড় হয়ে তার সন্তানদেরকেও এমন কষ্ট দেবে।" আর একটি আমগাছও দান করল, যাতে একটু ফলফলাদিও তো দরকার হয় শরীরে। বাচ্চা ৬ মাস পার হলে আবার অন্য জিনিস খাওয়াতে হবে তো, একটু ফল খাওয়াবে, তাই আমগাছ দিল। আর বলল, "এক বছরের আগে কোন চকলেট, ললিপপ, বিস্কুট এসব বাইরের জিনিস দেয়া যাবে না। বাচ্চার জন্য যত্ন নিতে হবে। কিন্তু বাইরের জিনিস দেয়া যাবে না। আর এক বছরের আগে কোন খেলনা-টেলনা দেয়া যাবে না। কারণ, খেলনা-টেলনায় ধুলা-ময়লা থাকে। পরিস্কার করেও দেয়া যাবে না। কারণ, ছোট বাচ্চা নরম তুলতুলে থাকে, আর খেলনা কত শক্ত। আর ছোট তো খেয়েও ফেলতে পারে। আর অন্য সব বাচ্চারা দুষ্টু না? আর গরীব লোকের বাসায় তো দৌড় দিয়ে এসে পড়তে পারে। আর এসে যদি শক্ত খেলনা ছোড়াছুড়ি করে, এটা গায়ে লাগবে না? আর বাচ্চাকে সবসময় বাইরে থেকে জিনিসও কিনে দেবে না। এতে বাচ্চারা বাইরে গেলে বেশি বেশি জিনিস কিনতে চাইবে। বাচ্চাদেরকে আদর করে বড় করতে হবে। যাতে আর বকা দেয়া না লাগে, তাই সবকিছু শিখাবে। এমন করলেই তো বাচ্চা ভাল থাকে, তাই না?" এখন রাজা একটু পরে বললেন, "আচ্ছা, আমি তিন-চার প্যাকেট মিষ্টিও দিচ্ছি। এগুলো বাচ্চা হয়েছে বলে আত্মীয়-স্বজনকে একটু একটু করে দেবে। বৈদ্যবুড়ি যা বলেছে, আমিও যা বলেছি, সব মনে থাকে যেন।"-এই বলল। তখন সবাই রাজাকে বলল, "ধন্যবাদ। আমরা আসি।"-বলে বাড়ি ফিরে দেখল, দাস-দাসীরা ঘর মেরামত করে ভাল সুন্দর ঘর বানিয়ে দিয়েছে। তখন রাজার কাছে গিয়ে আবারও একটা ধন্যবাদ দিয়ে আসল। তখন রাজামশাই বলল, "আপনারা যখন রাতে ঘুমাবেন, তখন ঘরের পাশে একটি সুন্দর বাথরুমও বানিয়ে দেবে।" তখন দাস-দাসীরা রাতের বেলায় গিয়ে একটি সুন্দর বাথরুমও তৈরি করল। ফিরে এল রাজার কাছে। উঠে দেখল কি সুন্দর একটি বাথরুম। তখন রাজার কাছে গিয়ে আবারও ধন্যবাদ দিয়ে আসল। বাচ্চা বড় করতে করতে তারা কাহিল হয়ে গেল। এবার লোকটিকে স্ত্রী দায়িত্ব দিল, প্রতিদিন দুপুর বেলা খেয়ে যে গরু রাজা দিয়েছে সেই গরুর দুধ দোওয়াবে। আর লোকটি স্ত্রীকে দায়িত্ব দিল যে, তুমি এখন থেকে দুধ খুব আস্তে করে খাবে, তাহলে বাচ্চা দুধ ভাল পাবে। আর এটাও দায়িত্ব দিলাম যে, বাচ্চাকে দেখে রাখবে। আরও দায়িত্ব দিলাম যে, তুমি রাজা ও বৈদ্যবুড়ির সব কথা মনে রেখে বাচ্চাকে সেই সেই করবে। তখন স্ত্রী রাগ হয়ে বলল, "আমি কি তোমাকে এত দায়িত্ব দিয়েছি? তুমি আমাকে এত দায়িত্ব দিচ্ছ কেন? দাড়াও, এখন আমি তোমাকে এমন একটি দায়িত্ব দেব, পারবেই না। তোমাকে আমি দায়িত্ব দিলাম, প্রতিদিন অনেক ভোরে ঘুম থেকে উঠে রাজার দেয়া ক্ষেত থেকে কিছু ধান বিক্রি করবে এবং যা টাকা পাবে সেই টাকা দিয়ে বাচ্চার এক বছর কেটে গেলে সেই টাকা দিয়ে তুমি একা মার্কেটে গিয়ে বেলুন কিনবে এবং ভাল কেক আনবে। খারাপ হলে কিন্তু আবারো পাঠাব। অনেক বড় দায়িত্ব দিলাম। মনে যদি না থাকে, তোমায় এমন মারা মারব না। মনে থাকে যেন। কাগজে লিখে টানিয়ে রাখ, যাতে মনে থাকে।" তখন লোকটি বলল, "ঠিক আছে।" তখন লিখে টানিয়ে রাখল। তখন স্ত্রী বলল, "ও! তুমি তো আমায় তিনটি দিয়েছ দায়িত্ব। আমি তো শুধু দুটি দিলাম। আরো একটি দিব।" তখন লোকটি বলল, "আর না। মেয়েদেরই তো এসব কাজ করতে হয়। ছেলেমানুষ একটু সাথে নিলেই হয়। তুমি আমাকে আর কাজ দিও না। তাহলে আমি কিন্তু তোমাকে চারটি কাজ দেব।" তখন স্ত্রী বলল, "তবে কিন্তু আমিও চারটি কাজ দেব। এমন করতে করতে কিন্তু সবারই হাজারটা দায়িত্ব হয়ে যাবে। এর চেয়ে তিনটাই ভাল। এত কম চাইলে কয়েকদিন পর দেখবে, আমি কোথায় যেন গেছি, আমার সব কাজ তোমায় করতে হবে। এর চেয়ে তিনটি কাজই কর। আর সেই দায়িত্বটা হল গিয়ে শস্য থেকে আরো কিছু বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে জগ কিনবে, কলস কিনবে, তারপর কলসি নিয়ে পুকুর থেকে পানি নিয়ে জগে ভরবে। তখন লোকটি বলল, "এই না না। এটা কিন্তু ভাল হচ্ছে না। তবে তুমি আরো একটা কাজ নাও। তবেই আমি এগুলো করব।" স্ত্রী বলল, "ঠিক আছে, আমি যখন যা ইচ্ছা যেভাবে ইচ্ছা করব সেটাই হল আমার চার নম্বর দায়িত্ব। এটা বুঝেছ? এবার হয়েছে?" বলে যে, "ঠিক আছে।" তখন গরীব লোকটা বাচ্চাকে বড় করে তুলতে লাগল। এই মেয়েটা হল কেন জান? কারণ, তারা আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিল যে, তাদের যেন ভাগ্য ভাল হয়। এখন আল্লাহ এই মেয়েটিকে দিলেন, যাতে তারা সুখে থাকে। তারপর বাচ্চাটির মাথায় অনেক বুদ্ধি দিয়ে জন্ম দিয়েছেন আল্লাহ। আল্লাহ দেখলেন যে, ওরা আল্লাহ যে দিয়েছেন তার জন্য আল্লাহর কাছে কোন কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে না। শুধু রাজাকে ধন্যবাদ দিচ্ছে। আরে বাবা, আল্লাহই তো বাচ্চা দিয়েছেন, তাই তো এই সব হয়েছে। আল্লাহ একটু রেগে গেলেন। তখন আল্লাহ চাইলেন, তাদেরকে যেন বোঝানো যায় যে, দিয়েছেন আল্লাহ, তাই আল্লাহর কাছেই কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে। মানুষ বাচ্চা হলে সবার আগে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানায়, তারপর অন্য যারা সেবা-শুশ্রূষা করেছে তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। কিন্তু এরা দেখছি আল্লাহর কথা মনেই করছে না। তখন আল্লাহ ওদের কোন সুখই চাইলেন না। এবার শয়তান এসে তাদেরকে কুমন্ত্রণা দেয়া শুরু করল। তারা বাচ্চার কথা ভুলে গেল। তারা নিজের সংসারের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। নামায এখন সব রাকাতগুলো পড়বে তা না। এখন শুধু তিন রাকাত আর চার রাকাত পড়তে শুরু করল। ওদিকে বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়তে লাগল। বাচ্চাকে দুধ দেয়ার কথা মনেই থাকল না। কিছুক্ষণ পরে তার মনে হল যে, কি যেন, কি যেন; ভুলে গেছি কি যেন। তখন আল্লাহর কথা মনে পড়ল। আল্লাহর কাছে বলল যে, "আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে মনে করিয়ে দাও।" এবার আল্লাহ খুশী হলেন। মনের মধ্যে বাচ্চার কথা ঢুকিয়ে দিলেন। তখন মনে পড়ে গেল। দৌড়িয়ে বাচ্চার ঘরে গিয়ে দুধ খাওয়ালো, আদর-যত্ন করল। তখন তাদের মনে পড়ল যে, আল্লাহই তো আমাদের বাচ্চা দিয়েছেন। আল্লাহর কাছে তো কিছুই করা হয়নি। আল্লাহকে খুশী করার জন্য এক কি করা যায়? তখন লোকটিকে বলল, "এই! একটা কাজ আছে। এটা তুমি একটু করতে পারবে? এটা মার্কেটে গিয়ে করতে হবে। এক কপি কুরআন শরীফ কিনে আন। গরুর একটু দুধ বিক্রি করে টাকা যোগাড় কর। তাহলে ভাল কোরআন শরীফ পাওয়া যাবে। তখন লোকটি দুধ বিক্রি করা টাকা দিয়ে দুই কপি কোরআন শরীফ কিনে আনল। তখন স্ত্রী এক কপি নিয়ে পড়তে শুরু করল, আর লোকটি আরেক কপি নিয়ে পড়তে লাগল। তারপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায পুরোপুরিভাবে পড়া শুরু করে দিল। শয়তান কোরআন শরীফ পড়া দেখেই আর কাছে থাকতে পারল না। দূরে চলে গেল। তারপর তারা নামায শেষ করে তসবীহও পড়তে শুরু করল। আল্লাহ খুশী হয়ে তাদের বাচ্চার মাথায় আরো অনেক বুদ্ধি দিয়ে দিলেন। যাতে বড় হয়ে কোন বিপদ হলে বাচ্চাই তাদের বাঁচাতে পারে। এখন তারা সুখে-শান্তিতে বাস করল। বাচ্চাকেও ঠিক করে পালন করতে লাগল। প্রতিদিন কুরআন পড়ে, প্রতিদিন তসবীহ পড়ে, প্রতিদিন সব ওয়াক্ত পড়ে নামাযের। আর শুক্রবার জুমার নামায পড়ে, জুমার নামায পড়তে স্ত্রীও যায় মহিলাদের আলাদা কক্ষে। গল্প শেষ।

No comments:

Post a Comment